সচেতন এবং সংগঠিতরূপেই কেবল প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত যে কোন শ্রেণি কারযকর ভাবে সংগ্রাম চালাতে পারে । কোন নতুন সমাজব্যস্থার ধারক ও বাহক না হওয়া সত্ত্বেও ক্রীতদাস ও কৃষকদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই এটা ঘটেছিল, সংগঠনের রূপ ও সচেতনতায় যতই অপূর্ণতা এবং বিচ্ছিন্নতাবোধ (alienation) থাকুন না কেন । কিন্তু সমাজের বিবর্তনের ফলে যে উৎপাদন সম্পর্ক অপরিহারয হয়ে ওঠে তার ধারক ও বাহক ঐতিহাসিক শ্রেণী গুলোর ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি করে প্রযোজ্য ।এইসব ঐতিহাসিক শ্রেণির মধ্যে প্রলেতারিয়েতই হচ্ছে একমাত্র শ্রেণি , পুরনো সমাজের মধ্যে যে কোনরকম অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারি নয় বা হতে পারেনা । এইজন্যই প্রলেতারিয়েতের শ্রেণী সংগ্রামের ক্ষেত্রে সংগঠন এবং সচেতনতার ভূমিকা আরো অনেক বেশি নির্ণায়ক (decisive) ।
বিপ্লবী সংগ্রাম পরিচালনা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য শ্রমিকশ্রেণী worker's council- এর মত সংগঠনই সৃষ্টি করে । শ্রমিকশ্রেণীর সমস্ত সদস্যের সচেতন সক্রিয়তারই ফসল হল বিপ্লব এবং বিপ্লবের মুহূর্তে সকলেই তারা এিসব সংগঠনের মধ্যে একতাবদ্ধ হয় । কিন্তু শ্রেণীর সচেতন হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা কোনভাবেই যুগপৎ (simultaneous) বা সমরূপ (homogeneous) নয় । শ্রেণী সংগ্রাম সাফল্য ও ব্যর্থতার অনেক আঁকাবাঁকা ঘুরপথের ভিতর দিয়েই বিকাশলাভ করে শ্রেণি সচেতনতা । শ্রমিকশ্রেণীকে বিভাগীয় (sectional) এবং জাতীয় (national)সমস্ত বিভাজনকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে । পুঁজিবাদী সমাজে এইসব বিভাজন খুবই ‘স্বাভাবিক' আর শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে এই বিভাজন গুলোকে স্থায়ী করে তোলার মধ্যেই আছে পুঁজিবাদের যাবতীয় স্বার্থ ।
সচেতন হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া অসমরূপ(heterogeneous) হওয়ায় শ্রমিকশ্রেণীর একটা অংশ অন্যদের থেকে আগে ‘প্রলেতারীয় আন্দোলনের এগিয়ে চলার পথ ,সামগ্রিক অবস্থা এবং সাধারণ চূড়ান্ত পরিণতি' (Communist Manifesto) সম্বন্ধে সুস্পষ্ট সচেতনতা অর্জন করেন । বিপ্লবীরা হচ্ছেন সচেতনতার দিক থেকে এগিয়ে থাকা শ্রমিকশ্রেণীর এই অংশেরই সদস্য । পুঁজিবাদী সমাজে ‘শাসকশ্রেণীর ধারণাগুলোরই প্রাধান্য বজায় থাকে' , আর তাই বিপ্লবীদের নিয়ে গঠিত শ্রমিকশ্রেণির অংশটা অবশ্যম্ভাবীরূপে সংখ্যালঘুই হয়ে থাকে ।
শ্রেণীর ভিতর থেকে উদ্ভূত এবং সচেতন হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ার বাস্তব প্রতিফলন হিসাবে , এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভুমিকা পালন করেই কেবল , বিপ্লবী সত্তা বজায় রাখতে পারেন বিপ্লবীরা ।অলঙ্ঘনীয়ভাবে এই কর্তব্য সম্পন্ন করার জন্য বিপ্লবী সংগঠন :
শ্রমিকশ্রেণীর সাধারণ সংগঠন (general organization) এবং বিপ্লবীদের সংগঠন একই আন্দোলনের অংশ , কিন্তু দুইয়ের মধ্যেকার পার্থক্য বেশ স্পষ্ট (distinct)।
প্রথমটি অর্থাৎ কাউন্সিলগুলো (councils) গোটা শ্রেণীটাকে ঐক্যবদ্ধ করে । শ্রমিকমাত্রই এগুলোর অন্তভুর্ক্ত হতে পারেন ।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি অর্থাৎ বিপ্লবী সংগঠন শ্রেণীর বিপ্লবী সদস্যগণকেই কেবল জোটবদ্ধ বা ঐক্যবদ্ধ করে । সদস্যতার মাপকাঠি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ;সমাজবিদ্যাগত(sociological) মাপকাঠি আর কোনমতেই খাটেনা অর্থাৎ শ্রমিক হলেই শুধু সদস্য হওয়া যায় না । কর্মসূচির সমর্থন ও স্বপক্ষে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারবদ্ধতাই হচ্ছে সদস্যতার মাপকাঠি । এই কারণেই সমাজবিদ্যাগত ভাবে শ্রমিকশ্রেণীর অংশ নন এমন ব্যক্তিরাও শ্রমিকশ্রেণীর অগ্রগামী বাহিনীর (vanguard) অন্তভুর্ক্ত হতে পারেন । এইসব ব্যক্তি নিজেদের শ্রেণীর সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে প্রলেতারিয়েতের ঐতিহাসিক শ্রেণী স্বার্থের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠেন ।
অগ্রগামী বাহিনীর সংগঠন এবং সমগ্র শ্রমিকশ্রেণী পরস্পরের থেকে সুস্পষ্ট রূপে পৃথক হওয়া সত্ত্বেও তারা কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন , বহিরাগত বা বিরোধী নয় যদিও একদিকে ‘Leninist' ও অন্যদিকে ‘ouvrierist-councilist' ধারার প্রবক্তারা সম্পূর্ণ বিপরীতটাই দাবী করে থাকেন । পরস্পরের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হওয়া তো দূরের কথা , সমগ্র ও সমগ্রের অংশ হিসেবে শপমিকশ্রেণি ও বিপ্লবীরা পরস্পরের প্রকৃত পরিপূরক । ওই উভয় ধরনের প্রবক্তারাই অস্বীকার করেন এই সত্যকে । কমিউনিষ্টদের কাছে ‘প্রলেতারিয়েতের সমস্ত অংশের সাধারণ স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন আলাদা স্বার্থ নেই' (Communist Manifesto) বলে , অগ্রগামী বাহিনী ও শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে কোনোরকম বলপ্রয়োগের সম্পর্ক কখনোই থাকতে পারে না ।
শ্রেণীর একটা অংশ হিসেবে বিপ্লবীরা কখনোই সমগ্র শ্রেণীর বদলে নিজেদেরকে প্রতিস্থাপিত(substitute) করতে পারে না । পুঁজিবাদী কাঠামোর মধ্যে সংগ্রামের ক্ষেত্রে এটা যেমন প্রযোজ্য , পুঁজিবাদের উৎখাৎ এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে রাখার ক্ষেত্রে এটা আরো বেশি করে প্রযোজ্য । সংখ্যালঘু অংশের সচেতনতা যতই বিকশিত ও উন্নত হোক না কেন , প্রলেতারিয়েতের কর্তব্যগুলো সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট নয় । অন্যান্য ঐতিহাসিক শ্রেণীর ক্ষেত্রে কিম্তু এমনটা ছিলনা । সৃজনধর্মী ক্রিয়াকলাপ ও অন্যান্য যাবতীয় কাজকর্মে সমগ্র শ্রেণির সমস্ত সদস্যের সব সময় সক্রিয় অংশগ্রহণ , এইসব কর্তব্য সম্পাদনের জন্য অপরিহারয ।
সমগ্র শ্রেণী ব্যাপী শ্রেণী সচেতনতার বিকাশ(generalized consciousness) ই হচ্ছে প্রলেতারীয় বিপ্লবের একমাত্র গ্যারান্টি আর এটা আসলে বাস্তব অভিজ্ঞতারই ফল হওয়ায় , বিপ্লবের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপে শ্রেণীর সব অংশেরই সক্রিয় অংশগ্রহণের কোনো ও বিকল্প নেই । বিশেষ করে , প্রয়োজনে হিংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের সাহায্য নেওয়ার বিষয়টিকে শ্রেণীর সাধারণ সংগ্রাম (general movement) বা আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না । এইজন্যই ব্যক্তিগত বা বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগত উদ্যোগে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে শ্রমিকশ্রেণির নিজস্ব পদ্ধতির কোনরকম সম্পর্ক বা সাদৃশ্য নেই । বুজোর্য়া গোষ্ঠীগুলোর (fractions) মধ্যেকার কুৎসিৎ নগ্ন রেষারেষি ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের স্পষ্ট অভিব্যক্তি না হয়ে থাকলে , এটা বড়জোর পেটি বুজোর্য়া অধৈয ও হতাশার প্রকাশমাত্রই হতে পারে । শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামের মধ্যেই এর আবির্ভাব , শ্রেণীর বাইরেকার অর্থাৎ বুজোর্য়া বা পেটি বুজোর্য়া প্রভাবগুলোকেই সূচিত করে এবং শ্রেণী সচেতনতা বিকাশের ভিত্তিকেই কেবল দুর্বল করে থাকে ।
শ্রমিক সংগ্রামের স্ব - সংগঠন (self-organization) এবং শ্রেণির সমস্ত অংশের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণ কমিউনিজমে পৌঁছনোর অনেক পরস্পর তুলনীয় রাস্তার মধ্যে একটামাত্র রাস্তা শুধু নয় , এটা হল একমাত্র রাস্তা ।
প্রতিস্থাপনার চিন্তাভাবনার (Substitutionist conception) বিপরীতে ouvrierist(ওয়ার্কারিস্ট) এবং anarchist(নৈরাজ্যবাদী) ধারার প্রবক্তারা ‘শ্রেণী স্বাতন্ত্রের' (class autonomy) যে ধারণা ব্যবহার করে থাকে , তার তাৎপরয সম্পূর্ণরূপে প্রতিক্রিয়াশীল ও পেটিবুজোর্য়া। এদের এই ‘স্বাতন্ত্র' (autonomy) প্রায়ই ক্ষুদ্র গোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের ‘স্বাতন্ত্রের' ই নামান্তর মাত্র হয়ে থাকে । প্রতিস্থাপনার প্রবক্তাদের ঘোরতর বিরোধিতা করেও , তাদের মতোই শ্রমিকশ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করার দাবী করে এরা । এসব ছাড়াও এদের এই ধারণার দুটো প্রধান দিক বা তাৎপরয আছে :
আজকের দিনে এইসব ধারণা সবথেকে ভালো হলে , বড় জোর Stalinist আমলাতন্ত্র এবং সবর্শক্তিমান,সর্বগ্রাসী শাসনতন্ত্র বা রাষ্ট্রযন্ত্র বিকাশের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ধরণের প্রতিক্রিয়ামাত্র হতে পারে আর সবথেকে খারাপ হলে , পেটি বুজোর্য়াদের বৈশিষ্ট্যসূচক বিচ্ছিন্নতাবোধ বা বিভাজিত অবস্থার রাজনেতিক অভিব্যক্তিই হয়ে থাকে । কিন্তু এই দুটোই প্রলেতারিয়েতের বিপ্লবী সংগ্রামের তিনটি মৌলিক দিক বা তাৎপরযের উপলব্ধির সম্পূর্ণ অভাবকেই সূচিত করে :
মার্কসবাদী হিসেবে , আমাদের কাছে শ্রেণী স্বাতন্ত্রের অর্থ হল সমাজের অন্যান্য শ্রেণী থেকে শ্রমিকশ্রেণীর স্বতন্ত্রতা বা স্বাধীনতা (independence) । আজকের দিনে প্রলেতারিয়েতইেকমাত্র বিপ্লবী শ্রেণী হওয়ায় , বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপের জন্য এই স্বাতন্ত্র অপরিহারয পূবর্শর্ত INDISPENSABLE PRECONDITION হয়ে উঠেছে । সাংগঠনিক (কাউন্সিলগুলোর সংগঠন, The organization of the councils)এবং রাজনৈতিক উভয়স্তরেই এই স্বতন্ত্রতার অভিব্যক্তি ঘটে আর প্রলেতারিয়েতের কমিউনিষ্ট অগ্রগামী বাহিনী বা vanguardএর সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্কের ভিত্তিতেই এটা ঘটে । ouvrierist ধারার প্রবক্তাদের ঘোষণার তাই এটা বিপরীত।
কাজকর্মের বিচারের ভিত্তিতে শ্রমিকশ্রেণীর সংগঠন(general organization) এবং বিপ্লবীদের সংগঠন যেমন পরস্পর পৃথক তেমনি তাদের উদ্ভবের পরিস্থিতিও পৃথক । পুঁজিবাদী পুরো ব্যবস্থাটারই বিরুদ্ধে বিপ্লবী চ্যালেঞ্জের সময়ই কেবল কাউন্সিলগুলোর (worker's council) আবির্ভাব ঘটে যখন শ্রেণীর সমস্ত সংগ্রামই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যাভিমুখে চালিত হয় । কিন্তু শ্রেণী সচেতনতা বিকাশের জন্য শ্রেণীর সক্রিয় প্রচেষ্টার কোনও বিরাম নেই , জন্মলগ্ন থেকেই চলছে সেই প্রচেষ্টা আর চলতেও থাকবে যতক্ষণ না কমিউনিষ্ট সমাজের মধ্যে পৃথক একটা শ্রেণী হিসেবে অবলুপ্তি ঘটেছে তার । এই বিরামহীন প্রচেষ্টার মূর্ত প্রকাশ হিসেবে কমিউনিষ্ট সংখ্যালঘু অংশের অস্তিত্ব সবসময়ই তাই থেকে গেছে শ্রেণীর মধ্যে । কিন্তু এই সংখ্যালঘু অংশের উদ্দেশ্য , প্রভাব , ক্রিয়াকলাপের পরিধি , পদ্ধতি , নীতি এবং সংগঠনের ধরনধারন ইত্যাদি সবকিছুই শ্রেণীসংগ্রামের সামগ্রিক অবস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্কে আবদ্ধ।
শ্রেণীর সংগ্রামী ক্রিয়াকলাপ তীব্র রূপ ধারন করার পরযায়ে , ঘটনার বাস্তব গতিপ্রকৃতির উপর সরাসরি (direct) প্রভাব থাকে এই সংখ্যালঘু অংশের । কমিউনিষ্ট vanguard-এর সংগঠনকে সেই সময় পার্টি নামে অভিহিত করা যেতে পারে । অন্যদিকে , পরাজয় বা শ্রেণী সংগ্রামে ভাঁটার পরযায়ে , ইতিহাসের তাৎক্ষনিক গতিপ্রকৃতির উপর বিপ্লবীদের আর কোন প্রত্যক্ষ প্রভাব থাকে না । এই প্রতিবিপ্লবী পরযায়ে [শ্রেণী সহযোগিতা , (Class collaboration) , ‘Union sacrees' , ‘প্রতিরোধ সংগ্রাম' (resistance), ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা'(‘Anti-Fascism') ,ইত্যাদির মাধ্যমে ]শ্রমিকশ্রেণীকে নিরস্ত্র ও নিজেদের পক্ষে সমাবেশিত করার বুজোর্য়া তৎপরতার সময় শ্রমিকশ্রেণীর সংগঠন হিসেবে বেশ ক্ষুদ্রতর আকারের সংগঠনমাত্রই কেবল থাকতে পারে । তাৎক্ষনিক আন্দোলন বা ঘটনার গতিপ্রকৃতিকে প্রভাবিত করার কোন কাজ আর তার থাকে না । তাকে প্রতিহত করাই অর্থাৎ (প্রতিবিপ্লবী)স্রোতের বিপরীতে দৃঢ়ভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়াই তার একমাত্র কাজ হয়ে ওঠে । শ্রেণীর পূর্বের অভিজ্ঞতার সারসংকলন ও শিক্ষাগুলোকে তুলে ধরা এবং এইভাবে শ্রমিকশ্রেণীর ভবিষ্যতের পার্টির জন্য অপরিহারয তাত্ত্বিক এবং কর্মসূচিগত কাঠামো নির্মাণই সেই সময় হয়ে ওঠে তার অত্যাবশ্যক কর্তব্য । শ্রমিকশ্রেণীর এই পার্টির পুনরাবির্ভাব অবশ্যম্ভাবী রূপেই ঘটবে শ্রমিক সংগ্রামের পরবর্তী জোয়ারের পরযায়ে । পার্টির পুনরাবির্ভাবের সময় পযর্ন্ত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সেতুর ভূমিকা পালন করে সেই সব গ্রুপ এবং fraction এর কর্তব্য হয়ে ওঠে , যারা শ্রেণী সংগ্রামের ভাঁটার সময় অধঃপতনের তলদেশে নিমজ্জমান পার্টি থেকে বিচ্ছেদ ঘটায় বা পার্টির অবলুপ্তির পরও টিকে থাকে ।
প্রলেতারীয় বিপ্লবের চরিত্র অপরিহারযভাবে বিশ্বব্যাপী এবং কেন্দ্রীভূত (centralized) হওয়ায় , শ্রমিকশ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টিকেও অতি অবশ্যই বিশ্বব্যাপী এবং কেন্দ্রীভূত হতে হবে । এই পার্টির ভিত গড়ে তোলার কাজে নিযুক্ত fraction এবং গ্রুপ গুলোর মধ্যেও তাই অবশ্যম্ভাবীরূপেই বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রভবন (centralization) বা কেন্দ্রিকরণের প্রবণতা দেখা যায় ।
পরপর দুটো মহাধিবেশন বা কংগ্রেসের অন্তবর্তীর্কালীন পরযায়ে রাজনৈতিক কাজকর্মের দায়িত্বসম্পন্ন কেন্দ্রীয় কমিতি বা সংস্থার অস্তিত্বের ভিতর দিয়েই বাস্তবায়িত হয় এই কেন্দ্রীভবন বা কেন্দ্রীকরণের সিদ্ধান্ত । কেন্দ্রীয় কমিটি বা সংস্থা কংগ্রেসের কাছে সমস্ত কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য । বিপ্লবীদের সাংগঠনিক কাঠামোর ক্ষেত্রে দুটো মৌলিক প্রয়োজনীয়তার বিষয়ের উপর গুরুত্ব অবশ্যই দিতে হবে ।