অক্টোবার ২০০৬’র শেষ দিকে, সোস্যালিষ্ট পোলিটিকাল এ্যালায়েন্স(SPA) ‘র ডাকে আন্তর্জাতিকতাবাদী কিছু সংগঠন, গ্রুপ এবং সদস্যদের নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল এবং উলসান্ শহরে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিতির হার যত অল্পই হোক না কেন, আমরা যতদূর জানি, এসপিএ-ই হ’ল দূর প্রাচ্যে কম্যুনিষ্ট লেফ্টের নীতির প্রথম সংগঠিত প্রকাশ আর এই ধরণের সম্মেলন অবশ্যই প্রথম।এর একটা ঐতিহাসিক তাৎপরয আছে ব’লে আমরা মনে করি আর তাই এই সম্মেলনের প্রতি আইসিসি(International Communist Current ) সম্পূর্ণ সমথর্ন
জানিয়ে সম্মেলনে তার একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। [১]
যাইহোক, সম্মেলন চলাকালীন সম্মেলনের লক্ষ্যের সুদূর প্রসারী রাজনৈতিক গুরুত্বের দিকটা কিছুটা চাপা পড়েছে ; কারণ, উত্তর কোরিয়ার প্রথম পরীক্ষামূলক পরমানু বোমা বিস্ফোরণের পরিপ্রেক্ষিতে এখানকার আন্ত-সাম্রাজ্যবাদী টানাপোড়েন নাটকীয়ভাবে তীব্রতা লাভ করেছে এবং তাকে কেন্দ্র ক’রে এই অঞ্চলে উপস্থিত সাম্রাজ্যবাদী-শক্তিগুলো (USA, China, Japan, Russia, South Korea) নানাবিধ জঘন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিচছে/অবস্থান গ্রহণ করছে। ফলতঃ, এই প্রশ্নটা সম্মেলনে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে এবং প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে। আলোচনায় তীব্র বিতর্ক চলে এবং অবশেষে যেসব সিদ্ধান্ত উঠে আসে তার ভিত্তিতে সম্মেলনে উপস্থিত(যাদের নাম নিচে উল্লিখিত হল) সকলের সম্মতিতে নিম্নলিখিত ঘোষণাপত্র গৃহিত হয়:
কোরিয়ায় যুদ্ধের হুমকির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকতাবাদী ঘোষণা:
উত্তর কোরিয়ায় পরীক্ষামূলক পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিওল এবং উলসানে অনুষ্ঠিত কম্ম্যুনিষ্ট আন্তর্জাতিকতাবাদীদের সম্মেলনে এই ঘোষণা করছি যে ---------------
আমরা.............
. আর অন্য কোন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের নতুন ক’রে পারমানবিক হাতিয়ার তৈরির ক্ষমতা লাভের তীব্র নিন্দা করছি: আন্ত-সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে সব্বোর্চ্চ হাতিয়ার নিউক্লিয়ার বোমা, এর কাজ হ’ল সাধারণভাবে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা এবং বিশেষ ভাবে শ্রমিকশ্রেণিকে হত্যা করা।
. পুঁজিবাদী রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া কতৃর্ক যুদ্ধের পথে এই নয়া পদক্ষেপকে নিঃশর্ত্তে ধিক্কার জানাচ্ছি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র কতৃর্ক গৃহিত এই পদক্ষেপ আবারো একবার সুনিশ্চিতভাবে প্রমান করছে(অবশ্য যদি এই প্রমান করার কোন আবশ্যকতা থেকে থাকে) যে এই রাষ্ট্রের সঙ্গে শ্রমিকশ্রেণি বা কম্যুনিজমের কোন সংস্রব নেই বরং এ হ’ল চূড়ান্ত অবক্ষয়ী পুঁজিবাদের মিলিটারি বারবারিজমের সাধারণ প্রবণতার একটা চূড়ান্ত প্রকাশ।
. ইউএসএ এবং তার জুটিরা উত্তর কোরিয়ান শত্রুর বিরুদ্ধে যে ভন্ড প্রচার চালাচ্ছে তাকে নিঃশর্ত্তে নিন্দা করছি। তাদের এই বড় বড় বুলি আসলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আগে থেকে আঘাত হানার (যখনই তারা একাজ করতে সমর্থ হবে) মতাদর্শগত প্রস্তুতি ছাড়া কিছুই নয়। আর এই আঘাতের প্রধান বলী হবে শ্রমজীবি মানুষ যেমনটা আমরা ইরাকের বেলায় দেখছি। আমরা একথা ভুলিনি যে পৃথিবীতে ইউনাইটেড স্টেটই একমাত্র রাষ্ট্র যে যুদ্ধে পরমাণু বোমা ব্যবহার করেছিল, হত্যা করেছিল হিরোসিমা ও নাগাসাকির হাজার হাজার সাধারণ নাগরিকদের।
. তথাকথিত ‘শান্তি উদ্যোগ’কে খোলাখুলি নিন্দা করছি। এই উদ্যোগ স্বভাবতই অন্য সাম্রাজ্যবাদী মস্তান বাহিনী যথা চীন-র পক্ষ থেকে আসবেই। এ উদ্যোগ শান্তির দিকে তাকিয়ে নয়, সংশ্লিষ্ট সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর নিজ নিজ অঞ্চলের সাম্রাজ্যবাদী/পুঁজিবাদী স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার জন্যই এই উদ্যোগ। শ্রমিকেরা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের যেকোন ‘শান্তিকামী উদ্যোগ’-র প্রতি কোনো আস্থা রাখতে পারে না।
. জাতীয় স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র রক্ষার অজুহাতে শ্রমিকশ্রেণি বা আন্তর্জাতিকতাবাদী আদর্শে যারা সক্রিয় তাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার বুরজোয়াদের দমন-পীড়ণমুলক সমস্ত পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করছি।
সেনা আক্রমণ ঘটলে যারা সবথেকে আগে আর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেই উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান এবং রাশিয়ার শ্রমিকদের প্রতি, আমাদের সম্পূর্ণ সংহতি ঘোষণা করছি।
. ঘোষণা করছি যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বরবরতা, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, পারমানবিক হাতিয়ার প্রয়োগের যে বিপদসংকেত সবর্দাই আমাদের মাথার ওপর ঘনিয়ে আছে, তার চিরকালীন অবসান ঘটাতে পারে শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধ শ্রমীক সংগ্রাম।
শ্রমিকের কোন দেশ নেই, কোনো দেশের পক্ষে সে দাঁড়াতে পারে না।
সমস্ত দেশের শ্রমিকেরা--- ঐক্যবদ্ধ হও!
এই ঘোষণাপত্রে যেসব সংগঠন এবং গ্রূপ সই করেছেন :
ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিষ্ট কারেন্ট
সোস্যালিস্ট পোলিটিক্যাল এ্যালায়েন্স(কোরিয়া), সিওল গ্রূপ মিটিং অফ টোয়েনটি সিক্স্থ অক্টোবার, ২০০৬
ইন্টারন্যাশনাল পার্সপেকটিভস
…………………………………………
সম্মেলনে উপস্থিত কিছু কমরেড ব্যক্তি হিসেবে ্ই ঘোষণায় সাক্ষর করেছেন; তাঁরা হলেন:
SJ (Seoul Group for Workers’
Councils)
MS (Seoul Group for Workers’ Councils)
LG
JT
JW(Ulsan)
SC(Ulsan)
BM
[১] সম্মেলন প্রসঙ্গে আমরা পরে আরো ডিটেলসে লিখব(আইসিসি)
বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, ভবিষ্যতের বেকার, হবু অস্থায়ী ও আংশিক-সময়ের শ্রমিক এবং বতর্মান শ্রমিক
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম থেকে বিদ্যালয়গুলিতে ছুটি থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ফ্রান্সের অধিকাংশ বড় শহরগুলিতে সরকার ও মালিকের অথনৈতিক আক্রমনের বিরুদ্ধে এবং CPE1 আইনের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে এবং তাদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছে, যদিও গণমাধ্যমগুলি (বিশেষত, টিভি) এ বিষয়ে সম্পূণ নীরব। বরং ‘বারবারিয়ান গ্যাং’2 এর জঘন্য ক্রিয়াকলাপগুলি প্রচারের আলোতে নিয়ে আসার প্রতিই তাদের মনোযোগ বেশি।
স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা সস্তা শ্রমের ভান্ডার পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় বেকার উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এটা ছাত্রসমাজ উপলব্ধি করেছে এবং সেই জন্যই পাশ্ববর্তী কারখানার শ্রমিক ও বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার যুবকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং তাদেরকে সংগ্রামে সামিল করার জন্য তারা বিভিন্ন ছাত্র-সমাবেশ থেকে(যেমন Caen এ হয়েছে) প্রতিনিধি পাঠিয়েছে । আসলে CPE শ্রমিক শ্রেণীর কাছে একটি ‘পরিকল্পিত অনিশ্চয়তা’ ছাড়া কিছুই নয়। এই অনিশ্চয়তা শুধু যুব সমাজের উপরই প্রভাব ফেলেনি, শ্রমিক শ্রেণীর প্রত্যেক প্রজন্মই এই অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব ও দারিদ্রের শিকার। এই জন্যই কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের(যেমন Paris III Censier) অধ্যাপক,শিক্ষাকমী বন্ধুরাও এই ছাত্রছাত্রীদের প্রতি একাত্ম হয়ে ধমর্ঘটে সামিল হয়েছে।
গত নভেম্বরে প্রবাসী যুবকেরা তাদের প্রতি অন্যায়, অপমান ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ‘নতুন রাষ্ট্রের’ বিরুদ্ধে শহরতলিগুলিতে দাঙ্গায় মেতে ওঠে ; শাসকশ্রেণী এবং তাদের সরকার পাল্টা কার্ফু জারি ক’রে এবং প্রবাসী যুবকদের দেশে থাকার অধিকার নেই বলে বিতাড়িত ক’রে তাদের শৃঙ্খলা বজায় রাখে। বতর্মানে সেই শাসক শ্রেণী শ্রমিকদের সন্তানসন্ততিদের উপর ‘বলপ্রয়োগ ক’রে ঠান্ডা করার’(power cleanse)এর নীতি চালিয়ে যেতে চায়। কোন শ্লোগানই এর চেয়ে বেশি অমানবিক নয়। তারা ‘সুযোগের সাম্যের’ নামে CPE আইনের মধ্য দিয়ে অনিশ্চয়তা ও স্বল্প মজুরির বিষয়টি আরোপ করতে চায়। এই আইনে যে সব ‘সৌভাগ্যবান’ একটি চাকরি জোগাড় করতে পারবে তারা নিজেদেরকে মালিকের করুণার পাত্র হিসেবে দেখবে, যদিও তারা ঘরবাঁধা ও সন্তান প্রতিপালনের মতো বাঁচার আশাটুকুও দেখতে পাবে না। তারা রোজই কাজে যাওয়ার সময় এই ভয়ে থাকবে যে এই বুঝি তাদের হাতে সেই মুদ্রিত চিঠিটি ধরিয়ে দেওয়া হবে যাতে এই অশুভ বাক্য লেখা থাকবে
‘ তোমাকে আর প্রয়োজন নেই’। এই হলো মজুরি দাসত্ব! এই হলো পুঁজিবাদ !
CPE শুধুমাত্র সেই সাম্যই দিতে পারে যা দারিদ্রের সাম্য। CPE পারে শহর শেষের ঘিঞ্জি, নিচু জলা এলাকায় শ্রমিক শ্রেণীকে ঠেসে গুঁজে দিতে,কোন রকমে গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য একটি অস্থায়ী কাজ থেকে অন্য একটি অস্থায়ী কাজে দৌড় করাতে অথবা বেকার ভাতা বা RMI3 দিয়ে তিলে তিলে মারতে ---- এই হলো সেই ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ যা শাসক শ্রেণী এবং তাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র শ্রমিক শ্রেণীর সন্তানসন্ততিদের জন্য CPE ’র মধ্য দিয়ে উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছে।
এই সব শিশুদের পিতামাতারাই ২০০৩ সালে পেনশন সংস্কার আইনের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছিল, এবং তখন প্রধানমন্ত্রী ভিলপাঁর পূবর্সূরী র্যাফরিন এই বলে রাস্তায় নেমে পড়া সংগ্রামীদের উদ্দেশে তিক্ততা প্রকাশ করেছিলেন যে “রাস্তা দেশ শাসন করে না” (It’s not the street that rules)।
বয়স্ক শ্রমিক তথা ভবিষ্যত পেনশনভোগীদের উপর আক্রমনের পর পুঁজিবাদ এখন যুব-সম্প্রদায় তথা ভবিষ্যত বেকারদেরকে আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে স্থির করেছে। CPE আইনের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদের আসল চেহারা অনাবৃত হয়ে গেছে যে , একটি অবক্ষয়িত ব্যবস্থা নতুন প্রজন্মকে কিছুই দিতে পারেনা।বর্তমানে এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা অনতিক্রমনীয় অর্থনৈতিক সংকটের দ্বারা পচনশীল হয়ে পড়েছে। এটি সেই ব্যবস্থা যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শুধু অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র তৈরী করতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে চলেছে ।১৯৯১ -এর উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকে রক্তস্রোত একবারও থামেনি । বতর্মানে পুঁজিবাদ হল সেই দেউলিয়া ব্যবস্থা যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে শুধু বেকারত্ব ও দারিদ্র দিয়েছে এবং নিবির্চারে হত্যা চালিয়েছে ইরাকে, মধ্যপ্রাচ্যে ও আইভরি উপকূলে4 ।
দিনের পর দিন যে অবক্ষয়িত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পৃথিবীর উপর তার শাসন কায়েম করে রেখেছে তাকে যে কোন মূল্যে উৎখাত করতেই হবে।এই কতব্য র্অনুধাবন করেই প্যারিস টোলবিয়াক(Paris Tolbiac) এর ছাত্র সমাবেশ থেকে ঘোষিত হয়েছিল সেই শ্লোগান – ‘এটাই পুঁজিবাদকে উৎখাত করার মোক্ষম সময়’ (It’s time to put an end to capitalism)আর সেই কারণেই গত ৩রা মার্চ Paris Censier এর ছাত্ররা বিপ্লবী গান গাওয়ার জন্য একটি থিয়েটার সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানায়; উত্তোলিত হয় লাল নিশান এবং শতশত ছাত্র শিক্ষক ও কর্মচারী বন্ধুরা ‘আন্তর্জাতিক সংগীত’(Internationale) এর সঙ্গে গলা মেলায়।বিশ্ববিদ্যালয়চত্বরে মার্কসের কমিউনিস্ট ইস্তাহারের কপি বিতরণ করা হয়,বারংবার ধ্বনিত হতে থাকে ‘বিপ্লব’(REVOLUTION) শব্দটি। ছাত্ররা শুরু করে শ্রেণী সংগ্রামের উপর আলোচনা, যেখানে উঠে আসে ১৯১৭’র রাশিয়ার বিপ্লবের প্রসঙ্গ, আলোচনায় রোজা লুক্সেমবার্গ,কার্ল লিবনেটের মতো শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্বদের নাম উঠে আসে যাদেরকে ক্ষমতাসীন সোশালিস্ট পার্টির নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল। শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হলে তাদের অবশ্যই অগ্রজদের সংগ্রামের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে হবে। বিশেষ করে মনে রাখতে হবে ১৯৬৮’র মে মাসের ঐতিহাসিক আন্দোলনের কথা।
সেই উত্তাল সময়ে অধিকাংশ উন্নত দেশের বিশেষভাবে আমেরিকা ও জামার্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল।ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৯৬৮-র মে-তে দারুনভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছিল। তাদের এই সংঘবদ্ধতা তখনই সম্পূরণো নতুনমাত্রা পেয়েছিল, যখন ধর্মঘটী ৯ লক্ষ শ্রমিকের সঙ্গে সমগ্র শ্রমিকশ্রেণী এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। তখন বেশীরভাগ সচেতন ছাত্ররা তাদের বিশেষ দাবী-দাওয়া থেকে সরে গিয়ে শ্রমিকশ্রণীর সাধারণ দাবীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে শ্রমিকশ্রেণীর অংশ হিসেবেই নিজেদেরকে যুক্ত করেছিল। তারা শ্রমিকদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে আন্দোলনের পরিস্থিতি ও পরিপ্রেক্ষিত আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।প্রত্যেক জায়গায় ‘বিপ্লব তথা পুঁজিবাদকে উৎখাত করার প্রয়োজনীয়তা’ __এই ছিল বির্তকের বিষয় ।
মে ১৯৬৮-র আন্দোলন বিপ্লবের পরিণতি পায়নি । পায়নি কারণ তখনও পযন্ত পুঁজিবাদী সংকট ছিল সূচনাপরবে। কিন্তু তাতেই বুর্জোয়ারা তাদের অস্তিত্ব সর্ম্পকে ভীত হয়ে পড়েছিল । সরকার যেভাবে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়েছিল তাতে ইউনিয়নগুলিকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ ,কারণ তাদের যথাসাধ্য চেষ্টার দ্বারা ধমঘর্টীদের কাজে ফেরৎ পাঠানো সম্ভব হয়েছিল । ধন্যবাদ প্রাপ্য বামপন্থী সংগঠনগুলির এবং বিশেষকরে সেই সব সংগঠনগুলোর যারা শ্রমিকশ্রেণীর স্বাথরর্ক্ষার নামে De Gaulle5-র ডাকা নিবাচর্নে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিল।
মে-র ১৯৬৮ দেখিয়েছে ‘বিপ্লব’যাদুঘরের ধুলোয় ঢাকা পড়া নিছক প্রদশর্নীর সামগ্রী নয়। বিপ্লব কোন সুদূর অতীতের ধারনা মাত্র নয় ,বরং সমাজের অপরিহারয ভবিষ্যৎ হল বিপ্লব। সেদিনের সংঘবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন দেখিয়েছে যে,শাসকশ্রেণী সমাজের শোষিত মানুষকে আর জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে ধরে রাখতে পারবে না, দেখিয়েছে ১৯১৪ ও ১৯৩৯ সালের মতো একটি ৩য় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত করার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিকশ্রেণী স্বয়ং। গভীরতম অর্থনৈতিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকশ্রণীর সংঘবদ্ধ আন্দোলনের জন্যই বুরজোয়ারা ১৯৩০-এর মতো নিবির্চার মানবহত্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি।
CPEর বিরুদ্ধে যুব সম্প্রদায়ের আন্দোলন দেখাল যে, ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের গর্ভে নতুন সমাজের বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছে। ভবিষ্যৎ এই নয়া প্রজন্মের হাতেই। বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ অনুধাবন করতে শুরু করেছে যে, বেকার অথবা অনিশ্চিত শ্রমিকহিসেবে তাদের বেশিরভাগ অংশটাই ভবিষ্যতের শ্রমিক শ্রেণীর অন্তর্গত।তারা সেই শোষিত শ্রেণী, পুঁজিবাদ যাদের উৎপাদন-পদ্ধতি থেকে ক্রমাগত বেশী পরিমানে ছাঁটাই করে চলেছে।এরা সেই শ্রেণী যাদের সামনে নিজেদের ও সন্তানদের ভবিষ্যত রক্ষা করা এবং লড়াইকে জোরদার করা ছাড়া আর কোন কিছু বেছে নেবার নেই। এরা সেই শ্রেণী যাদের সামনে শোষণ, দারিদ্র, বেকারত্ব ও ববরর্তার অবসান ঘটানোর উপায় হিসাবে পুঁজিবাদকে উৎখাত করা ছাড়া আর কিছু বেছে নেবার নেই ।এরাই সেই একমাত্র শ্রেণী যারা গড়ে তুলতে পারে নতুন বিশ্ব, যে বিশ্ব শোষণ,প্রতিযোগিতা ও মুনাফার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে না বরং তা সমগ্র মানবসমাজের চাহিদার সন্তুষ্টিবিধান করবে । ১৯১৪ সালের যুদ্ধক্ষেত্রে কামানের খাদ্য হিসাবে যাদের পাঠানো হয়েছিল তারা বেশীরভাগই ছিল শ্রমিকশ্রেণীর অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান। রোজা লুক্সেমবার্গ যাদের বলেছিলেন ‘সবর্হারার সুন্দর কুসুম’,সেই নতুন প্রজন্মকেই পুঁজিবাদ ছিঁড়ে-খুড়ে রক্তলাঞ্ছিত করেছিল।
একবিংশ শতাব্দীতে এই‘সবহারার সুন্দর কুসুম’দের দায়িত্ব নিতে হবে সেই অবক্ষয়িত পুঁজিবাদকে ধ্বংস করার, যে পুঁজিবাদ ১৯১৪ও ১৯৩৯ সালের বিশ্বযুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর প্রজন্মকে বিনষ্ট করেছে । সমগ্র শ্রমিকশ্রণীর সমস্ত প্রজন্মের সম্মিলিত সংগ্রামের বিকাশের মধ্যে দিয়েই পুঁজিবাদকে ধ্বংস করা সম্ভব। সম্প্রতি ব্রাজিলের Vitoria da conquista বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস সংক্রান্ত বিতর্কে অংশগ্রহনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে6। তারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে যে, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই তারা তাদের পিতা-পিতামহ-প্রপিতামহদের বাহিত সংগ্রামের মশালকে প্রজ্জ্বলিত রাখতে পারে। এই ছাত্ররা তাদের বক্তব্যই শুনতে চাইছিল যারা অতীত ইতিহাসকে তাদের মধ্যে সঞ্চালিত করতে পারবে। এ হল সেই অতীত যার উপর ভিত্তি করে নয়াপ্রজন্ম তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে। তারা উপলব্ধি করেছে যে, শ্রেণীসংগ্রামের জীবন্ত ইতিহাস শুধু বই পড়ে শেখা যায়না সংগ্রামের বাস্তবভূমি থেকেও একে জানতে হয়।তারা কথা বলার,প্রশ্ন করার,ভিন্নমত পোষন করার এবং তাদের (বক্তাদের) যুক্তিকে বিরোধ করার দুঃসাহস দেখাতে পেরেছিল।যে সমস্ত শ্রমিক ,বেকার ও বিপ্লবীরা পুঁজিবাদকে উৎখাত করতে চায় তাদের জন্য এখন ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বক্তৃতামঞ্চগুলোর দরজা খুলে রাখা উচিৎ ।
বেশ কিছু সময় ধরে পৃথিবী জুড়ে শ্রমের দুনিয়া জামার্নী,স্পেন, আমেরিকা,ভারত ও লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ক্ষেত্রগুলি ধমর্ঘটের দ্বারা আলোড়িত হয়ে চলেছে। বেকারী ও ছাঁটাই’র বিরুদ্ধে প্রতিটি জায়গাতেই ধমর্ঘটীরা সমস্ত প্রজন্মের মধ্যে এবং বেকার ও চাকুরীজীবিদের মধ্যে সংহতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
ছাত্রসমাজ! যদি তোমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়ের চার দেওয়ালের গন্ডীর মধ্যে নিজেদেরকে আবদ্ধ রাখো তাহলে CPEর বিরুদ্ধে তোমাদের বিক্ষোভ ‘মাত্র ‘৯ দিনের বিস্ময়’ হয়ে থেকে যাবে। তোমাদেরকে উৎপাদন-প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে, ফলে তোমাদের হাত থেকে পুঁজিবাদী-অর্থনীতিকে অসাড় ক’রে দিয়ে শাসকশ্রণীর উপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ারটাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
শ্রমিক, বেকার ও পেনশনভোগীগন! এখন সংঘবদ্ধ হওয়ার সময়,কারণ আপনাদের সন্তান-সন্ততিরা এখন আক্রান্ত। আপনারাই সমাজের সম্পদ উৎপাদন করে এসেছেন এবং এখনো করে চলেছেন। পুঁজিবাদ-বিরোধী সংগ্রামের প্রধান চালিকাশক্তি আপনারাই।
শহরতলির বেকার যুবকগন ! শুধু তোমরাই বঞ্চিত হবে তা নয়! বতর্মানে পুঁজিপতিরা তোমাদের বলছে‘ইতর-উছৃঙ্খল-জনতা’ আর ১৯৬৮ সালে যারা পুঁজিবাদের শোষনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল তোমাদের সেই পূবর্সূরীদের তারা বলত: ‘জঘন্য সমাজবিরোধী’ !
ভবিষ্যতের একমাত্র স্বপ্ন (বিপ্লব ) অন্ধ হিংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে নিহিত নেই , আছে সমগ্র শ্রমিকশ্রেণীর প্রত্যেক প্রজন্মের সংঘবদ্ধ লড়ায়ের মধ্যে ,আছে ধমর্ঘটের মধ্যে, আন্দোলনের মধ্যে,স্কুল-কলেজ-কর্মস্থলের সেইসব আলোচনাসভার মধ্যে,পথসভার মধ্যে ____যেখানে আমরা বেকারত্ব,অনিশ্চয়তা এবং দারিদ্রের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত বিক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে পারি।
CPE নিপাত যাক! পুঁজিবাদ নিপাত যাক ! শ্রমিকশ্রেণীর শৃঙ্খল ছাড়া হারাবার কিছু নেই, কিন্তু জয় করবার জন্য আছে সারা দুনিয়া ।
ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিষ্ট কারেন্ট(ICC) , ০৬.০৩.০৬
যদি দায়িত্ব অনুভব করেন তবে এই লিফলেটটি কপি ক’রে প্রচার করুন।
1. CPE: Contrat Premiere Embauche: ২৬ বছরের নিচে থাকা তরুন শ্রমিকদের জন্য ভিলপাঁ সরকারের নতুন শ্রম-আইন যার অন্যতম নিয়মটি হল ২ বছরের trial period (ট্রায়াল পিরিয়ড), যে সময়ের মধ্যে, চাকরিতে নিয়োগকারী চাইলেই নিযুক্ত শ্রমিকটিকে কোন কারণ না দশির্য়েই ছাঁটাই করতে পারবে! ইতোমধ্যেই Contrat Nouvelle Embauche (CNE)’র মধ্যে দিয়ে ২৫ জনের কম শ্রমিক বিশিষ্ট কোম্পানীগুলোর ক্ষেত্রে একই কালাকানুন প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। এভাবে CPE,CNE এবং CDD Seniors(বৃদ্ধ শ্রমিকদের জন্য স্বল্প সময়ের চুক্তি)’র মাধ্যমে ফরাসী শ্রম আইনকে কে এক ঝটকায় বদলে ফেলতে চাইছে সরকার আর তার ভেতর দিয়ে বতর্মানে শ্রমিকেরা যেটুকু অধিকার ভোগ করে সেটুকুও কেড়ে নিতে চাইছে।
2. একদল দুষ্কৃতিকারী যারা একটি দোকানের কর্মীকে টাকা আদায়ের আশায় কিডন্যাপ করে এবং নৃসংশভাবে খুন করে।
3. Revenue Minimum d’Insertion : একজন কমর্হীন ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম রোজগার বতর্মানে যা মাসিক মোট ৪৩৩ ইউরো--- প্রতিমাসের ঘরভাড়ার থেকেও যা কম!
4. যেখানে এখন ফরাসী সেনা ‘শৃঙ্খলা রক্ষা’(!) করছে।
5. তৎকালিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট
6. আমাদের নোড১৭১১ তে প্রকাশিত[ ইংরাজী সাইট en.internationalism.org] দেখুন।
ফ্রান্সের চিরাক/ভেলপাঁ/সারকোজি সরকার গায়ের জোরে চাকরি সংক্রান্ত এক জঘন্য কালাকানুন চালু করেছে যার নাম হল সি.পি.ই.(প্রথম নিয়োগ চুক্তি বা First Employment / job Contract)। এর বিরুদ্ধে সেদেশের ছাত্রসমাজ যে বিশাল বিক্ষোভ-আন্দোলন গড়ে তুলেছে তা বতর্মান সময়ে আন্তজার্তিক ভাবে শ্রমিকশ্রেণির পুনরায় জেগে উঠতে থাকা সংগ্রামগুলোর অংশ হিসেবেই দেখতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণির মিলিজুলি করে চলা আগেকার যেসব ছাত্র আন্দোলন তার সাথে এর কোন মিল নেই। এ সংগ্রাম সমগ্র শ্রমিক শ্রেণির শ্রেণি-সংগ্রামের অংশ। পুঁজিবাদের অথর্নৈতিক আক্রমনের বিরুদ্ধে, নতুন প্রজন্মের সামনে নিশ্চিত দিশাহীন ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন প্রথম থেকেই দৃঢ়ভাবে শ্রমিক শ্রেণির লাইনকেই আঁকড়ে ধরেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক দাবি-দাওয়া
( যেমন, এল. এম. ডি. ডিপ্লোমা[1] প্রত্যাহারের দাবি)কে পাশে সরিয়ে রেখে তারা এমন এক দাবিকে সামনে এনেছে যা প্রকৃত পক্ষে সমগ্র শ্রমিক শ্রেণির সাধারণ দাবি: “ সি.পি ই. বাতিল কর! কমর্ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, বেকারি, ছাঁটাই বন্ধ কর!”
এই আন্দোলনের প্রধান শক্তি হল সংগ্রামের মধ্যে ক্রমবধর্মান সক্রিয় ‘সংহতি’। উচ্চ বিদ্যালয় এবং অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা এটা বুঝতে পেরেছে যে: একতাই শক্তি; তারা শ্রমিক সংগ্রামের সেই পুরোনো শ্লোগানকেই বাস্তবায়িত করছে: ‘তোমার তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা সবার তরে’। এই উপলব্ধিই তাদের সংগ্রামের পিছনে সমস্ত শিক্ষক এবং শিক্ষাকমীর্দের সামিল করতে সক্ষম করেছে, সকলকে টেনে নিয়ে গেছে ছাত্র-ছাত্রীদের স্ব-সংগঠন জেনারেল এ্যাসেমব্লি(এ.জি.)তে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এই জেনারেল এ্যাসেমব্লিকে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, তাদের পিতামাতা, অন্যান্য শ্রমিক, এমনকি পেনশনভোগিদেরজন্যও (বিশেষতঃ প্যারিস III Censier-এ) উন্মুক্ত ক’রে রেখেছে। সংগ্রামকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা তারা শিখতে চাইছে। এক প্রকার ‘সাজেশন বক্স’ নিয়ে তারা ঘুরছে রাস্তায়, সুপারমাকের্টে, বিভিন্ন কমর্ক্ষেত্রে,ইন্টারনেটে: সবর্ত্রই তাদের বক্তব্য : বলুন কিভাবে আমাদের এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, ‘আসুন আমাদের পাশে দাঁড়ান’! এভাবেই সংগ্রামের সবাপের্ক্ষা সচেতন এবং দৃঢ়চিত্ত বাহিনী সমগ্র শ্রমিক শ্রেণির সংহতিকে বিকশিত ও নিশ্চিত করা এবং সংগ্রামকে ব্যাপকতর ক’রে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র ‘গণ সাধারণ সভা ‘(mass general Assemblies)’
৭ই মারচ্-২০০৬’র মিছিলের পরেপরেই ছাত্রদের গন সাধারণ সভার বিস্তার ঘটতে থাকে সারা প্যারিস তথা অন্যান্য জায়গার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ‘লৌহ-মানব’ ভিলপাঁ(ফ্রান্সের বতর্মান প্রধানমন্ত্রী) নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন কেননা সি.পি.ই. পালির্য়ামেন্টে পাশ হয়েছে--- আর এটা তো ঠিক যে ‘রাস্তা দেশ শাসন’ করবে এটা হয় না! হ্যাঁ, ২০০৩-এ তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী রাফ্যারিন একথাই বলেছিলেন যখন পেনশন-প্রথার সংস্কারের নামে জীবনের ৪০টা বছর ধ’রে শোষিত হওয়ার পর অবসর-প্রাপ্ত শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনাটুকুকেও কেড়ে নেওয়ার কালাকানুন চালু করতে গিয়ে বিপুল শ্রমিকের প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল ফ্রান্সের শাসক শ্রেণি। ছাত্রসমাজ বশ্যতা স্বীকার করেনি।বিশেষতঃ রাজধানীতে, লেকচার হলগুলো ,যেখানে এ.জি.’র সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেখানে উপচে পড়ছে ভীড়, মিছিলের সংখ্যা হুহু ক’রে বাড়ছে। ছাত্রৱা গণমাধ্যমগুলোকে তাদের নীরবতা ভাঙতে এবং মিথ্যাচারণ বন্ধ করতে বাধ্য করছে।
৮ই মারচ্ থেকে ১৮ই মারচ্,২০০৬ এই দশটা দিন ফ্রান্সের শাসক-শ্রেণির ‘দুনিয়া কাঁপিয়ে’ দিয়েছে! ছাত্রসমাজের ক্রমাগত বেশিবেশি ক’রে সংগঠিত হয়ে ওঠার এক এবং একমাত্র অভিমুখ হল: সমগ্র শ্রমিকশ্রেণির সাথে সংহতি এবং ঐক্য গড়ে তোলা।
প্রলেতারিয়েতের প্রতিরোধ আন্দোলনের এই দিকদিশা রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে Censier বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এই সংগ্রামের বিস্তার এবং কেন্দ্রীকরণের (centralisation) ক্ষেত্রে সবার্পেক্ষা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
জেনারেল এ্যাসেমব্লীতে সমস্ত, এমনকি পথচলতি শ্রমিকদের দুহাত বাড়িয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে; আলোচনায় অংশ নিতে , তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। যাঁরাই এই সাধারণ গণ সভায় ছিলেন তাঁরাই অবাক হয়েছেন শ্রেণি সংগ্রামের ক্ষেত্রে এই নতুন প্রজন্মের সৃজনশীল ক্ষমতার প্রয়োগ দেখে! বিশেষতঃ Censier-এ অলোচনার গভীরতা, স্ট্রাইক কমিটি দ্বারা নিবার্চিত সদস্যদের দায়িত্ববোধ, তাদের আন্দোলন সংগঠিত করার সক্ষমতা, এ্যাসেমব্লী পরিচালনার দক্ষতা, যারা বলতে চায় তাদের সকলকে বলবার সুযোগ ক’রে দেওয়া, যুক্তি প্রতিযুক্তির মাধ্যমে, যারা আন্দোলনকে ভেস্তে দিতে চায় তাদের মুখোশ খুলে ফেলার এবং এ ব্যাপারে অন্যদের সচেতন করার প্রয়াস ইত্যাদি সব কিছুই নিশ্চিতভাবে শ্রমিকশ্রেণির নতুন প্রজন্মের প্রাণবন্ততা এবং সক্ষমতাকে নিশ্চিতরূপে প্রমান করে।
খোলা ভোটের ভিত্তিতে নিবার্চিত এবং এ.জি. কতৃর্ক ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করতে পারা না পারার ভিত্তিতে যেকোন সময় প্রত্যাহারযোগ্য প্রতিনিধিদের নিরলস প্রয়াসের সাহায্যে ছাত্ররা সবর্দাই এ.জি.-র সাবর্ভৌম চরিত্র বজায় রাখার পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। । ইউনিয়নস্থ এবং ইউনিয়নের বাইরে থাকা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে সভাপতিত্ব করবার জন্য প্রতিদিন সম্পূরণো নতুন টিম নিবার্চন করা হচ্ছে।
দায়িত্বের যথাযথ বন্টন, সংগ্রাম পরিচালনার কেন্দ্রীকরণ, বিভিন্ন অংশের কাজ ও দায়িত্বকে একসূত্রে গাঁথা এবং সমগ্র আন্দোলনের ওপর সচেতন নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য প্যারিস III-Censier-এ স্ট্রাইক কমিটি এ.জি.-তে নিবার্চনের মাধ্যমে কতকগুলো কমিশন তৈরি করেছে, যথা: প্রেস, (বৃহত্তর বিষয় সমূহ নিয়ে চিন্তা করার জন্য) এ্যানিমেশন এ্যান্ড রিফ্লেক্সন্, ওয়েলকাম এ্যান্ড ইনফরমেশন কমিশন ইত্যাদি।
এ.জি.-র এই সত্যিকারের ‘গণতন্ত্র’ এবং সংগ্রামের কেন্দ্রীকরণের এই প্রক্রিয়াই ছাত্রদের সবর্দাই কখন কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা ঠিক করতে সাহায্য করেছে এবং এইসব ক্ষেত্রে তাদের প্রধান লক্ষ্য থেকেছে কিভাবে শ্রমিকদের কমর্ক্ষেত্র অব্দি এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
এই পন্থা-পদ্ধতি এবং লক্ষ্যই তাদের এই সংগ্রামের আগুনকে সমগ্র শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে
ছাত্র-ছাত্রীরা স্পষ্টই বুঝতে পেরেছে যে তাদের আন্দোলনের সাফল্যের চাবিকাঠি আছে শ্রমিকদের হাতে, (যেমনটি Île de France Coordination-র ৮ই মারচ্’র মীটিঙে একজন ছাত্র বলেছেন: ‘যদি আমরা বিচ্ছিন্ন থাকি, তাহলে ওরা আমাদেরকে ওদের খাদ্য বানিয়ে ছাড়বে। ভিলপাঁ সরকার যত অনমনীয় থাকছে ছাত্ররাও তত বেশি ক’রে দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে উঠছে, বাড়ছে তাদের নাছোড়বান্দা মনোভাব! সারকোজির কঠোর পদক্ষেপ শ্রমিকদের ক্ষোভ এবং ‘ভোটার’দের অনাস্থাই শুধু বাড়িয়ে তুলছে। শ্রেণি-সংগ্রামে অভ্যস্ত শ্রমিকেরা (এবং বুজোর্য়াদের সবথেকে কম বোকা অংশটা) ভালোভাবেই জানে যে যদি ‘ইতর-উশৃঙ্খল’ শাসকশ্রেণি তাদের এই অযৌক্তিক ‘যুক্তি’ আঁকড়ে থাকে তাহলে এই আন্দোলন (সাধারণ ধমর্ঘট নয় যেমনটি কিছু ইউনিয়ন এবং এ্যানাকির্স্টরা করার কথা বলছেন) ‘মাস-স্ট্রাইক(mass strike)’ –এর রূপ নেবে।
সারা দেশজুড়ে শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি স্থাপনের প্রয়াস, সাধারণ সভায় বিপুল সংখ্যায় শ্রমিক-প্রতিনিধিদের উপস্থিতি[2] এবং আন্দোলনে তাদের সামিল করার ও শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূত্তর্ভাবে তাতে যোগদান ইত্যাদি দেখায় যে আন্দোলনের শুরু থেকেই এর গতি প্রকৃতিগতভাবেই মাস স্ট্রাইকের রূপ নেওয়ার দিকেই। ছাত্ররা ইউনিয়নগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ব্লকেজ’[3]-এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং শ্রমিকেরা ছাত্র-প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা না ক’রে কোন কথা বলতে অস্বীকার করেছে। প্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘Little Sioux’[4]রা আশ্চরয উদ্ভাবনী ক্ষমতার সাহায্যে এই ব্লকেজকে অতিক্রম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শ্রমিকদের সক্রিয় যোগদান সুনিশ্চিত করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা যথেষ্ট সৃজনী ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে: Censier একধরণের কারডবোরড্ বক্স তৈরি করেছে, যার নাম ‘চিন্তা-বাক্স’; কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন প্যারিসে Jussieu –এ ছাত্র-ছাত্রীরা এই বাক্স নিয়ে রাস্তায় নামছে—পথচারী মানুষের কাছে জানতে কেন তারা বিক্ষুব্ধ, আন্দোলনের ব্যাপারে তাদের মতামত লিখে বাক্সের মধ্যে ফেলতে বলা হচ্ছে কেননা তাদের মতে ‘ সব মতামতই লক্ষ্য করা প্রয়োজন।’ বিশেষতঃ, শ্রমিকদের , যারা পথচলতি বা যারা তাদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করতে আসছে তাদের মতামত বা চিন্তা ভাবনাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে সংগ্রহ করা হচ্ছে যাতে তারা সেগুলো সংগ্রাম বিকাশের কাজে ব্যবহার করতে পারে। তাদের অভিজ্ঞতাকে ধন্যবাদ, তারা বাছাই করছে সেই সব ‘ভালো আইডিয়া’ যেগুলো সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে! আর বাতিল করছে ‘বাজে আইডিয়া’গুলো যেগুলো তারা মনে করছে সংগ্রামকে দুবর্ল করবে এবং অন্তঘার্ত করবে আর ছাত্রদের রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ণের শিকারে পরিণত করবে; যেমন, Sorbonne বিশ্ববিদ্যালয় ‘দখল’ করার ভাবনা।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষতঃ আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেকচার হলগুলো শ্রমিক, বেকার এমনকি পেনশন-জীবিদের জন্যও উন্মুক্ত ক’রে দেওয়া হয়েছে; সেখানে তাদের কমর্জীবনের অভিজ্ঞতা বলতে বলা হয়েছে; পুরোনো প্রজন্ম নতুনদের আর নতুন প্রজন্ম পুরোনোদের কাছে শিখবার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে! পরিণত হয়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের মধ্যে পুরোনো প্রজন্ম আবিষ্কার করছে তাদের ফেলে আসা যৌবনের দিনগুলি! বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে দেওয়া-নেওয়া, শেখা-শেখানোর এ যেন এক অভিস্রবণ প্রক্রিয়া যা সমগ্র আন্দোলনে এক নতুন গতি দান করেছে।। সংগ্রামের বিশালতম শক্তি, অসাধারণ বিজয় যেন সংগ্রাম নিজেই!
এই বিজয় হল সমস্ত সেক্টরের, সমস্ত প্রজন্মের, সমগ্র শ্রমিক-শ্রেণির সংহতি এবং ঐক্য।
এ বিজয় অজির্ত হয়েছে পালার্মেন্টে নয়, হয়েছে ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর লেকচার হলগুলোতে; দুভার্গ্যজনকভাবে এ. জি.-তে সরকার নিযুক্ত গুপ্তচরেরা এই বিজয় বুঝতে পারেনি, তারা কিস্যু বোঝেনি! তারা মিস্টার ভিলপাঁকে কোন ‘আইডিয়া’ দিতে অপারগ।ভিলপাঁ/সারকোজি/শিরাক সব আইডিয়ার বাইরে চলে গেছে! আর তাই বুজোর্য়া গনতন্ত্রের আসল স্বরূপ প্রকাশ করতে তারা বাধ্য হচ্ছে, হাতে তুলে নিতে হচ্ছে ‘গনতান্ত্রিক’ হাতিয়ার: দমন, নিপীড়ণ।
পুলিশের হিংসাত্মক আচরণ পরিষ্কার প্রমান ক’রে দিচ্ছে বুজোর্য়াদের ‘ভবিষ্যৎ’ ব’লে আর কিছু নেই।
এই ছাত্র আন্দোলন নেহাতই সিপিই’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়; ৭ই মারচের জমায়েতে Paris-Tolbiac University’র এক শিক্ষক বলেছিলেন: ‘ সিপিই একটা বাস্তব এবং বিশেষ অথর্নৈতিক আক্রমণ শুধু নয়, এটা একটা প্রতীকও বটে।’ সত্যিই, এটা পুঁজিবাদী অথর্নীতির দেওলিয়াপনারই প্রতীক।
পুলিশের ‘ভুল’ আচরণের,যা ২০০৫-এর শরতে দুটি নিরপরাধ যুবকের মৃত্যুর কারণ হয় ( একজন ‘নাগরিক’ তাদের ‘চোর’ ব’লে অভিযুক্ত করে এবং পুলিশ তাদের হত্যা করে), পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয়। এক মানসিক বিকারগ্রস্ত (সারকোজি)কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ক’রে বুজোর্য়ারা বুঝিয়ে দিয়েছে যে তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে অক্ষম; এরা ভুলে গেছে অন্যান্য ঘটনার পাশপাশি, ১৯৮৬[5] তে Malik Oussékine ’র মৃত্যু শ্রমিকদের সংগ্রামকে আরো বেশি সক্রিয় এবং উত্তপ্ত ক’রে তোলে। আজ Sorbonne য়ুনিভাসির্টির ছাত্র-ছাত্রীরা, যারা মিথ্যাবাদী Mr de Robien’র দাবীমত বই পোড়াতে যায়নি গিয়েছিল শুধুমাত্র এ.জি.’র সভা করতে , তাদের ওপর পুলিশি নিপীড়ণ ছাত্রসমাজের নাছোড়বান্দা মনোভাবকেই আরো শক্তিশালী করেছে। সমস্ত বুজোর্য়া আর তাদের মিডিয়া সকলে মিলে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা ব’লে চলেছে---- ছাত্ররা নাকি ‘গুন্ডামো’ করছে অথবা ‘ভদ্দরলোক’ সারকোজির ভাষায় এরা নাকি ‘উচ্ছৃঙ্খল ছোটোলোক’!
কিন্তু এরা এতটাই ডাহা মিথ্যা বলছে যে শ্রমিকেরা তা মোটেই বিশ্বাস করে নি। উল্টে বুজোর্য়ার গুন্ডাবাহিনী যে নিপীড়ণ চালিয়েছে তাই দিয়েই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আর তার ‘মহান গণতন্ত্রের’ হিংসাত্মক রূপটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এ এক এমন ব্যবস্থা যেখানে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে ছুঁড়ে ফেলা হয় রাস্তায়, ৪০ বছর ধ’রে শোষন করার পর যেখানে পেনশনজীবি শ্রমিকদের দারিদ্রের অন্ধকারে নিক্ষেপ করে সরকার, যেখানে পুলিশের লাঠি আর গুলি দিয়ে ‘আইন-শৃংখলা’ চাপিয়ে দেওয়া হয় আমাদের ওপর। অন্যদিকে ভিলপাঁরা কালাবোবা সেজে থাকে, এদের আচরণ সেই পুরোনো রসিকতাটাকেই মনে করিয়ে দেয় ---- একনায়কতন্ত্র মানে ‘বোবা হয়ে থাক’, গনতন্ত্র মানে ‘ যা বলবি বল, কান করেছি ঢোল’। তবে ভিলপাঁ/সারকোজি/সিরাক ত্রয়ী এক নতুন শ্লোগান আমদানী করেছে---‘তোমার যা খুশি বল এবং মুখ বন্ধ কর’।
ক্ষমতায় থাকার দৌলতে মিডিয়া এইসব ভদ্দরলোকদেরই তাঁবেদারি করছে বিশেষত মতাদশর্গত বিষ ছড়ানোর সেরা মাধ্যম টিভি নিউজ চ্যানেলগুলো তাদের কেনা গোলাম! এরা মানুষকে ভুল বোঝানোর জন্য পুরো আন্দোলনটাকে শুধুমাত্র লক্ষ্যহীন কতকগুলো হিংসাত্মক ঘটনা হিসাবে তুলে ধরছে যাতে শ্রমিকদের কে এর থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়, তাদের সচেতনতাকে নষ্ট করা যায় । কিন্তু যতই তারা এই চেষ্টা করছে ততই তারা আমাদের ঘৃণাকে তীব্রতর ক’রে তুলছে।
ভবিষ্যত নিমার্ণের চাবিকাঠি যাদের হাতে সেই শ্রমিকশ্রেণির নতুন প্রজন্ম আর তার সবথেকে সচেতন অগ্রণী বাহিনী পুলিশ-রাষ্ট্রের উসকানি এবং ইউনিয়নবালাদের নিজেদের খপ্পরে রাখার কৌশলের ফাঁদে পা দেয় নি। নিবির্চার এবং মরীয়া হিংসাত্মক ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত হবার বুজোর্য়া পন্থা তারা প্রত্যাখ্যান করেছে , তারা মফস্বলের যুবকদের অথবা দুচারটে এ্যানারকিস্ট ও লেফ্টিস্টদের মত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবার পন্থাকে কখনোই গ্রহণ করেনি।
ছাত্র-আন্দোলনের পুরোধা এইসব শ্রমিক-শ্রেণির সন্তানরাই একমাত্র গোটা সমাজের সামনে এক নতুন ভবিষ্যতের দিশা তুলে ধরতে পারে। তার নিজ শ্রেণি-শক্তির প্রতি আত্মবিশ্বাস, তার ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গী, তার ধৈরযো এবং যেমন লেনিন বলেছিলেন তার ‘রসবোধ’ শ্রমিকশ্রেণির এই ভবিষ্যত দিশাকে বিকশিত ক’রে তুলতে পারে। শ্রমিকশ্রেণির এক সুনিদির্ষ্ট ইতিহাস-সম্মত ভবিষ্যত আছে কিন্তু বুজোর্য়াদের কোন ‘ভবিষ্যত’ নেই--- তারা তাই কেবল আতঙ্কগ্রস্তই হতে পারে, লক্ষ্যহীন নিবির্চার হিংসার পথ ছাড়া তাদের আর কোন পথই খোলা নেই।
ছাত্রদের সিপিই প্রত্যাহারের দাবির প্রতি মিস্টার ভিলপাঁর অনমনীয় মনোভাব আরো একটা ব্যাপার পরিষ্কার ক’রে দেয় যে বুজোর্য়ারা কখনই ব্যালোট বক্সের
চাপে তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না। যদি বিশ্বকে পুঁজিবাদের হাত থেকে মুক্ত করতে হয়, গড়তে হয় এক প্রকৃত বিশ্ব-মানব-সমুদায় তাহলে ভবিষ্যতে শ্রমিকশ্রেণি বাধ্য হবে তার নিজ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের স্বারথে রাষ্ট্রের হাতের ক্রীড়ণক দমন-পীড়ণের ব্যবস্থা ও তাদের ভয়ংকর আক্রমণ ও নিপীড়ণের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগ করতে। তবে প্রলেতারিয় শ্রেণি–হিংসার সঙ্গে দাঙ্গাকারী মফস্বলের যুবকদের কিংবা সন্ত্রাসবাদের কোন সম্পরকোই নেই(যদিও বুজোর্য়ারা উল্টোটাই বলে কেননা এর ফলে তারা শ্রমিক,ছাত্র এবং অবশ্যই প্রকৃত কম্যুনিস্টদের অত্যাচার করাটাকে যুক্তিসিদ্ধ হিসাবে দেখাতে পারে)।
আন্দোলনকে ভেতর থেকে ধ্বংস করা এবং এর প্রলেতারিয়- চরিত্রকে নষ্ট করার লক্ষ্যে শাসক শ্রেণির পাল্টা আক্রমণ
অথর্নৈতিক তথা পুলিশি আক্রমণ নামিয়ে আনার জন্য তাদের প্রথম ফিকির হল এমন একটা সময় বাছা যেসময় ছাত্র-ছাত্রীদের ছুটি থাকবে ফলে তাদের বিক্ষোভ দানা বাঁধতে পারবে না; কিন্তু উল্টো হল : আমরা দেখলাম তাদের সক্রিয়তা অব্যাহত এবং ছুটির সময় তা অনেক বেড়ে গেল। স্বাভাবিকভাবেই, আন্দোলনের শুরু থেকেই ইউনিয়নবালারা ছিল এবং যথাসাধ্য চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিল কিভাবে মুভমেন্টের বারোটা বাজানো যায়। কিন্তু তারা ধরতেই পারে নি শেষ পযর্ন্ত বেশিরভাগ শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের কোন নিয়ন্ত্রণই তারা রাখতে পারবে না।
উদাহরণস্বরূপ, প্যারিসে প্যারিস III Censier’র বাইরে কয়েকহাজার স্টুডেন্ট সবাইমিলে একসঙ্গে জমায়েতে যাবে ব’লে জড়ো হয়েছিল; যখন তারা আবিষ্কার করল যে CGT মিছিলে নেতৃত্ব দেবে ব’লে আগেভাগেই তাদের ব্যনার ট্যনার খুলে রেডি হয়ে মিছিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে তখন যারা যেভাবে পেরেছে – হেঁটে, মেট্রোয়, সাইকেলে মানে যার যা ছিল সে তাই কাজে লাগিয়ে জমায়েতের সামনে গিয়ে পৌঁছেছে, তারপর মেলে ধরেছে তাদের নিজস্ব ঐক্যতান-খচিত পতাকা; তাতে লেখা আছে:
“ইউনিভাসির্টি এবং স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, বেকার শ্রমিক, সরকারি,বেসরকারি ও আংশিক সময়ের শ্রমিক---- সকলের লড়াই আজ একটাই: বেকারি এবং অনিশ্চিত-কাজের বিরুদ্ধে লড়াই!”
CGT ‘র অবস্থাটা হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। স্টুডেন্টদের বিপুল উচ্ছসিত কলরোলের পিছনে তাদের নানা বিভাগীয় পতাকা যথা: “CGT Engineers”, “CGT RAPT”[6] ইত্যাদি আর প্রতিটি পতাকার পিছনে হাতেগোনা কয়েকজন, তারা সম্পূর্ণ ছত্রভঙ্গ। তাদের বাহিনীকে চাঙ্গা করার জন্য Maurice Thorez[7] -এর স্ট্যালিনিস্ট পারটির কর্মীরা কিছু গরম-গরম শ্লোগান দেবার চেষ্টা করল, লাউডস্পীকারের মাধ্যমে ছাত্রদের শ্লোগান আর বক্তব্যকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করল শেষপযর্ন্ত সিজিটি এবং “ফ্রেঞ্চ কম্যুনিষ্ট” পারটির ক্যাডাররা ‘ইন্টারন্যাশানাল’ গেয়ে সকলকে তাদের সাথে যুক্ত করার চেষ্টাও করল--- কিন্তু বুড়ো স্টালিনিস্ট ডাইনোসোরগুলোর এই ক্যারিকেচার তাদের আরো বেশি হাস্যাস্পদ ক’রে তুলল; সত্যি বলতে কি, জমায়েতের এবং পথ-চলতি অনেক লোক হেসে গড়িয়ে পড়ছিল! এমনকি এই মন্তব্যও শোনা গেল যে ওদের আচরণ নাকি Spitting Image[8] -র মতোই দেখাচ্ছে।
ওই একই রাতে সিজিটি ইউনিয়নের নেতা Bernard Thibault টিভি সাক্ষাতকারে বলেছে: এটা সত্য যে আজকের জমায়েতে এমন একটা ব্যাপার ছিল যা আমরা আগে থেকে আন্দাজ করতে পারিনি।”
ইউনিয়নগুলো যতই আন্দোলনকে তাদের হাতের মুঠোয় আনবার জন্য জঘন্য সব কলা-কৌশল নিয়েছে ততই তাদের মুখোস খুলে পড়েছে। Mr de Robien ঘৃণার বশে এই সত্যটা বুঝতে পারছেন না: তিনি দেখাতে চাইছেন Sorbonne বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টরা হঠকারিতা করেছে (এটা প্রমানের জন্য বুজোর্য়া ম্যানিপুলেসনে স্পেশ্যালিস্টদের ছিঁড়ে রাখা কয়েকটা বই তিনি দেখাচ্ছেন যেন বা এইসব ছাত্রদেরই কীরতি!) , তিনি বলেছেন: “এই আন্দোলন মুষ্টিমেয় কিছু জনের দ্বারা পরিচালিত।” একজন ইউনিয়ন নেতা হিসাবে তার পক্ষে এভাবে দেখাই স্বাভাবিক, কেননা এই বিপুল মানবসমাজকে গতিশীল রাখে যে বিশাল উৎপাদক শ্রেণি সেটা তার চোখে পড়ে না, চোখে পড়ে শুধু সেই মুষ্টিমেয় শাসক শ্রেণির প্রতিনিধি, যাদের দ্বারাই দুনিয়াটা পরিচালিত হচ্ছে ব’লে মি. রবীন মনে করেন!
শুধু ৭ইমার্চেই নয়, সিজিটি এবং এফ.ও.[9], ১৪ই মারচের ছাত্র-ছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত্ত মিছিলেও তাচ্ছিল্যের পাত্র হয়েছে: এজন্যই কিছু বুদ্ধিমান টিভি সাংবাদিক মন্তব্য করেছে: ‘ইউনিয়নগুলো তাচ্ছিল্যের পাত্রে পরিণত হয়েছে।’ যে সংগ্রামী যুব-ছাত্ররা তাদের উপহাসের পাত্র ক’রে তুলেছে তাদের এবং ১৬ই মারচের জমায়েতে ছাত্রদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের প্রতি ঘৃণা তারা গোপন রাখতে পারেনি; ফলতঃ সমগ্র জনসমক্ষে, ক্যামেরার সামনে মিস্টার সারকোজি এ্যান্ড কোঙের সাথে ওদের আঁতাত দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে গেছে।
ওইদিন প্যারিসে সিজিটি (Stalinist party ‘র সাথে সংশ্লিষ্ট) এবং এফ.ও. ( ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সিআইএ’র টাকায় তৈরি ইউনিয়ন)’র প্রতিনিধিরা মিছিলের পুরোভাগে থেকে সি.আর.এস.-এর[10]সামনা করছিল। হঠাৎ দেখা গেল ওদের ইউনিয়ন কডর্ন ম্যাজিকের মতন হাওয়া আর পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে বেপথু করতে সেখানে ছেড়ে রাখা হল কিছু পেটি বুজোর্য়া দাঙ্গাবাজকে যারা Sorbonne-মুখি মিছিলে ঢুকে প’ড়ে পুলিশের সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলায় মেতে উঠল। যাঁরা এই নতুন হিংসাত্মক দৃশ্য দেখলেন তাঁদের প্রত্যেকেই বলেছেন যে ভিলপাঁ/সারকোজিরা যে তাদের দমন-পীড়ণের যন্ত্রটা কাজে লাগাতে পারল আর ভরতি করতে পারল তাদের জেলখানা (Black Marias) তার কৃতিত্বটা পুরোপুরি ইউনিয়ন প্রতিনিধিদেরই প্রাপ্য।
সবোর্পরি, টিভি নিউজ ২৪ ঘন্টা এদিনের হিংসাত্মক ঘটনার ছবি দেখিয়ে দেখিয়ে মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা চালিয়েছে যাতে ১৮ই মারচের মিছিলে যেতে লোকে ভয় পায়। অনেক শ্রমিক এবং যুবক যারা এই মিছিলে যোগ দেবে ভেবেছিল তারা হয়তো ভয় পেয়ে যোগ নাও দিয়ে থাকতে পারে।
টিভি চ্যানেলগুলো এই সুখবর প্রচার করেছে (১৬ই মারচে প্রচারিত নিউজ অনুযায়ী) যে আন্দোলন ‘স্তিমিত হয়ে আসছে”।
যারা এই আন্দোলনের মৃত্যু চায়, তারা সারকোজির সাগরেদ, এরা তারা যারা চায় আন্দোলনকে ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে আনতে। আর শ্রমিকশ্রেণি একথা বুঝতে শুরু করেছে। বড় বড় বুলির আড়ালে, ইউনিয়ন আসলে সরকারের চামড়া বাঁচাতেই আগ্রহী। UMP[11]’র ব্রন্টোসোরগুলোর[12] পাশাপাশি স্ট্যালিনিস্ট পারটি আর তার সিজিটি ইউনিয়নের ঠাঁই হওয়া উচিত জুরাসিক পার্কে। সামাজিক আন্দোলনের আগুন নেবানোর কাজে নিযুক্ত ‘সামাজিক দমকলবাহিনী’ ইউনিয়নের পতাকাগুলো ১৬ই মারচ্ মানসিক-বিকারগ্রস্ত ভিলপাঁ/সারকোজিরা নিজেরাই পুড়িয়ে দিয়েছে ---সবার কাছে ধরা পড়ে গেছে তাদের আসল রূপ; আর তাই এরা এখনো অব্দি সামাজিক আন্দোলনের এই আগুন নেবানোর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
শ্রমিকেরা সংগ্রামী স্টুডেন্টদের সমথর্ন করেছে কারণ তারা দেখেছে ইউনিয়নগুলো কিভাবে গণ সাধারণ সভার(মাস জেনারেল এ্যাসেমব্লীজ) বিষয়ে গণমাধ্যমগুলোকে চুপ থাকতে সাহায্য করেছে।
৭ই মারচের মিছিল-জমায়েতের পর থেকে ইউনিয়নগুলো উঠে পড়ে লেগেছে যাতে যেন তেন প্রকারেণ শ্রমিকদেরকে নিষ্ক্রিয় ক’রে রাখা যায়, কোনমতেই শ্রমিকেরা যেন ছাত্রদের সঙ্গে যোগ না দিতে পারে। তারা চেষ্টা করেছে যে ক’রেই হোক যেন এই আন্দোলনকে ভেতর থেকেই নষ্ট ক’রে দেওয়া যায়। তারা তাদের বুলিকে ঝাঁঝাঁলো করেছে; তারা দাবি তুলেছে আপোষরফার বৈঠকে যাওয়ার আগেই যেন সিপিই প্রত্যাহার ক’রে নেওয়া হয়(এর মানে এই নয় যে শ্রমিকদের অগোচরে তারা তলায় তলায় আপোষরফার চেষ্টা চালাচ্ছে না)। সরকারকে ‘বাধ্য’ করার জন্য তারা এমনকি ‘সাধারণ ধমর্ঘট’ –এর ডাক দেবার হুমকিও দিয়েছে। তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে যে ছাত্রদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংহতি হোক , শ্রমিকরা সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে সামিল হোক তারা তা চায় না। তাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে, আর তাই উপায়ান্তর না দেখে কিছু অতি-মাথাগরম ছেলেপুলেকে উসকে দিচ্ছে যাতে হিংসাত্মক ঘটনাগুলো অব্যাহত থাকে।
এই রাজনৈতিক সংকটের কবল থেকে ফরাসী বুজোর্য়ার বেরোবার একমাত্র উপায় হল যে কোন উপায়ে ফরাসী প্রজাতন্ত্রের এই বিভ্রান্তিকর অবস্থাটাকে আড়াল করা, এর গনতান্ত্রিক ভাবমূর্তিটাকে বজায় রাখা। আর, এজন্য প্রয়োজনীয় মতলবটি মিস্টার ভিলপাঁকে রূপোর থালায় পরিবেশন করেছেন PS/PCF/Greens[13]-রা; সিপিই’র বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্যটি কন্সটিটিউসন্যাল কাউন্সিলের[14] বিচারের অধীন করার দাবীতে এরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ। সোস্যালিস্ট পারটির এই ‘সাহায্যের হাত’ কাজে লাগিয়ে ‘১২জন বিজ্ঞ ব্যক্তি’[15]-র কাছে সরকার বিষয়টি বিচারের আবেদন রাখতে পারে এবং এতে বিষয়টি আপাতত ঝুলে থাকবে; সেই সুযোগে রাফারিনের নীতিতে অবিচল থাকা যাবে যে ‘রাস্তা দেশ শাসন করে না’; এর সঙ্গে যোগ ক’রে বলা যায়: ‘দেশ শাসন করে কন্স্টিটিউসন্যাল কাউন্সিলের মাত্র ১২ জন পেনশনভোগী।’
এই সংগ্রামের সবথেকে বড় বিজয় সংগ্রাম নিজেই
সরবোন ইউনিভাসির্টির ছাত্রদের এবং তাদের কমরেডদের (যারা তাদের জন্য খাদ্য নিয়ে এসেছিল তাদের) ‘ঠেঙিয়ে ঠান্ডা’ করতে গিয়ে সারকোজি প্যানডোরার বাক্সটি খুলে ফেলেছে, আর তার ভেতর থেকে ভিলপাঁ/সারকোজি সরকার বের ক’রে এনেছে শ্রমিকদের ‘প্রতারক-বন্ধু’টিকে: এ হল ইউনিয়ন।
সুতরাং দুনিয়ার শ্রমিক এজন্য ফরাসী সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে পারে। চরম দক্ষিণ-পন্থি Le Pen[16] -র অভ্যুথ্থানের ভয় দেখিয়ে লাল-সাদা-নীল শাসকশ্রেণি দুনিয়ার সবথেকে অপরিণতবুদ্ধি দক্ষিণ-পন্থীদেরকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পেরেছিল: এমন এক দক্ষিণ-পন্থী যারা এমনসব নীতি নিয়েছে যা কেবল কোন ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ –এই শোভা পায় ।
এই সংগ্রাম এখনও অব্দি যতটুকু এগিয়েছে তাতে বলা যায় যে বিশ্ব শ্রমিক শ্রেণির কাছে এ আন্দোলন অলরেডি বিজয় লাভ করেছে। নতুন প্রজন্মকে ধন্যবাদ যে শ্রমিকশ্রেণি ইউনিয়নের ‘বাধা’ ভেঙে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। প্রলেতেরিয়েতের প্রতিটি সেক্টর, বিশেষত তাদের তরুন অংশটি এমন এক মুল্যবান অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে যা তাদের চেতনায় এক গভীর ছাপ রেখে যাবে।
এই অভিজ্ঞতা সমগ্র বিশ্ব প্রলেতারিয়েতের। গণমাধ্যমগুলোর বয়কট সত্বেও তাদের সমান্তরালে কাজ ক’রে চলা প্রচার মাধ্যম, সরকারের বশীভূত নয়,অপেশাদার এমন সব লোকজনের ক্যমেরা এবং অন্যান্য ‘সরকারী লাগামের বাইরে’ থাকা রেডিও , আর অবশ্যই বিপ্লবীদের নিজস্ব প্রেস দুনিয়াজুড়ে প্রলেতারিয়েতের কাছে এই খবর পৌঁছে দেবেই যাতে ক’রে শ্রমিকশ্রেণি এই অভিজ্ঞতাকে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতারই অংশ ক’রে তুলতে পারে,বুঝতে পারে প্রলেতারিয়েতের বিশ্বব্যাপী সংগ্রামের এটা মাত্র একটা দৃশ্য। 2003 থেকে ধারাবাহিকভাবে সারা পৃথিবীতেই যে সংগ্রাম চলছে এই আন্দোলন তারই অংশ; আর এইসব আন্দোলন পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে শিল্প–প্রধান দেশগুলোতে শ্রমিকশ্রেণি আবার এগিয়ে আসছে, ১৯৮৯’র ইস্টার্ণ ব্লক এবং তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক ও শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্রগুলোর পতনের পর বুজোর্য়াদের ছড়ানো বিভ্রান্তি তারা কাটিয়ে উঠছে। এইসব সংগ্রামের অন্যতম বৈশিষ্ট হল শ্রমিকদের মধ্যে সংহতিবোধের পুনজার্গরণ। বিশ্ব-পুঁজিবাদের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ—ইউ.এস এবং ইউনাইটেড কিংডম-এ শ্রমিক সংগ্রামের মর্মবস্তু হয়ে উঠেছে:সংহতি। যেমন ক্রিসমাস২০০৫’র ঠিক আগে নিউ ইয়র্কের ট্রান্সিট শ্রমিকেরা নিজেদের জন্য নয়, স্ট্রাইক করেছিল ভবিষ্যতে যারা ওই চাকরিতে যুক্ত হবে তারা যেন বতর্মান শ্রমিকদের মত একই অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা পায় এই দাবিতে। একইভাবে, ২০০৫-এর শরতে, লন্ডনের হিথরো এয়ারপোরটে Gate Gourmet কোম্পানী তাদের অধীনস্থ ক্যাটারিং বিভাগের শ্রমিকদের ওপর ঘৃণ্য আক্রমণ নামিয়ে আনলে শ্রমিকেরা তার বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত্ত ধমর্ঘটে সামিল হয়; আর ওই এয়ারপোরটের যাত্রীদের মালপত্র তোলা-নামানো ইত্যাদি কাজের সাথে যুক্ত শ্রমিকেরা ওই স্ট্রাইকে সামিল হয়, তাদের পাশে দাঁড়ায়।
ফ্রান্স এবং অস্ট্রিয়ায় পেনশন সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধা কেড়ে নেওয়ার সরকারী কালা-কানুনের বিরুদ্ধে ২০০৩-এর আন্দোলন (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত মানুষের জমায়েত আর হয়নি) থেকে শুরু, যারপর থেকে অবিরাম একটার পর একটা আন্দোলন, কোন না কোন দেশে হয়েই চলেছে আর সে আন্দোলনের ক্রমাগত বিকশিত হয়ে ওঠার এক প্রবণতা যেন শুরু হয়ে গেছে। ২০০৪-এ জামার্নিতে গাড়ি কারখানার শ্রমিকদের(বিশেষত ডেইমলার-ক্রাইসলার এবং ওপেলে) ছাঁটাই বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকদের সংহতি, ২০০৫-এর ডিসেম্বরে স্পেনের বারসিলোনায় সিয়েট (SEAT) কারখানায় ইউনিয়নের বাইরে এবং তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আন্দোলন[17] ইত্যাদি এই প্রবণতারই দৃষ্টান্ত।
সুতরাং ফ্রান্সের ছাত্র আন্দোলন এই ঐতিহাসিক বাঁকের পযার্য়ে চলতে থাকা আন্দোলনগুলোর অংশ হিসাবেই দেখতে হবে, যে-আন্দোলনগুলোর ফলশ্রুতিতেই মানব প্রজাতি পুঁজিবাদী বরবরতার গোলকধাঁধা থেকে অব্যাহতি পেতে পারে। নতুন প্রজন্ম, যারা শ্রমিকশ্রেণির দিশায় আজ তাদের সংগ্রাম পরিচালনা করছে, তারাই এই উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার উন্মুক্ত করছে। আমরা তাদের ওপর এই গভীর আস্থা রাখতে পারি যে এই গ্রহের সবর্ত্র, তারা এক নতুন পৃথিবী গড়বার প্রস্তুতি চালিয়ে যাবে ----- এমন এক পৃথিবী যেখানে কোন প্রতিযোগিতা নেই, লাভ-লোকসান নেই, নেই শোষন, দারিদ্র আর নিমর্ম সন্ত্রাস, আতঙ্ক, হিংসা, যুদ্ধ, নেই এই ভয়ংকর নৈরাজ্য!
স্বাভাবিক ভাবেই পুঁজিবাদ উচ্ছেদের এই রাস্তা দীর্ঘ, সমস্ত রকমের প্রতিকূলতায় ভরা তবু এই বাধার পাহাড় সরানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে, শুরু হয়ে গেছে সে পথে আমাদের সুমহান যাত্রা।
ইন্টারন্যাশানাল কম্ম্যুনিস্ট কারেন্ট
[1] অধুনা এই ডিপ্লোমা প্রথাটি ইউরোপিয়ান সিস্টেম হিসেবে ফ্রান্সে জোড় ক’রে চাপানো হয়েছে যার ফলে অনেক ছাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
[2] উদাহরণস্বরূপ, Tours- এ, ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার ক’রে ১০,০০০ লিফলেট ছাপিয়ে শ্রমিক-এলাকায় বিলি করেছে, যার প্রধান লক্ষ্য হল শ্রমিকদের এই আন্দোলনে সামিল করা ।
[3] এটা কথার খেলা; আসলে ইউনিয়নগুলো চায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পিকেটিং করতে এবং ছাত্ররা এর বিরোধী।
[4] এটি বাংলায় অনুবাদের অসাধ্য ; তবে মোটামুটি রেড ইন্ডিয়ানদের এক বিশেষ হস্তশিল্প ধারার উল্লেখ ক’রে এখানে যা বোঝাতে চাওয়া হয়েছে তা হল ছাত্রদের সাংঘাতিক উরবর মস্তিষ্ক যার সাহায্যেই তারা এমন কৌশল উদ্ভাবন করছে যাতে এই ইউনিয়নের ব্লকেজ পন্থাকে ভেস্তে দেওয়া যায়--- এটা উক্ত শিল্প নৈপুন্যের সাথেই তুলনীয় !
[5] বিশ্ববিদ্যালয়-সংস্কার’-এর বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদ আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে একজন ছাত্র নিহত হয়।
[6] Confédération Générale du Travail সংক্ষেপে সিজিটি: এটি অনেক পুরোণো ইউনিয়ন এবং এখনও স্ট্যালিনবাদী ফরাসী কম্যুনিষ্ট পারটি দ্বারা পরিচালিত।
[7] এই সেই লোক যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধমর্ঘটী খনি শ্রমিকদের এবং Renault শ্রমিকদের বলেছিল যেহেতু ধমর্ঘট হল মনোপলি ট্রাস্টগুলোর হাতিয়ার সুতরাং শ্রমিকগণ, তোমরা যে যার কাজে ফিরে যাও।
[8] ফ্রান্সে রাতের দিকে টিভি নিউজে একটি ব্যাঙ্গাত্মক অনুষ্ঠান দেখানো হয় যার ফরাসী নাম“Les Guignols de l’Info". ইউনিয়নবালা ও স্ট্যালিনবাদী দলগুলোর এদিনের কান্ডকারখানা সেই স্যাটায়ারের মতোই হাস্যকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল!
[9] Force Ouvrière.
[10] ফ্রান্সের রায়ট পুলিশ । পুরো নাম Compagnies Républicaines de Sécurité
[11] Jacques Chirac-র অধীন বর্ত্তমান শাসক দল। পুরো নাম: Union pour un Mouvement Populaire (নামের বাহারখানা দেখুন!)
[12] বিশাল চতুষ্পদী তৃণভোজী ডাইনোসোর যাদের জুরাসিক পরবর্তি যুগে উত্তর আমেরিকায় দেখা যেত।
[13] সোস্যালিস্ট পারটি, ফ্রেঞ্চ কম্যুনিস্ট পারটি এবং গ্রীণ পারটি।
[14] এদের মতলবটা হল কন্স্টিটিউসন্যাল কাউন্সিল যদি ঘোষণা করে যে সিপিই অসাংবিধানিক তাহলে সরকারের মুখরক্ষা হয়, সেক্ষেত্রে কাউন্সিলের দোহাই দিয়ে সিপিই প্রশ্নটা মুলতুবি রাখতে সরকারের অসুবিধা হয় না!
[15] এই বারোজন হল উক্ত কন্স্টিটিউসন্যাল কাউন্সিলের সদস্য।
[16] ফ্যাসিবাদি ন্যাশনাল ফ্রন্ট দলের নেতা যে গত রাষ্ট্রপতি নিবার্ছনে প্রথম দফায় সিরাকের ঠিক পরের স্থানে ছিল।
[17] যেখানে ইউনিয়ন শ্রমিকদের পিছন থেকে ছুরি মারার চক্রান্ত করে মালিকের সাথে ‘লজ্জাজনক’ চুক্তি ক’রে ৬০০ শ্রমিককে ছাঁটাই করার ব্যবস্থা করে।
২০০১ এ নিউইয়ক এবং ২০০৪ এ মাদ্রিদের মতই লন্ডনেও বিস্ফোরণের সুপরিকল্পিত লক্ষ্য ছিল শ্রমিকেরা। তার কারণ সেসময় টিউবে আর বাসে তাদেরই কমর্স্থলে যাবার ভীড় উপচে পড়েছিল। এই গণহত্যা ঘটানোর দায় স্বীকার করেছে আল-কায়দা, এরা বলছে “ইরাকে ব্রিটিশ সেনারা যে হত্যালীলা চালিয়েছে তার ” বদলা নিতেই তারা এ কাজ করেছে।কিন্তু ভেবে দেখুন, ইরাকি জনগণের উপর যে সীমাহীন নিধন চলছে তার জন্য নিশ্চয় ব্রিটেনের শ্রমজীবী মানুষেরা দায়ী নয়।এর জন্য দায়ী ব্রিটেনের এবং আমেরিকার শাসকশ্রেণী এবং তথাকথিত প্রতিবাদী সন্ত্রাসবাদীরা যারা প্রতিদিন ইরাকি জনগণের উপর হত্যালীলা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিরোধের নাম করেই।কিন্তু ইরাক যুদ্ধের হোতারা মানে ওই বুশ আর ব্লেয়াররা বহাল তবিয়তেই থেকে যাচ্ছে, বরং সন্ত্রাসবাদীদের নতুন নতুন হত্যালীলা ওদের নতুন কোনো যুদ্ধে নামার অজুহাত তৈরীতে সাহায্য করছে যেমন ১১ ই সেপ্টেম্বরের ঘটনা আফগানিস্তান এবং ইরাক আক্রমনের যুক্তি যুগিয়ে ছিল।
এই সব যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদীদের প্রয়োজনে, পৃথিবীর উপর তাদের নিজ নিজ আধিপত্য বজায় রাখার এবং এর মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদী শ্রেণীস্বাথ সুরক্ষিত করার জন্যই সংঘটিত হচ্ছে।আর এই যুদ্ধে বলী হচ্ছে অগণিত অত্যাচারিত,শোষিত, পুঁজির মজুরীদাসেরা। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ নিজেকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে গিয়ে উসকে দিচ্ছে জাতীয়তাবাদ, জাতিবৈষম্যবাদের মত বিষাক্ত ধারণা এবং শ্র্রেণী নিবির্শেষে সমগ্র জনগণকে পরিণত করছে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে। আপামর সাধারণ মানুষ অপমানিত,ধিকৃত,নিহত হচ্ছে প্রতিদিন। যুদ্ধের এই যুক্তি শ্রমিককে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে শ্রমিককেরই বিরুদ্ধে,তার নিজ শ্রেণীর স্বাথে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করাটাকে দুঃসাধ্য করে তুলছে এই যুদ্ধ। তার চেয়েও ভয়ংকর হলো যে যুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর কোন স্বার্থ নেই, শোষক শ্রেণীর স্বাথে সেই যুদ্ধেই শ্রমিক শ্রেণীকে জাতীয়রাষ্ট্র ও জাতীয় পতাকাতলে স্বেচ্ছায় সম্মিলিত হতে আহ্বান জানাচ্ছে আর এভাবেই তার আন্তজার্তিক বিপ্লবী সংহতি ও বিপ্লবী যুদ্ধের পথ থেকে তাকে বিচ্যুত করতে চাইছে ।
গ্রুপ-৮শীষ বৈঠকে ধনী আর ক্ষমতাশালীদের সভায় লন্ডনে বোমা বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে ব্লেয়ারের বক্তব্য:“ সন্ত্রাসবাদী কাযকলাপের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বোঝে যে তাদের নিষ্পাপ নিরীহ জনগনকে হত্যা করার প্রতিজ্ঞার তুলনায় আমাদের জীবনধারা এবং মূল্যবোধ রক্ষার সংকল্প অনেক বেশী শক্তিশালী ” ।
সত্যি কথাটা হল ব্লেয়ার এবং বিন লাদেনের মূল্যবোধ সম্পূণ একই । তাদের জঘন্য লক্ষ্যপূরণের জন্য উভয়েই একইভাবে নিরীহ ,নিরপরাধ মানুষকে মারছে , চালাচ্ছে ধ্বংসলীলা । তফাত্ এই যে ব্লেয়ার বড় সাম্রাজ্যবাদী মস্তান আর লাদেন তুলনায় ছোট । সুতরাং আমাদের কতব্য এদের কোন পক্ষে না যাওয়া ,আমাদের উচিত এই দুই পক্ষের কোন একটাতে যারা আমাদের সামিল করতে চায় তাদের সকলকে ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করা । যারা লন্ডন বিস্ফোরণের শিকার তাদের পাশে থাকার ঘোষনা করেছে আজকের ‘বিশ্বনেতারা’ –এটা তাদের ভন্ডামি ও দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয় ,এরা সেই সমাজব্যবস্থার নেতা যা গত শতাব্দীতে দু –দুটো বিশ্বযুদ্ধ এবং কোরিয়া থেকে উপসাগর ,ভিয়েতনাম থেকে প্যালেস্টাইন –সবত্র চলতে থাকা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মেরেছে । গেলডফ, বোনো এবং অন্যান্যদের ছড়ানো বিভ্রান্তির বিপরীতে এরা সেই সমাজের নেতা যে সমাজ তার নিজ প্রকৃতিগত কারণেই ‘দারিদ্রকে অতীতের বিষয়’ করে তুলতে পারেনা বরং লক্ষ লক্ষ মানুষকে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর অবস্থার দিকে নিয়ে যায়,প্রকৃতিকে তার মুনাফার স্বাথে দূষিত করে অহরহ । এরা চায় বিভিন্ন শ্রেনীর মধ্যে জাতীয় সংহতি,ভবিষ্যতের কোনো সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বাধানোর জন্য যা ওদের দরকার ---শ্রমিক শ্রেণীর কাছে এ সংহতি, আসলে বিশ্বশ্রমিকের শ্রেণিগত সংহতির সম্পূণ পরিপন্থি । এই সংহতি তাই একটা ভাঁওতা ছাড়া কিছু নয় ।
প্রকৃত ঐক্য হল দুনিয়াজোড়া শ্রমিকের সাধারন স্বাথের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ঐক্য ,এই একতাই সমস্ত জাতিগত ,ধমর্গত বিভেদকে নস্যাত্ করতে পারে – পারে পুঁজিবাদের সামরিকতন্ত্র আর যুদ্ধসবর্স্বতার যৌক্তিকতাকে প্রতিহত করতে । শ্রমিক শ্রেণীর এই ঐক্য এবং সৌভ্রাতৃত্বের শক্তি কতটা তা ইতিহাস থেকেই পাওয়া যায় :
১৯১৪-১৮–র সেনা বিদ্রোহ এবং রাশিয়া ও জামার্নির বিপ্লব প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থামাতে পুঁজিবাদকে বাধ্য করেছিল ; ইতিহাস আরো দেখায যে এই শ্রমিক শ্রেণীই যখন তার এই শ্রেণিগত ঐক্য ছেড়ে জাতীয়তাবাদী ঘৃণা এবং শাসকশ্রেণির প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে ২য় বিশ্বযুদ্ধে সামিল হল তার জন্য সাড়া পৃথিবী জুড়ে কি ভয়ংকর মূল্যই তাকে দিতে হয়েছিল !
আজ পুঁজিবাদ আবার সারা পৃথিবীতে যুদ্ধজাল বিস্তার করছে, তাকে ঠেলে দিচ্ছে সবব্যাপি ক্যাওস আর ধ্বংসের দিকে, যদি আমরা একে থামাতে চাই তাহলে অতি অবশ্যই
শাসকশ্রেণির সমস্ত দেশাত্মবোধক আহ্বানকে ঘৃণার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করতে হবে,
শ্রমিক হিসাবে আমাদের শ্রেণিস্বাথ রক্ষার লড়াই করতে হবে,
এবং এই মৃত্যুপথযাত্রি সমাজ যা ক্রমবধর্মান আতঙ্ক আর মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না তার বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ।
ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিস্ট কারেন্ট ,৭ ই জুলাই ২০০৫.