প্রলেতারিয় বিপ্লবের স্বরূপ

The Nature Of The Proletarian Revolution

সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন উৎপাদনসম্পর্কের প্রতিনিধিত্বকারীশ্রেণি সমস্ত সমাজের উপর নিজের রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করে। প্রলেতারিয় বিপ্লবের ক্ষেত্রেও এই সাধারন সূত্র প্রযোজ্য,যদিও তার অন্তবর্স্তু(content) ও শর্তাবলী(conditions)অতীতের সমস্ত বিপ্লব থেকে মৌলিক ভাবে পৃথক । অতীতের বিপ্লবগুলো একটা শোষকশ্রেণীর আধিপত্যের বদলে আর একটা শোষকশ্রেণীর আধিপত্য
কায়েম করেছে ।কারণ ঐসব বিপ্লবের মাধ্যমে অভাবভিত্তিক একটা উৎপাদন ব্যবস্থার জায়গায় আর একটা নতুন অভাবভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্পত্তি ও সম্পত্তি-সম্পর্কের একটা রূপের বদলে অন্য একটা রূপের এবং একধরনের বিশেষ অধিকারের জায়গায় অন্য ধরনের বিশেষাধিকার প্রতিষ্ঠার ভিতর দিয়েই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর সম্পূর্ণ বিপরীতে প্রলেতারিয় বিপ্লবের লক্ষ্য হল অভাবভিত্তিক উৎপাদন সম্পর্কের বদলে প্রাচুরযভিত্তিক উৎপাদনসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা । আর তাই এই বিপ্লব সমস্ত
রকমের সম্পত্তি,শোষণ ও বিশেষাধিকারের সম্পূর্ণ অবলুপ্তিকেই সূচিত করে । উপরোক্ত পার্থক্যের ফলে প্রলেতারিয় বিপ্লবের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে । প্রলেতারিয় বিপ্লবকে জয়যুক্ত করতে হলে শ্রমিকশ্রেণীর অবশ্যই এই সব বৈশিষ্ট অনুধাবন করা দরকার :

ক) ইতিহাসে এই প্রথম এটা হচ্ছে এমন এক বিপ্লব যাকে হতে হবে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী। দেশের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে বিশ্ববিপ্লবের জোয়ারে পরিণত হতে না পারলে এই বিপ্লব জয়যুক্ত হতে পারেনা । কারণ ব্যক্তিগত মালিকানা উচ্ছেদ করতে হলে শ্রমিকশ্রেণীকে অবশ্যই তার স্থানীয়,আঞ্চলিক,রাষ্ট্রীয় সমস্ত রূপের সম্পূর্ণ অবলুপ্তি ঘটাতে হবে । সারা দুনিয়া জুড়ে পুঁজির একই ধরণের আধিপত্য থাকার ফলে এই কাজ একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ও সম্ভব হয়ে উঠেছে।
খ)ইতিহাসে এই প্রথম একই শ্রেণী একই সঙ্গে বিপ্লবী এবং শোষিত দুটোই। আর তাই এই নতুন বিপ্লবী শ্রেণী পুরোণ সমাজের গর্ভেই অজির্ত কোনরকম অর্থনৈতিক ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পথে অগ্রসর হতে পারেনা । শ্রমিকশ্রেণীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে দাঁড়ায় অর্থাৎ অতীতের বিপ্লবী কর্মকান্ডের সম্পূর্ণ বিপরীতে উৎক্রমনশীল (transitional) (অর্থাৎ যে পযায়ে পুরোন উৎপাদন সর্ম্পক গুলো ধ্বংস করে নতুন সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কাজ চলে ) পযায়ের আগেই শ্রমিকশ্রেণীকে অতি অবশ্যই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের কাজটি সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে ।
গ) এই প্রথম সমাজের একটি শ্রেণী একই সঙ্গে বিপ্লবী এবং শোষিত হওয়ার তাৎপয হচ্ছে এই যে , শোষিত হিসেবে সংগ্রাম কখনোই বিপ্লবী হিসেবে সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন বা তার বিপরীত হতে পারেনা । শোষিতশ্রেণী হিসেবে সংগ্রামের ক্রমাগত গভীরতর ও ব্যাপকতর হয়ে ওঠার ওপরেই নির্ভর করছে প্রলেতারিয়েতের বিপ্লবী সংগ্রামের বিকাশ। প্রুধোঁবাদ(Proudhonism) এবং অন্যান্য পেটি বুজোর্য়া সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মার্কসবাদ শুরু থেকেই এই সত্যটি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করে এসেছে ।