২০১০-র ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আইসিসি তার এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অবস্থিত সেকসনগুলোকে নিয়ে একটি সম্মেলন করে। সম্মেলনে ফিলিপাইন্স, তুর্কি এবং ভারতের সেকসনগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আইসিসির প্রতি সহমর্মী ছাত্র, যুব এবং শ্রমিকেরা উপস্থিত ছিলেন; ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার একটি আন্তর্জাতিকতাবাদী গ্রুপের প্রতিনিধিও। কোরিয়ার দুটি ইন্টারন্যাশানালিস্ট গ্রুপ যাঁরা আইসিসির কংগ্রেসে উপস্থিত ছিলেন তাঁরাও আমন্ত্রিত ছিলেন কিন্তু তাঁরা শেষপর্যন্ত উপস্থিত হতে পারেননি, তবে সম্মেলনের প্রতি তাঁদের সংহতি ও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন তাঁরা। পাঠিয়েছেন কোরিয়ার শ্রেণিসংগ্রামের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি বিবৃতি।
সাকি, ৪ই এপ্রিল, ২০১o
কলকাতার নিকটবর্তী ৫২ টি জুটমিলের প্রায় আড়াইলক্ষ শ্রমিক ২০০৯-র ডিসেম্বরের শুরুতেই ধর্মঘটে নামে। মজুরী বাড়ানো, অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত বহুসংখ্যক শ্রমিকের স্থায়ীকরণ, অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা প্রদান এবং জীবনযাপনের মান উন্নয়ন ও কারখানায় নানান অসুবিধাজনক পরিস্থিতির বদল ইত্যাদি নানা দাবীতে এই ধর্মঘট। সর্বোপরি, বকেয়া বেতন আদায়, স্বাস্থ্য বীমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য খাতে কেটে নেওয়া টাকা শ্রমিকদের নামে যথাযথভাবে জমা দিতে বাধ্য করা ছিল এই আন্দোলনের অন্যতম দাবী। দুমাস ধ’রে চলার পর ১২ই ফেব্রুয়ারী ২০১০ ইউনিয়নগুলো ধর্মঘট প্রত্যাহার করে এবং শ্রমিকদের কাজে যেতে নির্দেশ দেয়, যদিও ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে কোন দাবী আদায়ে তারা সমর্থ হয়নি। বরং এই পরাজয় শ্রমিকশ্রেণির ওপর আর একটা আক্রমণের মঞ্চ তৈরি করল।
এই মুহূর্তে ভীষণ অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে গ্রীসের পরিস্থিতি। যেকোন মুহূর্তে তীব্র ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে শ্রমিক শ্রেণি। গ্রীক রাষ্ট্র শ্রমিক শ্রেণির ওপর অবিরাম আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে—সমস্ত প্রজন্মের, সমস্ত সেক্টরের ওয়ার্কার আজ সেই আক্রমণের শিকার। প্রাইভেট সেক্টর, পাবলিক সেক্টর, বেকার, পেনসনজীবি, আংশিক সময়ের চুক্তিতে কর্মরত ছাত্র-ছাত্রী কেউ বাদ যায়নি। সমগ্র শ্রমিক শ্রেণি নিদারুণ দারিদ্রের মুখোমুখি।রাষ্ট্রের আক্রমণের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রমিকশ্রেণি তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। অন্যান্য কান্ট্রিগুলোর মতই গ্রীসেও শ্রমিকশ্রেণি নেমেছে রাস্তায়, করছে ধর্মঘট,জানিয়ে দিচ্ছে:
পুঁজিবাদের সংকটে তারা আর বলির পাঁঠা হতে চায় না; পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিদারুণ আত্মত্যাগের আহ্বানে সাড়া দিতে শ্রমিকশ্রেণি বিন্দুমাত্র দায়বদ্ধ নয়।
তবে গ্রীসে এই আন্দোলন এখনও বিশাল আকার ধারণ করেনি। গ্রীসের শ্রমিকেরা এই মুহূর্তে অত্যন্ত কঠিন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত মিডিয়া এবং সমস্ত রাজনীতিকরা শ্রমিকশ্রেণিকে জ্ঞান দিচ্ছে : বাছা করার আর কিছু নেই কোমরে গামছা বাঁধ কষে আর দেউলে অবস্থা থেকে দেশটাকে বাঁচাও; তো তখন শ্রমিকেরা কী করবে? শ্রমিক ভাইয়েরা ভীষণ দানবাকৃতি এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিভাবে দাঁড়াবে? কিভাবে কোন্ পদ্ধতিতে লড়াই করা দরকার যাতে শক্তিসাম্যটা শোষিত মানুষের পক্ষে আসে?
এই সব প্রশ্ন শুধু গ্রীসের শ্রমিকেরা ফেস করছেন তা নয়, এ প্রশ্ন আজ সমগ্র বিশ্বের শ্রমিকশ্রেণির। প্রকৃতপক্ষে গ্রীসের এই “ট্র্যাজেডি”সারা বিশ্বে কী ঘটতে চলেছে তার আভাস মাত্র। ইতোমধ্যে গ্রীক স্টাইলে ‘ব্যয়সংকোচের প্যাকেজ’ ঘোষিত হয়েছে পর্তুগাল, রুমানিয়া, জাপান এবং স্পেন (যেখানে সরকার পাবলিক সেক্টরের ওয়ার্কারদের বেতনের শতকরা ৫ ভাগ কেটে নিচ্ছে)। বৃটেনে এই কাটাউতি কিরকম হতে চলেছে তার ছবি নতুন কোয়ালিসন সরকার সবেমাত্র প্রকাশ করতে শুরু করেছে। এইসব আক্রমণ পরপর ঘটে চলেছে। এ থেকে আবারো বোঝা যাচ্ছে শ্রমিকশ্রেণির কোন জাতীয়তা নেই, পৃথিবীজুড়ে তাদের একটাই শ্রেণি পরিচয়, তাদের স্বার্থও একটাই, এই ধরণীতে তাদের শত্রুও একটাই। পুঁজিবাদ প্রলেতারিয়েতকে মজুরি-শ্রমের এই ভারী শেকলটা পরে থাকতে বাধ্য করে, তবে একইসঙ্গে এই শেকলই বিশ্বজুড়ে তাদের যুক্তও করে, একত্র করে সারা বিশ্বের শেকলপরা প্রলেতারিয়েতকে।
গ্রীসে আমাদেরই শ্রেণিভাইবোনেরা আক্রমণের শিকার আর তারাই এই আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে নেমেছে তাই তাদের সংগ্রাম আমাদেরই সংগ্রাম।
বুরজোয়ারা আমাদের মধ্যে হাজারোরকমের বিভেদ সৃষ্টির চক্রান্ত অনবরত চালিয়ে যাচ্ছে--—এই সমস্ত চক্রান্ত আমাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। সেই আদ্যিকাল হতে চলে আসা শাসকশ্রেণির নীতি: ‘ভাগ কর শাসন কর’—এর বিরুদ্ধে আমাদের শ্লোগান আজ একটাই: দুনিয়ার মজদুর এক হও।
ইউরোপে, বিভিন্ন দেশীয় বুরজোয়ারা বলছে আমাদেরকে যদি পেটে গামছা বেঁধে পড়ে থাকতে হয় তো তার দায় গ্রীসের। সেখানে দেশ পরিচালনার দায় যাদের কাঁধে তারা অসততা করেছে—দশকের পর দশক তারা দেশটাকে ঋণের ওপর নির্ভর ক’রে বেঁচে থাকতে দিয়েছে, সরকারী অর্থের অপব্যয়, তছরুপ এবং লুটপাট করেছে আর এরাই ইউরোর প্রতি ‘বিশ্বজোড়া আস্থার যে সংকট’ তার জন্য দায়ী। একটার পর একটা, এইসব ফালতু অজুহাত দেখিয়ে সরকারগুলো কেন ডেফিসিট কমাতে হবে তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে আর আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে ব্যয় সংকোচের’র কঠোর পদক্ষেপগুলো।
বুরজোয়াদের কোন কোন গোষ্ঠী বলছে ইউএস-এতে স্টক মার্কেটে ধস নামার কারণ হ’ল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অস্থির অবস্থা। কোম্পানীগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ ইউরো কারেন্সির দুর্বল অবস্থা কেননা, ডলার এবং ইউএসের রপ্তানীর ক্ষেত্রে ইউরো একটা প্রতিবন্ধক।....
সংক্ষেপে, প্রতিটা জাতীয় বুরজোয়া তাদের প্রতিবেশী বুরোজোয়া দেশগুলোকে অভিযুক্ত করছে আর শ্রমিকশ্রেণিকে ব্ল্যাকমেল করছে। এরা বলছে: ব্যয়সংকোচ মেনে নাও নয়তো দেশ দুর্বল হয়ে পড়বে আর এর সুফল ভোগ করবে আমাদের প্রতিযোগী অন্য দেশগুলো”। এভাবে জাতীয়তাবাদের বিষাক্ত ইনজেকসন দিয়ে এরা আমাদের শ্রেণি সংগ্রামের রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে।
কতকগুলো প্রতিযোগী পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসাবে বিভাজিত ধরণী আমাদের ধরণী নয়। যে বিশেষ রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে বাস করছি সেই রাষ্ট্রীয় পুঁজির স্বার্থে শৃঙ্খলিত থেকে শ্রমিকশ্রেণির কিচ্ছু পাবার নেই। আজ ‘জাতীয় অর্থনীতিকে’ বাঁচাবার স্বার্থে ওদের চাপিয়ে দেওয়া ব্যয়সংকোচের কালা কানুন মেনে নেওয়ার মানে আগামীকাল আরও কঠোরতর আত্মত্যাগ মেনে নিতে প্রস্তুত থাকা।
গ্রীস আজ গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। আজ স্পেন, ইতালি এবং পর্তুগাল ঠিক তার পিছনের সারিতে; বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানী, আমেরিকা আজ ভীষণ এক সংকটের মুখোমুখি--- এসবের কারণ পুঁজিবাদ এখন আক্ষরিক অর্থেই মুমূর্ষ ব্যবস্থা। পুঁজিবাদের নৈরাজ্যের অতল তলে ক্রমাগত আরো তলিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত দেশ। গত চল্লিশটা বছর ধরে পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতি সংকটাপন্ন। এক মন্দা থেকে আরেক মন্দার ভেতর দিয়ে চলেছে সে। এ্যাদ্দিন শুধুমাত্র বাঁচার চেষ্টায় মরীয়া পুঁজিবাদ লাগামছাড়াভাবে ঋণের আশ্রয় নিয়েই যেটুকু সম্ভব বিকাশটুকুকে জিইয়ে রাখতে পেরেছে; কিন্তু তার ফলাফল আজ কী? প্রতিটি ব্যক্তি, প্রতিটি পরিবার, কোম্পানী, ব্যাঙ্ক আর রাষ্ট্র সমস্তটাই ঋণভারে জর্জরিত। গ্রীস রাষ্ট্রের দেউলিয়া হয়ে যাওয়াটা এই শোষণভিত্তিক ব্যবস্থাটার সাধারণ এবং ঐতিহাসিকভাবে দেউলে অবস্থারই একটা বিশেষ বিকৃত প্রকাশমাত্র।
শাসকশ্রেণি ব্যয়সংকোচের যে প্ল্যান ঘোষণা করেছে তা আসলে আমাদের জীবনযাপনের অবস্থার ওপর সামগ্রিক একটা আক্রমণ। সুতরাং এর বিরুদ্ধে একমাত্র দাওয়াই শ্রমিকশ্রেণির ব্যাপক শ্রেণি-সংগ্রাম। নিজের ছোট্ট চৌহদ্দির ভেতর লড়াই ক’রে একে ঠেকানো অসম্ভব: তা সে নিজ নিজ ফ্যাক্টরি, স্কুল, অফিস যাই হোক; একাএকা এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন থেকে কোন আন্দোলনই আজ আর এই বিপুল আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারবে না। সুতরাং সমস্ত ক্ষেত্রের সমস্ত শ্রমিকের ব্যাপক আন্দোলন আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। শাসকেরা সেক্টরভিত্তিক লড়াই চূর্ণ করে দেবেই, আর বাধ্য করবে গভীরতর দারিদ্রে নিমজ্জিত হতে। এর বিপরীতে একমাত্র উপায় সমস্ত বিভাজনরেখার ভেঙে চূড়মার ক’রে সমস্ত সেক্টরের শ্রমিকের ঐক্যবদ্ধ এবং সুসংহত লড়াই।
লক্ষ্য করুন অফিসিয়াল সংগ্রাম-বিশেষজ্ঞদের মানে ট্রেডইউনিয়নওয়ালাদের—কী করছে তারা? অসংখ্য কর্মক্ষেত্রে তারা ধর্মঘট সংগঠিত করছে:কিন্তু একটিবারের জন্যও তাদের চেষ্টা নেই এই সমস্ত পৃথক পৃথক আন্দোলনগুলোকে একসূত্রে গাঁথার। বরং সেকসনগত, বিশেতঃ সরকারী এবং বেসরকারী ক্ষেত্রগুলোর শ্রমিকদের মধ্যে বিভাজনটাকে এরা সক্রিয়ভাবে উৎসাহিতই করছে। তারা শ্রমিকদের নিষ্ফল, নিষ্ক্রিয় প্রতিবাদ-কর্মসূচীতে সামিল করছে; সোজা কথায় তারা ওয়ার্কারদের ঐক্য বিনাশ করারই বিশেষজ্ঞ। ইউনিয়নগুলোও একইরকমভাবে জাতীয়তাবাদী মনোভাবকে আরো চাঙ্গা করতে চাইছে। একটা উদাহরণ দিই: মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে ইউনিয়নগুলোর একটা গালভরা কমন্ শ্লোগান হ’ল: “ স্বদেশী জিনিস কেনো”!
ইউনিয়নের রাস্তায় হাঁটা মানে ঐক্যের বিপরীতে হাঁটা, পরাজয়ের পথে হাঁটা। শ্রমিকদের নিজেদের সংগ্রাম নিজেদের হাতেই নিতে হবে; সব শ্রমিকদের সম্মিলিত সাধারণ সভায় নিজেদের সংগঠিত করার মধ্য দিয়ে, সাধারণ সভায় সংগ্রামের দিশামুখ, পদ্ধতি ইত্যাদি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভেতর দিয়ে, নিজেদের দাবী আর শ্লোগান সম্মিলিতভাবে ঠিক করার মধ্যে দিয়ে, সংগ্রাম পরিচালনার জন্য, যেকোন সময়ে প্রত্যাহারযোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন ক’রে, সংগ্রাম কমিটি গঠন ক’রে, কাছাকাছি থাকা ফ্যাক্টরি, স্কুল. কলেজ. হাসপাতালইত্যাদি সম্ভাব্য সব জায়গায়কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে (যাতে তারাও আন্দোলনে সামিল হয় সেই্ লক্ষ্যে) আলোচনা করার জন্য প্রতিনিধি পাঠানোর কাজ সংগঠিত করার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকশ্রেণিকে একাজ করতে হবে।
ট্রেডইউনিয়ন চৌহদ্দির বাইরে বেরিয়ে, শ্রেণি তার নিজের সংগ্রামের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবে নিজেই, অন্যান্য সেক্টরের শ্রমিকের কাছে যাবে—এগুলো বেশ কঠিন কাজ মনে হতে পারে। আসলে শ্রমিকশ্রেণির নিজ শ্রেণির প্রতি গভীর আস্থার অভাব আজকের দিনে শ্রেণিসংগ্রাম বিকাশের ক্ষেত্রে একটা বিরাট বাধা। নিজের শ্রেণিটা যে কি বিপুল শক্তি ধরে সেটা সম্বন্ধে তারা নিজেরা পুরোপুরি সচেতন নয়। এই মুহূর্তে একদিকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট, পুঁজিবাদের হিংস্র আক্রমণ, অন্যদিকে প্রলেতারিয়েতের স্ব-শ্রেণির প্রতি দৃঢ় আস্থার অভাব সব মিলে একটা অচল, অবশ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি যেমনটা দাবী করে এমনকি গ্রীসেও, শ্রমিকের সাড়া, তার তুলনায় অনেকটাই ক্ষীণ। তাসত্বেও ভবিষ্যৎ শ্রেণিসংগ্রামেরই হাতে। পুঁজিবাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির ক্রমবর্ধমান এবং ব্যাপক আন্দোলনই সামনে এগোনোর একমাত্র রাস্তা।
কিছু মানুষ জিগ্যেস করছেন, “ কেন আন্দোলন করব? এ আন্দোলনের পরিণতিটাই বা কী? পুঁজিবাদ তো দেউলে হয়ে গেছে, কোন সংস্কারই যখন সম্ভব নয়, তখন আর কিইবা রাস্তা থাকে?” সত্যি বলতে কি, এই শোষণভিত্তিক ব্যবস্থার ভেতর আর কোন সমাধান নেই। কিন্তু কুত্তার মত বাঁচতে অস্বীকার ক’রে সম্মিলিতভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর মানে আপন মর্যাদা রাখার দাঁড়ানো। এর মানে এই উপলব্ধি যে এই প্রতিযোগিতা আর শোষণ ভিত্তিক বিশ্বেও সংহতি নিশ্চিতভাবেই আছে আর এই অমূল্যবান মানবিক অনুভবটিকে বিশ্বজুড়ে বাস্তবায়িত করতে শ্রমিকশ্রেণি সক্ষম। আর এখান থেকেই আরেক নতুন ধরণীর অভ্যুদয়ের শুরু: একটা বিশ্ব যেখানে কোন শোষণ নেই, রাষ্ট্রীয় সীমানা নেই, নেই কোন সেনাবাহিনী; সে বিশ্ব লাভের জন্য নয়, মানুষের জন্য। শ্রমিকশ্রেণি নিজের শক্তির ওপর গভীর আস্থা গড়ে তুলতে পারে এবং তা তাকে করতেই হবে। একমাত্র এই আস্থাই সেই মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলতে সক্ষম; এই আস্থাই মার্কসের ভাষায় “পরিস্থিতির দাসত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে স্বাধীনতার পরিমন্ডলে উত্তরণের” মধ্যে দিয়ে মানুষের প্রজাতিগত সত্তার প্রকৃত বিকাশ ঘটাতে পারে।
ইন্টারন্যাশানাল কমিউনিস্ট কারেন্ট, ২৪শে মে ২০১০
আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ বর্তমানে শত্রুদেশএবং তথাকথিত মিত্রদেশ উভয়দিক থেকেই একইরকমভাবে সমস্যায় জর্জরিত। বুশ প্রশাসনের ‘একলা চলো’ নীতির পরবর্তী পর্ষায়ে ওবামা নির্বাচিত হওয়ায় ধরে নেওয়া হয়েছিল যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে তার অভিযানের কলাকৌশলের ভিত আরো মজবুত করতে কিছুটা বিলম্ব করার নীতিই নেবে। ওবামার শান্তিকামী ইমেজ এবং তার প্রশাসনের সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের দৃষ্টিভঙ্গী আর কূটনৈতিক প্রকৌশলগুলি আসলে ছিল দ্বিতীয় সারির প্রধান শক্তিগুলিকে নিজের মিলিটারী শক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করে শত্রুদেশগুলিকে প্রতিহত করার পদক্ষেপমাত্র। ইন্টারন্যাশনাল রিভিউয়ের ১৩৮ নং সংখ্যায় বলা হচ্ছে, “আমেরিকার মূল লক্ষ্যটি আসলে মিলিটারি শক্তির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতার নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার করা। তাই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উত্তরোত্তর কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ওবামার বন্ধুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলি তাৎপর্ষপূর্ণভাবে এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিলম্বের লক্ষ্যেই পরিকল্পিত হয়েছিল যাতে আগামীদিনে যে কারোর যে কোন বিষয়ে অনিবার্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করা যায়। বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী প্রয়োজনেই আমেরিকাকে বিভিন্ন দেশে তার সামরিক বাহিনীকে ছড়িয়ে রাখতে হয়েছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ করতে করতে তার বাহিনী এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে যে তার পক্ষে এখনই আর কোন নতুন যুদ্ধে লড়া সম্ভব নয়। অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্বের মীমাংসা করা, সহযোগিতা ও কূটনৈতিক পদ্ধতির উপর তাই ঢাকঢোল বাজিয়ে খুব জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে এটা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ওবামার এসব গালভরা বুলি ও নীতি আরো বেশি বেশি করে বুশ প্রশাসনের নীতির মতোই হয়ে উঠছে। বরং সেগুলিকে আরো ক্ষুরধার, আরো কার্ষকরী ও আরো ব্যাপক করে তোলা হয়েছে যাতে বর্তমানের উত্তরোত্তর উত্তেজিত পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করা যায়।
কমনওয়েলথ গেমস ক্রীড়াঙ্গনে খেলোয়াড়দের থাকার ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক স্ক্যাণ্ডাল ছড়িয়েছে। প্রখ্যাত অ্যাথলিটদের নাম প্রত্যাহার করা, বিভিন্ন দলের পৌঁছতে দেরী করা কিম্বা গেমস ভিলেজ উপযুক্ত মানে না আসা পর্যন্ত বিভিন্ন দলের হোটেলে অপেক্ষা করতে বাধ্য হওয়া ইত্যাদি নানা কেচ্ছা শোনা গেল। কমনওয়েলথ গেমসের ‘মর্যাদা’ ব’লে আর কিছু থাকল না।
কিন্তু নির্মাণ ক্ষেত্রের স্ক্যাণ্ডালের বিচারে – অর্থাৎ যে শোচনীয় অবস্থার মধ্যে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়েছে তার তুলনায় এইসব স্ক্যাণ্ডাল একদম তুচ্ছই বলা চলে।
বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গেমস ভিলেজে ৭০ জন এবং দিল্লি মেট্রো নির্মাণে ১০৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।কিন্তু বহু শ্রমিক নথিভুক্ত না হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যাটি ঠিক কত তা কেউই বলতে পারবেনা। তবে এটা মোটেই আশ্চর্যজনক কিছু নয় কেননা, “শ্রমিকদের প্রায়শঃ প্রয়োজনীয় হেলমেট, গ্লাভস, মুখোশ ইত্যাদি প্রাথমিক সাবধানতা ছাড়াই কাজ করতে হয়েছে। যদি শ্রমিকদের জুতো দেওয়া হয়েছে তাহলে তার জন্য তাদের মজুরী থেকে তার দাম কেটে নেওয়া হয়েছে। প্রায় সব সাইট থেকেই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। কিণ্তু সেগুলি খুব কম ক্ষেত্রেই কমিশনারকে রিপোর্ট করা হয়েছে। শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, ক্ষতিপূরণের আইনি বিধান হয় অস্বীকার করা হয়েছে অথবা একেবারেই লঘু করে দেখা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার একটা বাক্স ছাড়া চিকিৎসার আর কোন ব্যবস্থা ছিল না বল্লেই চলে।”।(দি হিন্দু, ১/৮/১০)
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা শ্রমিকরা আইনে স্বীকৃত ন্যুনতম মজুরীটুকুও পায়নি। “শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরীর দুই-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক মজুরীতে সব সাইটে খাটিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের থাকতে হয়েছে মানুষের বসবাসের পক্ষে সম্পূর্ণ অনুপযোগী এক জঘন্য অবস্থার মধ্যে”-বলেছেন People’s Union of Democratic Rights-এর পক্ষে শশী সাক্সেনা (দি হিন্দু, ১৬/৮/১০)। বিশেষ ক’রে তারা দিনে ১০/১২ ঘন্টা কাজ করেছে। রাত জেগেও কাজ করতে হয়েছে। ছুটির দিন ব’লে কিছু ছিল না। ওভারটাইম কাজ করার জন্য যৎসামান্য প্রাপ্যটুকু থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। দিনে ১০ ঘন্টা কাজের জন্য ১০০ টাকা এবং ১২ ঘন্টা কাজের জন্য ২০০ টাকা মাত্র দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থাকে চরম নিম্নমানের ব’লে PUDR বর্ণনা করেছে। অপ্রতুল পায়খানা-বাথরুম, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন, ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গুর আঁতুরঘরে তাদের জীবনযাপন করতে হয়েছে। টিন আর প্লাষ্টিকে তৈরি শ্রমিকদের কুঁড়েঘরগুলি শীতে ঠাণ্ডা হিম, গ্রীষ্মে তেতে আগুন - দিল্লির আবহাওয়ায় এই ব্যবস্থা নারকীয় ছাড়া কিই বা বলা যাবে! (টাইমস অফ ইণ্ডিয়া)। ক্রেষ্ট নামে একটি কোম্পানী বিজয় নামের একজন শ্রমিককে নিয়োগ করেছিল যে দিনের বেলা ফুটপাথে গোলাপী টাইলস বসাত আর রাতে সেই টাইলস বসানোর গর্তেই থাকত। দেড়লাখ ভিন্রাজ্যের শ্রমিককে কমনওয়েলথ গেমস প্রকল্পে কাজে লাগানো হয়েছিল। শ্রমিকদের শিশুসন্তানদেরও থাকতে হয়েছিল এই জঘন্য পরিবেশে। তাদের স্কুলে পাঠানোর কোন ব্যবস্থাই ছিল না।
এই ভয়ানক অবস্থা যে কেবলমাত্র কমনওয়েলথ গেমসের ক্ষেত্রেই ছিলো তা নয়, কলকাতায় ৪৩ জন বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকের মৃত্যু সেই শোচনীয় অবস্থাকেই বিস্তৃত করে। (‘শ্রমিক পুড়ছে, ভারত গৌরবে ভাস্বর হচ্ছে’ )
পরিশেষে বলা দরকার, যেমনটা হয়েছিল বেজিঙ অলিম্পিকে, যেমনটা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ঠিক তেমনিভাবেই দিল্লির বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। যেন তারা ছিল সমাজের পক্ষে কোন ক্ষতিকর কীট। ২০০৯-এর ডিসেম্বরে একটি রাতের আস্তানা ভেঙে দিয়ে ২৫০ জন মানুষকে গৃহহীন করা হয়। ২০১০-এর এপ্রিলে ৩৬৫টি নিম্নবর্ণের তামিল পরিবারের একটি বস্তি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বানানো হয় গেমস ভিলেজের জন্য গাড়িপার্ক। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত স্বীকার করেন, “গেমস শেষ হলে আমরা ত্রিশলক্ষ গৃহহীন মানুষ দেখতে পাব”(দি আউটলুক- এপ্রিল,২০১০)।
শ্রমিকশোষণের এই ধারার ভিত্তিতেই ভারতীয় অর্থনীতি ২০১০ আর্থিকবর্ষে ১০.৮% হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। “এর বেসরকারী কোম্পানীগুলি শক্তিশালী। ভারতীয় পুঁজিবাদের চালিকাশক্তি হল লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী। এরা সবাই যেকোন ঝুঁকি নিতে পিছুপা নয়। প্রচন্ড তৎপরতার সঙ্গে লেগেপড়ে থেকে এরা নিজেদের উদ্যোগ ধান্দার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে”(দি ইকনমিস্ট ০২.১০.১০)। আর পুঁজিবাদ ঠিক এটাই পছন্দ করে।
ভারতীয় অর্থনীতি শ্রমিকশ্রেণীর অবস্থার উন্নয়ণের জন্য কিছুই করেনি। কমনওয়েলথ গেমস সাইট বর্বর শ্রমিকশোষণের একটি উদাহরণমাত্র। স্থায়ী কর্মসংস্থান ক্রমশ কমে আসছে, বাড়ছে অস্থায়ী ভিত্তিতে শ্রমিক নিযুক্তি। যেমনটা হয়েছে গুড়গাঁওয়ের হিরো হোন্ডার কারখানায়, অথচ হিরো হোণ্ডার বাইক উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪.৩ মিলিয়ন। ইতোমধ্যে এই অর্থনীতি বস্ত্র ও হীরে শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই ঘটিয়েছে। সরকারীভাবে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১০.৭% - বাস্তবে চিত্রটা আরও ভয়াবহ। রেলষ্টেশন, পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে রিক্সা চালকদের অথবা একটা স্যুভেনির বিক্রির জন্য বেকারদের চীৎকার শুনলেই সেটা বোঝা যায়। এরা হলো সেইসব মানুষ যাদের উৎপাদনপ্রক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত করতে পুঁজিবাদ নিতান্তই অক্ষম।
যেহেতু বাজারে প্রচুর টাকা এসেছে , অতএব ‘স্বচ্ছল’ অর্থনীতিতে যেমন হয় সেইভাবে বেড়ে চলেছে। ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান পরিবহন, ইত্যাদি অত্যাবশ্যক প্রয়োজনগুলো মেটাতে শ্রমিকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। বিনোদনের জন্য খরচের তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতি সরকারীভাবে ১৮% ছুঁয়েছে।
বৃদ্ধির হার উর্দ্ধমুখী হলেও ভারতীয় অর্থনীতি কিন্তু কোনভাবেই পতনশীল পুঁজির প্রকোপ এড়াতে পারছে না।এই পতনশীল অবস্থা অনেককেই মন্দার ভয়ে ভীত ক’রে তুলছে।এই বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান।এরাই সব ২০০৮ সালের আগেকার ফাটকাবাজির অর্থনীতির অংশীদার ছিল।এটাই ২০০৭ সালে ঋণের সঙ্গে জিডিপির অনুপাত ২০ পয়েন্ট বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর পাবলিক ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে জিডিপির ৮৩%। এর ভিত্তি হচ্ছে পরিষেবা ক্ষেত্র, কলসেন্টারগুলির আউটসোর্সিং ইত্যাদি। দেশে শিল্পের ব্যাপক বিস্তার ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত অভাব এখনও প্রবল। সস্তায় ছোট গাড়ি উৎপাদনের মতো শিল্পগুলিই কেবলমাত্র উন্নত হতে পেরেছে যেগুলি আবার একইভাবে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরশীল এবং তা দেশের পরিষেবা ক্ষেত্রের শ্রমিকদের বাজারের কথা ভেবেই করা হচ্ছে। কৃষিতে অবস্থার অবনতি হওয়াতে বহুলোক শহরে যেতে বাধ্য হচ্ছে নতুবা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে । এসব ঘটে যাচ্ছে অর্থনীতিতে বৃদ্ধির বর্তমান উর্দ্ধমুখী হার সত্ত্বেও।(দেখুন: ‘The Indian Boom: Illusion and Reality’) যাই হোক না কেন, কমনওয়েল্থ গেমস্, অলিম্পিক গেমস্ বা বিরাট বিরাট স্টেডিয়াম নির্মাণের মত বড় বড় চোখ ধাঁধানো ব্যাপার ও ঘটনাগুলো প্রায়ই দারুণ ব্যয়বহুল সাদাহাতী পোষার মত হয়ে থাকে। এগুলো কোনভাবেই কোন দেশের সুস্বাস্থ্যের লক্ষ্মণ নয়।
ভারতে শ্রমিকদের ভয়ানক শোচনীয় অবস্থারবর্ণনা পড়ে মানুষ হিসাবে ক্ষোভ ও ঘৃণা চেপে রাখা অসম্ভব । PUDR এবং CRY (Child Relief and You) এ সম্পর্কে বহু তথ্য সংগ্রহ করেছে যার অনেকগুলো বর্তমান রচনায় ব্যবহার করা হয়েছে। যাইহোক এসব অপরাধের উত্তর গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্যে নেই, ভারতে ইতোমধ্যেই গণতন্ত্র বিদ্যমান এবং পুঁজিবাদ শ্রমিকদের পদদলিত করে চলেছে। এর উত্তর পাওয়া যাবেনা বুর্জোয়া আইনি রক্ষাকবচেও - আইনের তোয়াক্কা কেউ করে না। এর উত্তর পাওয়া যাবেনা কোন চ্যারিটি বা সেবামূলক কাজের ভিতেরও – তা সে যতবেশি ব্যক্তিকেই সহায়তা দিক না কেন। ভারতীয় অর্থনীতি কবে শ্রমিকদের কল্যাণ করার মতো বৃদ্ধি অর্জন করবে তার জন্য অপেক্ষা করাও ঠিক হবে না। ভারতীয় অর্থনীতি সারা পৃথিবীর অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারে না।এই বিশ্ব অর্থনীতি ঋণভারে জর্জরিত। ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির মূলেও র্য়েছে এই ঋণই।
এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে পুঁজিবাদ থেকেই এসব অবস্থার সৃষ্টি।এর মূলে রয়েছে মুনাফার জন্য অক্লান্ত প্রাণপন চেষ্টা। পুঁজিবাদকে উৎখাত করেই এসবের অবসান ঘটানো সম্ভব। যতদিন না তা হচ্ছে ততদিন পুঁজির প্রতিটি আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির বিশাল বিশাল শ্রেণি সংগ্রামই কেবল সাময়িকভাবে এগুলোকে খানিকটা প্রশমিত করতে পারে। এরকমটাই করেছিল গুরগাঁওয়ের মোটর কারখানার শ্রমিকেরা, কলকাতার চটকল শ্রমিকেরা এবং এয়ার-ইন্ডিয়ার শ্রমিকেরা এবং কাশ্মীরের সরকারী কর্মচারীরা। ভারতীয় রাষ্ট্র ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম চলা সত্ত্বেও কাশ্মীরের শ্রমিক কর্মচারীরা শ্রেণিসংগ্রামে অটল ছিলেন। ( এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাইট দেখুন)। শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামই হচ্ছে একমাত্র উত্তর।
অ্যালেক্স, ৮ই অক্টোবার ২০১০
আমরা সদ্য কোরিয়া থেকে খবর পেয়েছি যে সোস্যালিস্ট ওয়ারকারস’ লীগ অফ কোরিয়া/ SAnorun’র আটজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কুখ্যাত ‘রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা আইনে’[i] বিচারাধীন অবস্থায় আটক রাখা হয়েছে। আগামী ২৭শে জানুয়ারী তাদের সাজা ঘোষণা করার কথা।
শিক্ষা, সরকারী অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় দশলক্ষ শ্রমিক ৩০শে জুন(২০১১) ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন?
(নিম্নলিখিত প্রবন্ধটি (World Revolution) ওয়ার্ল্ড রিভলিউসন পত্রিকার৩৫৬ নং সংখ্যার বঙ্গানুবাদ।)