Communist Internationalist - 2011

ওবামা প্রশাসনের বিদেশনীতি - বন্ধুত্বের মুষ্টি‍ ! (Obama Administration's Foreign Policy—the fist of friendship)

 আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ বর্তমানে শত্রুদেশএবং তথাকথিত মিত্রদেশ উভয়দিক থেকেই একইরকমভাবে সমস্যায় জর্জরিত। বুশ প্রশাসনের একলা চলো নীতির পরবর্‍তী পর্ষায়ে ওবামা নির্বাচিত হওয়ায় ধরে নেওয়া হয়েছিল যে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে তার অভিযানের কলাকৌশলের ভিত আরো মজবুত করতে কিছুটা বিলম্ব করার নীতিই নেবে। ওবামার শান্তিকামী ইমেজ এবং তার প্রশাসনের সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের দৃষ্টিভঙ্গী আর কূটনৈতিক প্রকৌশলগুলি আসলে ছিল দ্বিতীয় সারির প্রধান শক্তিগুলিকে নিজের মিলিটারী শক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করে শত্রুদেশগুলিকে প্রতিহত করার পদক্ষেপমাত্র। ইন্টারন্যাশনাল রিভিউয়ের ১৩৮ নং সংখ্যায় বলা হচ্ছে, আমেরিকার মূল লক্ষ্যটি আসলে মিলিটারি শক্তির মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতার নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার করা। তাই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে উত্তরোত্তর কূটনৈতিক সম্পর্‍ক স্থাপনের জন্য ওবামার বন্ধুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলি তাৎপর্ষপূর্ণভাবে এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিলম্বের লক্ষ্যেই পরিকল্পিত হয়েছিল যাতে আগামীদিনে যে কারোর যে কোন বিষয়ে অনিবার্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করা যায়। বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী প্রয়োজনেই আমেরিকাকে বিভিন্ন দেশে তার সামরিক বাহিনীকে ছড়িয়ে রাখতে হয়েছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ করতে করতে তার বাহিনী এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে যে তার পক্ষে এখনই আর কোন নতুন যুদ্ধে লড়া সম্ভব নয়। অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্বের মীমাংসা করা, সহযোগিতা ও কূটনৈতিক পদ্ধতির উপর তাই   ঢাকঢোল বাজিয়ে খুব জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে এটা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ওবামার এসব গালভরা বুলি ও নীতি আরো বেশি বেশি করে বুশ প্রশাসনের নীতির মতোই হয়ে উঠছে। বরং সেগুলিকে আরো ক্ষুরধার, আরো কার্ষকরী ও আরো ব্যাপক করে তোলা হয়েছে যাতে বর্তমানের  উত্তরোত্তর উত্তেজিত পরিস্থিতিকে  সঠিকভাবে মোকাবিলা করা যায়।

যদি কোন ঘটনা এই নীতিগুলির আসল উদ্দেশ্য প্রমান বা স্পষ্ট করতে পারে তবে তা হলো হাইতিতে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরেই আমেরিকার হাইতি আগ্রাসন। যেখানে আমেরিকার পেছনে লাগা সবকটি দেশের সরকার এবং তাদের এজেন্টদের ছাপিয়ে আমেরিকা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই ঘটনা বিশ্বের তাবৎ শক্তিগুলির প্রতি আমেরিকার পাঠানো এক ভয়াবহ বার্তা।
ইরাকে সেনা প্রত্যাহার স্থগিত রাখা এবং আফগানিস্তানে আরও ত্রিশ হাজার সেনা মোতায়েন ছাড়াও আরো অনেক ঘটনা আছে যেগুলি আমেরিকার আধিপত্য আরো বেশি মজবুত করার প্রয়োজনীয়তা ও তার উপলব্ধিকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ওবামার নীতিগুলি, যেগুলিকে বুশের একপেশে নীতি থেকে আলাদা বলে দাবী করা হচ্ছে সেগুলি হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। A Blueprint For Pursuing The World We Seek”-নাম দিয়ে ঐ নীতিগুলির ব্যাখ্যা আরম্ভ হয়েছে ওবামারই  উক্তি দিয়ে- অন্যদের মধ্যে ভয় ধরানোর ক্ষমতা দিয়ে আমাদের দীর্‍ঘমেয়াদী নিরাপত্তা আসবে না; সেটা আসবে অন্যদের আশা-আকাঙ্খাগুলি পূরণ করার মাধ্যমে। এহেন বক্তব্যের সার কথাটি হলো চীন, ভারত এবং রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্‍ক স্থাপন করা। কিন্তু রিপোর্টে আবার সাইবার অপরাধের মতো বিষয়টির ওপর দারুন গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এইটা  চীন একটি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। সম্প্রতি আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্খা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্‍কের ব্যাপারে ভারতকে আমেরিকা রীতিমতো কড়াভাবে সমালোচনা করেছে। এর ফলে উল্টো ফলই ফলেছে। ভারতীয় বুর্জোয়ামহল চটে গিয়ে সান্ত্বনা খুঁজতে রাশিয়ার দ্বারস্থ হয়। আবার ককেশাস অঞ্চলে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে তীব্র উত্তেজনা রয়েছে। কিরঘিজস্তানে চুড়ান্ত অস্থিরতার সময় যখন সরকারের পতন ঘটে তখন সেখানে দুইপক্ষই তীব্রভাবে জ্বলে ওঠে। এই কিরঘিজস্তানে দুইপক্ষেরই বিমানঘাঁটিও রয়েছে।
বুশ জমানার নীতিগুলির সাথে মূলগত ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই, ওবামার এই রিপোর্টেও আমেরিকার একতরফা বসিজ্‌ম চালিয়ে যাবার অধিকার কায়েম রাখার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে যে কাউকে আগেভাগে আক্রমণ করার বিধ্বংসী নীতিকেও বাতিল করা হয়নি। অর্থাৎআমেরিকা সর্বত্র সামরিক প্রভুত্ব বজায় রাখবে এবং এজন্যই সবার গণতান্ত্রিক ও মানবিক(!) অধিকার প্রতিষ্ঠার বাণী আউড়ে যাবে।
 আসলে এই বাণী চীন, ইরাক ও উত্তর কোরিয়াকে দেখে নেবার ইঙ্গিত। এই নীতিগুলি বুশের সেই পুরনো নীতিগুলি অবশ্য নয়, বরং পরিবর্তিত অস্থির পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য পুরনো নীতিগুলিরই পরিশোধিত রূপ। এই নীতিরই ছত্রছায়ায় গত বছরের শেষে আমেরিকার Central Command-এর প্রধান জেনারেল পেট্রিয়াস একটি আদেশে সই করেন যাতে আরো নিবিড়ভাবে , ব্যাপকতরমাত্রায় অন্যদের বিরুদ্ধে গোপন আক্রমন চালানো যায়। এসবের বিশদ তথ্য অবশ্য পাওয়া যাবেনা। তবে ২৫শে মে, ২০১০ তারিখের দি গার্ডিয়ান পত্রিকায় লেখা হয়েছে- আমেরিকান সৈন্যরা বর্তমানে ইরান, ইয়েমেন, সিবিয়া, সোমালিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় রয়েছে। ইরান স্পষ্টতঃ অভিযোগ জানিয়েছে যে ঐ এলাকায় অস্থিরতা উস্কে দেবার জন্য আমেরিকা ও ব্রিটেন বিশেষ বাহিনী পাঠাচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট ৫ই জুন, ২০১০ তারিখে জানাচ্ছে যে বর্তমানে ৭৫টি দেশে আমেরিকান সৈন্য নিয়োজিত রয়েছে।অথচ গত বছর ওবামা যখন দায়িত্বে আসেন তখন ৬০টি দেশে আমেরিকান সৈন্য সক্রিয় ছিল। বিশেষ অভিযানের জন্য ওবামা বাজেট বৃদ্ধি করেছেন এবং সেনাকর্তারা হোয়াইট হাউসে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশী হাজিরা দিচ্ছেন।জনৈক অফিসার জানাচ্ছেন, এই সেনাকর্তারা এখন কথা কম বলে কাজ বেশি করছেন। আর এই উদ্দেশ্যেও লোহিত সাগর, উপসাগরীয় অঞ্চল ও ভারত মহাসাগরের কোথাও কোথাও ব্যাপকভাবে সেনাশক্তি ও ঘাটি এলাকা বাড়িয়ে আমেরিকার ৫ম নৌবহরের অবস্থান ও অভিযানের ক্ষেত্রকে আরো সুরক্ষিত করার কাজ সবে শুরু হয়েছে।                                  
কূটনীতিযুদ্ধের অন্যরূপ(Diplomacy as war)
র‍্যামসফেল্ডের পদাঙ্ক অনুসরণ ক'রে গোপন অভিযানগুলিকে প্রকাশিত গোপন অভিযানে রূপান্তর করাটা আসলে শত্রুদেশগুলির প্রতি আমেরিকার যুদ্ধঘোষনারই অংশ এবং মিত্রদেশগুলির প্রতি তা সতর্কবার্তাও বটে। আমেরিকার প্রশাসন খোলাখুলিই এটা বলেছে।এই একই পদ্ধতিতে ওবামা প্রশাসন কূটনীতিকেও ব্যবহার করছে। এই কূটনীতি আসলে যুদ্ধের একটা দিক, সাম্রাজ্যবাদের একটা দিক। বিপুল জনমতে নির্বাচিত জাপানের প্রধানমন্ত্রী যখন কাঁধ থেকে আমেরিকার জোঁয়াল নামিয়ে জাপানের জন্য আরো স্বাধীনভাবে চলাফেরার প্রস্তাব দিলেন, জাপানে আমেরিকার বিমানঘাঁটি বন্ধের কথা বললেন, তখন আমেরিকান প্রশাসন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল- বিশেষ করে জাপানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ক'রে তোলার বিষয়ে। জাপানী প্রধানমন্ত্রী ইউকিও হাতিয়াসকে ওয়াশিংটন সফরকালে জনসমক্ষে হেয় করা হয়। সংবাদপত্রের খবর ওবামা তাঁকে নাকি বলেছেন, তুমি সময়ের আগে দৌড়াতে চাইছ( সোজা কথায় ক্ষমতার বাইরে গিয়েনিজের মতো চলতে চাইছ)। আমেরিকার কূটনৈতিক দাপটে, গালিগালাজপূর্ণ অপমানে আর জাপানসহ এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ভয়াবহ পরিণতির কথা ভেবে হাতিয়াস একদম চুপসে যান এবং ক্ষমা চেয়ে পুরনো পথে ফিরে আসেন। গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মহিমা তাহলে বোঝাই গেল।
জাপানের মতোই অবস্থা হয় ব্রাজিল ও তুরস্কের। ইরানের ইউরেনিয়াম তুরস্কে আনার জন্য ইরানের সঙ্গে তাদের যে চুক্তি হয় তার জন্য তাদের তীব্র সমালোচনা করে আমেরিকা। অথচ চুক্তিটি UN-এর সংশ্লিষ্ট খসড়া পরিকল্পনা মেনেই হয়েছিল এবং ঐ খসড়া পরিকল্পনাটি মেনে নেওয়ার জন্য আমেরিকা ও তার অনুরাগীরা বারেবারেই ইরানকে অনুরোধ করেছিল। আন্তর্জাতিক  সহযোগিতার হাত বলতে কি তাহলে এটাই বোঝায়? ব্রাজিল ও তুরস্ককে এই যে বাধা দেওয়া হল তার পিছনে কারণটি কী? কারণটি হলো ব্রাজিল ও তুরস্ক দুটি দেশই ইরানের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত UN প্যাকেজের বিরোধিতা করেছিল যে প্যাকেজটি রূপায়িত করতে আমেরিকা পাঁচমাস ধরে চেষ্টা করছিল। ঐ প্যাকেজটিতে কী আছে? আছে অর্থনৈতিক অবরোধ, অস্ত্র সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা, এবং UN-এর সদস্যদের প্রতি ইরানের কাজকর্মের দিকে নজর রাখার জন্য সতর্কবার্তা; ইরানের  জাতীয় জাহাজ নির্মাণ কারখানা, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ বিপ্লবী প্রহরীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য বস্তুগুলিকে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচীকেও আক্রমণের নিশানা করা হয়। এছাড়াও আমেরিকাকে সাহায্য করতে ইউরোপীয় শক্তিগুলির আরো বেশী অনুদান এবং মিলিটারী শক্তি না দেওয়ার জন্য, আমেরিকাকে আরো   বেশী সমর্‍থন না করার জন্য ইউরোপের দেশগুলিকে কূটনৈতিক রাস্তায় যথেচ্ছ অপমানজনক সমালোচনা করা হয়। কিন্তু সেই সাহায্যের খুব বেশি আশা নেই কেননা এরা সবাই একে অন্যের ঘাড় মটকাবার চেষ্টা করছে।
 
সমস্যা,সমস্যা  আর সমস্যা (Trouble, trouble and trouble)
আফগানিস্তান, ইরাক এবং পাকিস্তানে যুদ্ধ ছাড়াও ইরান, তুরস্ক এবং ইজরায়েল নিয়েও সমস্যা বেড়েই চলেছে। ১৯৮৯-তে রাশিয়ান ব্লকের পতনের পর একাধিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পরিস্থিতিতে ইজরায়েলের সঙ্গে কলহ সম্ভবতঃ সবচাইতে শঙ্কাজনক। অধিকৃত অঞ্চলে নতুন ক'রে ইহুদি বসতি না গড়ার জন্য আমেরিকার পরামর্শ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করার পর তথাকথিত 'গাজার জন্য সাহায্যসামগ্রী' বহনকারী মাভি মামারা জাহাজে ইজরায়েলী সেনাবাহিনীর আক্রমণ ও হত্যাকান্ডের ফলে আমেরিকা ইজরায়েলী সম্পর্কের মধ্যে আরও অবনতি ঘটেছে। প্রচলিত পদ্ধতি না মেনে আমেরিকান কূটনীতি এটা দেখাতে চেয়েছিল যে আমেরিকা 'ছয় জাহাজের ঐ কনভয়ের ব্যাপারে সংযত থাকার জন্য' ইজরায়েলকে সতর্ক ক'রে দিয়েছিল (দি অবজার্ভার,০৭.০৬ ১০)। আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হয়েছিল " আমরা এব্যাপারে ইজরায়েলের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেছি; আমরা সতর্কতা ও সংযত আচরণের ওপর জোর দিয়েছি।" আমেরিকান কূটনীতি এটা বোঝাতে চেষ্টা করেছিল যে ছয় জাহাজের ঐ কনভয়টিতে আক্রমণ না করতে তারা ইজরায়েলের সঙ্গে বারেবারে যোগাযোগও করতে চেষ্টা করেছিল। তাদের কথায়, আমরা জাহাজটির ব্যাপারে ইজরায়েলের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেছিলাম এবং তাদের সংযত ও সতর্ক হতে বলেছিলাম। ইজরায়েলে আমেরিকার একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত (৫ই জুন ২০১০ 'ওয়াসিংটন পোস্ট')'র মতে, ইজরায়েল আমেরিকার এমন একটি মিত্র যে সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে হাঁটছে। এইভাবে তুরস্কও মনে হয় সাধারণভাবে বিশ্বজুড়ে এবং বিশেষক'রে বেশি বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা লাগামছাড়া সাম্রাজ্যবাদী হুটোপুটির ঐ এলাকায় আমেরিকা থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে আরো সংহত করছে। ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে আমেরিকান সৈন্যদের তুরস্ক তার এলাকার মধ্যে যাতায়াত করতে না দিয়ে ইরান ও সিরিয়ার তুলনায় অনেক বেশী স্বাধীনপথে চলার ক্ষমতা প্রদর্শণ করছে। প্যালেস্টাইনের প্রতি সহানুভূতিশীল দুনিয়ায় তুর্কি এখন একটা ঠতি শক্তিধর রাষ্ট্রের ভূমিকা পালনের চেষ্টা ক'রে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে আর তাই আমেরিকান দাদাগিরি ও দালালির ফলে তৈরি তুর্কি-ইজরায়েল মিত্রতা সম্পর্কেরও সলিল সমাধি ঘটার সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে, বিশেষত:   মাভি মামারা জাহাজে কিছু তুর্কি নাগরিকের মৃত্যুর পর ব্যাপারটা তেমনই দেখাচ্ছে।
 
এছাড়াও রয়েছে আফ্রিকার হর্ণ অঞ্চল ও আশেপাশের 'সঙ্কটাকীর্ণ' পরিস্থিতি। পৃথিবীর চরম উত্তপ্ত ও বিষ্ফোরক এলাকাগুলোর অন্যতম একটি হয়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। ইথিওপিয়ান মিলিটারি শক্তিকে চাঙ্গা ক'রে তোলার বৃটিশ-আমেরিকান সক্রিয়তা তাদেরই বিপদ বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে সমগ্র এলাকাটি অস্থির হয়ে রয়েছে আর আল কায়দা ও অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ইথিওপিয়া, ইরিট্রিয়া, সুদান ও সোমালিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো পুরোমাত্রায় এগুলোর সুযোগ নিয়ে নিজ নিজ শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উপসাগরের অন্যদিকে য়েমেন আমেরিকার কাছে বেশি বেশি ক'রে যন্ত্রণাদায়ক ক্ষত হয়ে উঠছে।ইয়েমেনের ব্যাপারেআমেরিকা ও বৃটেনের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরো সঙ্কটাকীর্ণ ক'রে তুলছে; এটাই হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মৌলবাদী ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর জন্ম ও বেড়ে ওঠার উর্বরা জমি। এইসব গোষ্ঠী আফ্রিকার হর্ণ অঞ্চল, উত্তর কেনিয়া, উপসাগরীয় এলাকা এবং সৌদি আরবেও সন্ত্রাসবাদী ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত এলাকার পরিস্থিতিএতটাই বিশৃঙখল হয়ে উঠেছে যে আমেরিকান বড়দার পক্ষেও তা নিয়ন্ত্রণ করা মুসকিল হয়ে পড়ছে।   
 
এসব সমস্যা ছাড়াও আরও সমস্যা রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি রণতরী উত্তর কোরিয়া সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। এই ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এবার ছোট ছোট শক্তিগুলিও আমেরিকান ধর্মবাপকে কোণঠাসা করতে উৎসাহী হয়ে উঠবে। আমেরিকার 'সহযোগীরা'ও আর ততটা বিশ্বাসযোগ্য থাকতে পারবেনা কারণ তারাও তাদের নিজস্ব স্বার্থ নিয়েই মশগুল থাকবে। ক্রমবর্ধমান সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব সংঘাতের এই পুরোপুরি অযৌক্তিক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে নানারকম ঘটনা ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং আমেরিকার দুশ্চিন্তাকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। একটা বিষয় নিশ্চিত যে আমেরিকা 'শান্তি ও সুসম্পর্ক স্থাপনের' বুলিলে এর মোকাবিলা করতে পারবেনা বা ওবামা যে মানবিকতার ভাবমূর্তি দেখাতে তৎপর তার মুখোশও খুলে যাবে। আমেরিকা পাশবিক সামরিক শক্তি ও যুদ্ধ দিয়েই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে বাধ্য হবে আর পরিস্থিতিকে করে তুলবে আরো বিপজ্জনক; বিশ্বজোড়া সাম্রাজ্যবাদীদ্বন্দ্ব সংঘাত ব্যাপকতর ও তীব্রতর হয়ে উঠবে।
বেবুন(Baboon),০৯.০৬২০১০
ওয়ার্ল্ড রিভোল্যুশন, সংখ্যা ৩৩৫

কমনওয়েলথ গেমস ও শ্রমিক-শোষণের তীব্রতার নগ্নরূপ

কমনওয়েলথ গেমস ক্রীড়াঙ্গনে খেলোয়াড়দের থাকার ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক স্ক্যাণ্ডাল ছড়িয়েছে। প্রখ্যাত অ্যাথলিটদের নাম প্রত্যাহার করা, বিভিন্ন দলের পৌঁছতে দেরী করা কিম্বা গেমস ভিলেজ উপযুক্ত মানে না আসা পর্যন্ত বিভিন্ন দলের হোটেলে অপেক্ষা করতে বাধ্য হওয়া ইত্যাদি নানা কেচ্ছা শোনা গেল। কমনওয়েলথ গেমসের মর্যাদালে আর কিছু থাকল না।

কিন্তু নির্মাণ ক্ষেত্রের স্ক্যাণ্ডালের বিচারে অর্থাৎ যে শোচনীয় অবস্থার মধ্যে শ্রমিকদের কাজ করতে হয়েছে তার তুলনায় এইসব স্ক্যাণ্ডাল একদম তুচ্ছই বলা চলে।

বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গেমস ভিলেজে ৭০ জন এবং দিল্লি মেট্রো নির্মাণে ১০৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।কিন্তু বহু শ্রমিক নথিভুক্ত না হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যাটি ঠিক কত তা কেউই বলতে পারবেনা। তবে এটা মোটেই আশ্চর্যজনক কিছু নয় কেননা, শ্রমিকদের প্রায়শঃ প্রয়োজনীয় হেলমেট, গ্লাভস, মুখোশ ইত্যাদি প্রাথমিক সাবধানতা ছাড়াই কাজ করতে হয়েছে। যদি শ্রমিকদের জুতো দেওয়া হয়েছে তাহলে তার জন্য তাদের মজুরী থেকে তার দাম কেটে নেওয়া হয়েছে। প্রায় সব সাইট থেকেই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। কিণ্তু সেগুলি খুব কম ক্ষেত্রেই কমিশনারকে রিপোর্ট করা হয়েছে। শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, ক্ষতিপূরণের আইনি বিধান হয় অস্বীকার করা হয়েছে অথবা একেবারেই লঘু করে দেখা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার একটা বাক্স ছাড়া চিকিৎসার আর কোন ব্যবস্থা ছিল না বল্লেই চলে।।(দি হিন্দু, ১/৮/১০) 

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা শ্রমিকরা আইনে স্বীকৃত ন্যুনতম মজুরীটুকুও পায়নি। শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরীর দুই-তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক মজুরীতে সব সাইটে খাটিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের থাকতে হয়েছে মানুষের বসবাসের পক্ষে সম্পূর্ণ অনুপযোগী এক জঘন্য অবস্থার মধ্যে-বলেছেন People’s Union of Democratic Rights-এর পক্ষে শশী সাক্সেনা (দি হিন্দু, ১৬/৮/১০)। বিশেষ করে তারা দিনে ১০/১২ ঘন্টা কাজ করেছে। রাত জেগেও কাজ করতে হয়েছে। ছুটির দিন বলে কিছু ছিল না। ওভারটাইম কাজ করার জন্য যৎসামান্য প্রাপ্যটুকু থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। দিনে ১০ ঘন্টা কাজের জন্য ১০০ টাকা এবং ১২ ঘন্টা কাজের জন্য ২০০ টাকা মাত্র দেওয়া হয়েছে।

শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থাকে চরম নিম্নমানের বলে PUDR বর্ণনা করেছে। অপ্রতুল পায়খানা-বাথরুম, অস্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন, ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গুর আঁতুরঘরে তাদের জীবনযাপন করতে হয়েছে। টিন আর প্লাষ্টিকে তৈরি শ্রমিকদের কুঁড়েঘরগুলি শীতে ঠাণ্ডা হিম, গ্রীষ্মে তেতে আগুন - দিল্লির আবহাওয়ায় এই ব্যবস্থা নারকীয় ছাড়া কিই বা বলা যাবে! (টাইমস অফ ইণ্ডিয়া)। ক্রেষ্ট নামে একটি কোম্পানী বিজয় নামের একজন শ্রমিককে নিয়োগ করেছিল যে দিনের বেলা ফুটপাথে গোলাপী টাইলস বসাত আর রাতে সেই টাইলস বসানোর গর্তেই থাকত। দেড়লাখ ভিন্‌রাজ্যের শ্রমিককে কমনওয়েলথ গেমস প্রকল্পে কাজে লাগানো হয়েছিল। শ্রমিকদের শিশুসন্তানদেরও থাকতে হয়েছিল এই জঘন্য পরিবেশে। তাদের স্কুলে পাঠানোর কোন ব্যবস্থাই ছিল না।

এই ভয়ানক অবস্থা যে কেবলমাত্র কমনওয়েলথ গেমসের ক্ষেত্রেই ছিলো তা নয়, কলকাতায় ৪৩ জন বস্ত্রশিল্পের শ্রমিকের মৃত্যু সেই শোচনীয় অবস্থাকেই বিস্তৃত করে। (শ্রমিক পুড়ছে, ভারত গৌরবে ভাস্বর হচ্ছে )

পরিশেষে বলা দরকার, যেমনটা হয়েছিল বেজিঙ অলিম্পিকে, যেমনটা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ঠিক তেমনিভাবেই দিল্লির বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। যেন তারা ছিল সমাজের পক্ষে কোন ক্ষতিকর কীট। ২০০৯-এর ডিসেম্বরে একটি রাতের আস্তানা ভেঙে দিয়ে ২৫০ জন মানুষকে গৃহহীন করা হয়। ২০১০-এর এপ্রিলে ৩৬৫টি নিম্নবর্ণের তামিল পরিবারের একটি বস্তি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে বানানো হয় গেমস ভিলেজের জন্য গাড়িপার্ক। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত স্বীকার করেন, গেমস শেষ হলে আমরা ত্রিশলক্ষ গৃহহীন মানুষ দেখতে পাব(দি আউটলুক- এপ্রিল,২০১০)।      

ভারতীয় অর্থনীতি : ক্যান্সার রোগগ্রস্ত তার বৃদ্ধি

 

শ্রমিকশোষণের এই ধারার ভিত্তিতেই ভারতীয় অর্থনীতি ২০১০ আর্থিকবর্ষে ১০.৮% হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। এর বেসরকারী কোম্পানীগুলি শক্তিশালী। ভারতীয় পুঁজিবাদের চালিকাশক্তি হল লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী। এরা সবাই যেকোন ঝুঁকি নিতে পিছুপা নয়। প্রচন্ড তৎপরতার সঙ্গে লেগেপড়ে থেকে এরা নিজেদের উদ্যোগ ধান্দার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে(দি ইকনমিস্ট ০২.১০.১০)। আর পুঁজিবাদ ঠিক এটাই পছন্দ করে।

ভারতীয় অর্থনীতি শ্রমিকশ্রেণীর অবস্থার উন্নয়ণের জন্য কিছুই করেনি। কমনওয়েলথ গেমস সাইট বর্বর শ্রমিকশোষণের একটি উদাহরণমাত্র। স্থায়ী কর্মসংস্থান ক্রমশ কমে আসছে, বাড়ছে অস্থায়ী ভিত্তিতে শ্রমিক নিযুক্তি। যেমনটা হয়েছে গুড়গাঁওয়ের হিরো হোন্ডার কারখানায়, অথচ হিরো হোণ্ডার বাইক উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪.৩ মিলিয়ন। ইতোমধ্যে এই অর্থনীতি বস্ত্র ও হীরে শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই ঘটিয়েছে। সরকারীভাবে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১০.৭% - বাস্তবে চিত্রটা আরও ভয়াবহ। রেলষ্টেশন, পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে রিক্সা চালকদের অথবা একটা স্যুভেনির বিক্রির জন্য বেকারদের চীৎকার শুনলেই সেটা বোঝা যায়। এরা হলো সেইসব মানুষ যাদের উৎপাদনপ্রক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত করতে পুঁজিবাদ নিতান্তই অক্ষম।

যেহেতু বাজারে প্রচুর টাকা এসেছে , অতএব স্বচ্ছল অর্থনীতিতে যেমন হয় সেইভাবে বেড়ে চলেছে। ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান পরিবহন,  ইত্যাদি অত্যাবশ্যক প্রয়োজনগুলো মেটাতে শ্রমিকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। বিনোদনের জন্য খরচের তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতি সরকারীভাবে ১৮% ছুঁয়েছে।

বৃদ্ধির হার উর্দ্ধমুখী হলেও ভারতীয় অর্থনীতি কিন্তু কোনভাবেই পতনশীল পুঁজির প্রকোপ এড়াতে পারছে না।এই পতনশীল অবস্থা অনেককেই মন্দার ভয়ে ভীত করে তুলছে।এই বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বিদেশী প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান।এরাই সব ২০০৮ সালের আগেকার ফাটকাবাজির অর্থনীতির অংশীদার ছিল।এটাই ২০০৭ সালে ঋণের সঙ্গে জিডিপির অনুপাত ২০ পয়েন্ট বাড়িয়ে দিয়েছিল। আর পাবলিক ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে জিডিপির ৮৩%। এর ভিত্তি হচ্ছে পরিষেবা ক্ষেত্র, কলসেন্টারগুলির আউটসোর্সিং ইত্যাদি। দেশে শিল্পের ব্যাপক বিস্তার ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়  পরিকাঠামোগত অভাব এখনও প্রবল। সস্তায় ছোট গাড়ি উৎপাদনের মতো শিল্পগুলিই কেবলমাত্র উন্নত হতে পেরেছে যেগুলি আবার একইভাবে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরশীল এবং তা দেশের পরিষেবা ক্ষেত্রের শ্রমিকদের বাজারের কথা ভেবেই করা হচ্ছে। কৃষিতে অবস্থার অবনতি হওয়াতে বহুলোক শহরে যেতে বাধ্য হচ্ছে নতুবা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে । এসব ঘটে যাচ্ছে অর্থনীতিতে বৃদ্ধির বর্তমান উর্দ্ধমুখী হার সত্ত্বেও।(দেখুন: ‘The Indian Boom: Illusion and Reality’) যাই হোক না কেন, কমনওয়েল্থ গেমস্‌, অলিম্পিক গেমস্‌ বা বিরাট বিরাট স্টেডিয়াম নির্মাণের মত বড় বড় চোখ ধাঁধানো ব্যাপার ও ঘটনাগুলো প্রায়ই দারুণ ব্যয়বহুল সাদাহাতী পোষার মত হয়ে থাকে। এগুলো কোনভাবেই কোন দেশের সুস্বাস্থ্যের লক্ষ্মণ নয়।

একমাত্র উত্তর : শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রাম

 

ভারতে শ্রমিকদের ভয়ানক শোচনীয় অবস্থারবর্ণনা  পড়ে মানুষ হিসাবে ক্ষোভ ও ঘৃণা চেপে রাখা অসম্ভব । PUDR এবং CRY (Child Relief and You) এ সম্পর্কে বহু তথ্য সংগ্রহ করেছে যার অনেকগুলো বর্তমান রচনায় ব্যবহার করা হয়েছে। যাইহোক এসব অপরাধের উত্তর গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্যে নেই, ভারতে ইতোমধ্যেই গণতন্ত্র বিদ্যমান এবং  পুঁজিবাদ শ্রমিকদের পদদলিত করে চলেছে। এর উত্তর পাওয়া যাবেনা বুর্জোয়া আইনি রক্ষাকবচেও - আইনের তোয়াক্কা কেউ করে না। এর উত্তর পাওয়া যাবেনা কোন চ্যারিটি বা সেবামূলক কাজের ভিতেরও তা সে যতবেশি ব্যক্তিকেই সহায়তা দিক না কেন। ভারতীয় অর্থনীতি কবে শ্রমিকদের কল্যাণ করার মতো বৃদ্ধি অর্জন করবে তার জন্য অপেক্ষা করাও ঠিক হবে না। ভারতীয় অর্থনীতি সারা পৃথিবীর অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারে না।এই বিশ্ব অর্থনীতি ঋণভারে জর্জরিত। ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির মূলেও র‍্য়েছে এই ঋণই।

এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে পুঁজিবাদ থেকেই এসব অবস্থার সৃষ্টি।এর মূলে রয়েছে মুনাফার জন্য অক্লান্ত প্রাণপন চেষ্টা। পুঁজিবাদকে উৎখাত করেই এসবের অবসান ঘটানো সম্ভব। যতদিন না তা হচ্ছে ততদিন পুঁজির প্রতিটি আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির বিশাল বিশাল শ্রেণি সংগ্রামই কেবল সাময়িকভাবে এগুলোকে খানিকটা প্রশমিত করতে পারে। এরকমটাই করেছিল গুরগাঁওয়ের মোটর কারখানার শ্রমিকেরা, কলকাতার চটকল শ্রমিকেরা এবং এয়ার-ইন্ডিয়ার শ্রমিকেরা এবং কাশ্মীরের সরকারী কর্মচারীরা। ভারতীয় রাষ্ট্র ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম চলা সত্ত্বেও কাশ্মীরের শ্রমিক কর্মচারীরা শ্রেণিসংগ্রামে অটল ছিলেন। ( এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাইট দেখুন)। শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামই হচ্ছে একমাত্র উত্তর।

অ্যালেক্স, ৮ই অক্টোবার ২০১০

দক্ষিণ কোরিয়ার শাসকগোষ্ঠী গনতন্ত্রের মুখোস ছিঁড়ে ফেলছে

আমরা সদ্য কোরিয়া থেকে খবর পেয়েছি যে সোস্যালিস্ট ওয়ারকারস লীগ অফ কোরিয়া/ SAnorunর আটজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কুখ্যাত রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা আইনে[i] বিচারাধীন অবস্থায় আটক রাখা হয়েছে। আগামী ২৭শে জানুয়ারী তাদের সাজা ঘোষণা করার কথা।

এতে কোন সন্দেহ নেই যে এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বিচার এবং শাসকশ্রেণি যাকে বিচার বলে থাকে তার হাস্যকর প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। এই প্রসঙ্গে তিনটি তথ্যের উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রথমত সাউথ কোরিয়ার আদালতগুলি ধৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযোগ এর আগে বহুবার ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।[ii]
দ্বিতীয়ত এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে শত্রুর অর্থাৎ নর্থ কোরিয়ার সুবিধার্থে এরা একটা সংগঠন গড়ে তুলেছে। Oh Se-Cheol এবং Nam Goong Won এবং আরো অনেকে ২০০৬ সালের অক্টোবরে একটি যুদ্ধ বিরোধী আর্ন্ত্জাতিক ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করেন। ঐ ঘোষণা পত্রে পরিষ্কারভাবে নর্থ কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং বিশেষ করে বলা হয়েছে যে, নর্থ কোরিয়ার পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার সংগে শ্রমিকশ্রেণি বা কমিউনিজমের মোটেই কোন সম্পর্ক নেই। ঐ রাষ্ট্রব্যবস্থা পতনশীল পুঁজিবাদের চূড়অন্ত সামরিক বর্বরতার কদাকার এক সংস্করণ ছাড়া কিছুই নয়[iii]
তৃতীয়ত Oh Se-Cheolর আদালতে প্রদত্ত বক্তব্য থেকে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে সে নর্থ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদসহ সব ধরণের পুঁজিবাদের তীব্র বিরোধী।
এইসব রাজনৈতিক কর্মীরা সোস্যালিস্ট চিন্তনকে ধারণ করেন শুধুমাত্র এই অভিযোগেরই বলী হয়েছেন। অন্যভাবে বললে শ্রমিকশ্রেণিকে নিজেদের ও পরিবারের সুরক্ষা ও জীবনযাত্রার মান বজায় রাখার জন্য সংগ্রামের আহ্বান জানানোই হল তাঁদের অপরাধ। এঁদের আরো অপরাধ পুঁজিবাদের আসল চেহারাটা খোলাখুলিভাবে শএরণির সামনে মেলে ধরা। এজন্যই প্রশাসন এঁদের শাস্তি দিতে চাইছে। শোষণ নিপীড়ণের বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়াতে চাইছে তাদের ওপরে সাউথ কোরিয়ার শাসককূল তীব্র নিপীড়ণ নামিয়ে আনছে।এই ঘটনা তারই একটা উদাহরণ মাত্র। ইতিমধ্যেই “baby strollers’ brigade”-র স্বল্পবয়সী মায়েরা এই নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন। এইসব মায়েরা তাদের শিশুদেরকে নিয়ে ২০০৮ সালের মোমবাতি নিয়ে মিছিল-এ যোগদান করেন। এই অপরাধে তাদের ওপর আইনী ও পুলিশি নির্যাতন চালানো হয়।[iv] রায়টপুলিশ দখলীকৃত ফ্যাক্টরি আক্রমণ করে Ssangyong ওয়ার্কারদের প্রচন্ড মারধোর করে।[v]
অনেকবছরের কারাবাসের সাজার সম্ভাবনার মুখোমুখি দাঁড়িয়েও ঐ বন্দী রাজনৈতিক কর্মীরা আদালতে দারুণ সাহসিকতা ও সংগ্রামী মর্যাদার পরিচয় দিয়েছেন এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই বিচারের অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক অভিসন্ধিকে তাঁদের বক্ত্ব্যের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। বিচারকমন্ডলীর সামনে Oh Se-Cheol সর্বশেষ বক্তব্যের অনুবাদ নিচে দেওয়া হচ্ছে।
এই এলাকায় সামরিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।গত নভেম্বরে Yeonpyeong দ্বীপে প্ররোচনামূলক গোলাবর্ষণ এবং নর্থ কোরিয়ার কামানের গোলায় অসামরিক ব্যক্তিদের হত্যার পর এই উত্তেজনা আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এর জবাবে ঐ এলাকায় আমেরিকার পারমাণবিক যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ পাঠানো ও সাউথ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যৌথ যুদ্ধ মহড়া চালানো উত্তেজনার আগুনে নতুন করে ঘি ঢালে। মানবসমাজের সামনে সমাজতন্ত্র ও বর্বরতার মধ্যে যেকোন একদিক বেছে নেওয়ার বিষয়টি এখন আগের থেকে অনেক বেশি সত্য ও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলোর শাসকগোষ্ঠীর প্রচার যন্ত্র নর্থ কোরিয়াকে একটি গুন্ডা প্রকৃতির রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করতে পছন্দ করে। দেখাতে চায় যে সেখানকার শাসকগোষ্ঠী বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আর অনাহারক্লিষ্ট জনগনের ওপর শোষণ নিপীড়ণ চালায়। এটা অবশ্যই সত্য। কিন্তু সাউথ কোরিয়ার সরকার মায়েদের শিশুদের, সংগ্রামী শ্রমিকদের ও সমাজতন্ত্র অর্জণের লক্ষ্যে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর যে নিপীড়ণ চালিয়ে যাচ্ছে তাতে এটা যথেষ্ট পরিষ্কার যে শেষ বিচারে প্রতিটি দেশের বুরজোয়ারাই ভয় দেখিয়ে ও পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করেই শাসন চালায়।
রাজনৈতিক মতভেদ থাকার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই পরিস্থিতিতে আমরা ওইসব বন্দী রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করছি। তাদের সংগ্রাম আমাদেরও সংগ্রাম। আমরা তাদের পরিবার ও সহযোদ্ধাদের প্রতি জানাই আমদের আন্তরিক অনুভূতি এবং সংহতি। আমরা সানন্দে ঐসব সহযোদ্ধাদের কাছে www..internationalism.org-এ পাওয়া সমর্থন ও সংহতির যেকোন বার্তা পাঠিয়ে দেব।[vi]
Oh Se-Cheol -র আদালতে দেওয়া শেষবারের ভাষণ: (ভাষণের বিষয়বস্তুর অনুবাদ মূল কোরিয় ভাষা থেকে করা হয়েছে; বাংলা অনুবাদ ইংরাজি অনুবাদের ভার্সন থেকে করা হল)
পুঁজিবাদের সমগ্র ইতিহাসে যেসব সংকট এসেছে তাকে নানাবিধ তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলোর একটা হল Catastrophe Theory বা বিপর্যয়ের তত্ত্ব। এর মতে পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বগুলো যখন একটা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন পুঁজিবাদ আপনা আপনিই ধসে পড়বে আর শুরু হবে সাম্যময় যুগ, কল্পনার স্বর্গের বাস্তবায়নের যুগ। সর্বনাশা পরিণতির অনিবার্যতার বা চূড়অন্ত নৈরাজ্যবাদী এইসব চিন্তাভাবনা পুঁজিবাদী এইসব শোষণ, নিপীড়ণ ও শ্রমিকশ্রেণির দুর্ভোগের মূল কারণগুলো বোঝার ক্ষেত্রে নানারকম বিভ্রান্তি ও মোহ সৃষ্টিই করেছে। অনেকেই এইসব অবৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনায় প্রভাবিত হয়েছে।
আরেকটা তত্ত্বের মধ্যে আশাবাদের প্রাধান্য।এর মতে বুরজোয়া উৎপাদন ব্যবস্থার বৃদ্ধি সবসময়ই ঘটে থাকে; অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বগুলো মোকাবিলা করার ক্ষমতা পুঁজিবাদেরই রয়েছে এবং ফাটকাবাজের(speculation) অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত(real) অর্থনীতির গতি প্রকৃতি ভালোভাবেই বহাল রাখা যায়।
অন্যগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাওয়া এবং এই দুই থেকে আরেকটু সূক্ষ্ম তত্ত্বের মতে পুঁজিবাদের সংকট হল পর্যাবৃত্ত, সুতরাং আমাদের কাজ ঝড়টা কেটে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
এই অবস্থানটা উনবিংশ শতকের পুঁজিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকই ছিল। কিন্তু বিংশ ও একবিংশ শতকের পুঁজিবাদের অবস্থার সাথে এটা মোটেই খাপ খায় না। উনবিংশ শতকের সংকটগুলো ছিল পুঁজিবাদের সীমাহীন বৃদ্ধি ও বিস্তারের যুগের সংকট। এগুলোকেই মার্কস কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে বলেছেন অতি উৎপাদনের মহামারী। অতি উৎপাদনের এই প্রবণতার পরিণতি হত দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র ও বেকারত্ব। এই পরিণতি জিনিসপত্রের অভাবের জন্য হত না। হত অনেক বেশি জিনিসপত্র অনেক বেশি শিল্প এবং অনেক বেশি সম্পদের জন্য। পুঁজিবাদী সংকটের আর একটা কারণ হল অনিবার্য প্রতিযোগিতার দরুণ উৎপাদন ব্যবস্থার নৈরাজ্য। নতুন নতুন এলাকা, নতুন নতুন মজুরী-শ্রম এবং পন্য বিক্রির উৎস দখলের মাধ্যমে উনবিংশ শতকে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থঅর বিস্তার ও বৃদ্ধি ঘটা সম্ভব ছিল। তাই তখনকার পুঁজিবাদী সঙ্কটকে যৌবনের সুস্বাস্থ্যের সাময়িক ছন্দপতন মনে করা যেত।
বিংশ শতকের পুঁজিবাদের উথ্থানের যুগ শেষ হয়ে এল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এই শেষ হয়ে যাবার প্রক্রিয়ার একটা নির্ণায়ক বিন্দু। এই সময় পর্যন্ত মজুরী শ্রম ও পণ্য উৎপাদনের পুঁজিবাদী সম্পর্ক সারা দুনিয়া জুড়ে বিস্তার লাভ করেছিল। ১৯১৯ সালে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশানাল পুঁজিবাদের এই নতুন যুগকে যুদ্ধ অথবা বিপ্লব-র যুগের আখ্যা দেন। একদিকে অতি উৎপাদনের পুঁজিবাদী প্রবণতা, বিশ্ববাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠল। বেধে গেল সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। অন্যদিকে এটা বিশ্ব অর্থনীতিকে অস্থিতিশীলতা ও বিনাশের সংকটের ওপর নির্ভরশীল করে তুলল। এই সংকট অনেকাংশে স্থায়ীরূপ লাভ করল। এই পরিস্থিতি উনবিংশ শতকের বিপরীত।
এই ধরণের দ্বন্দ্বের পরিণতি হল দুটো ঘটনা। একটা হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যার বলী হল দুই কোটি মানুষ। আর একটা হল ১৯২৯-র চরম মন্দা যার ফলে বিশ থেকে তিরিশ শতাংশ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ল। এরই জের হিসাবে গড়ে তোলা হল তথাকথিত সব সমাজতন্ত্রী দেশ। উৎপাদনের উপকরণগুলোর সবকিছুর ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে গড়ে তোলা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদকেই সমাজতন্ত্র বলে চালানো হল। অন্যদিকে ব্যক্তিগত পুঁজি রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্রের সংমিশ্রণের ভিত্তিতে গড়ে তোলা হল উদারনৈতিক সব দেশ বা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদী ব্যবস্থা।
২য় বিশ্বযুদ্ধের পর তথাকথিত সমাজতন্ত্রী দেশসমূহসহ বিশ্ব পুঁজিবাদের অসাধারণ সমৃদ্ধি ঘটে। ২৫ বছরের পুণনির্মাণ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণনীতির ফলেই এটা ঘটে। এই সমৃদ্ধি দেখে সরকারী আমলাকূল, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, অর্থনীতিবিদ এবং তথাকথিত র্মাসবাদীরা জোরগলায় বলতে থাকে যে পুঁজিবাদ নিশ্চিতভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু সঙ্কট লাগাতারভাবে আরও খারাপের দিকে গেছে। এর প্রমাণ স্বরূপ কিছু তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হল: ১৯৬৭ সালে পাউন্ড স্টারলিং এর অবমূল্যায়ন, ১৯৭১ এর ডলার সঙ্কট, ১৯৭৩ এর তেল সঙ্কটের আকস্মিক আঘাত, ১৯৭৪-৭৫ সালের অর্থনৈতিক মন্দা, ১৯৭৯ সালের মুদ্রাস্ফীতির সঙ্কট, ১৯৮২ সালের ঋণসংকট, ১৯৮৭-র ওয়াল স্ট্রীট সঙ্কট, ১৯৮৯-র অথনৈতিক মন্দা,১৯৯২-৯৩-এ ইউরোপীয়ান কারেনসির মূল্যের অস্থিতিশীলতা, ১৯৯৭এ এশিয়ার টাইগার আর ড্রাগনদের সংকট, ২০০১-এ আমেরিকান নিউ ইকনমির সংকট, ২০০৭এর সাবপ্রাইম ক্রাইসিস, লেম্যান ব্রাদার্স ইত্যাদির ফিনানসিয়াল সংকট এবং ২০০৯-২০১০-র ফিনানসিয়াল ক্রাইসিস।
ক্রাইসিসের এই লম্বা সারণী কি দেখায় যে সংকট নেহাতই পিরিয়ডিক? মোটেই না! এ হল পুঁজিবাদের মারণ রোগ যার কোন আরোগ্য নেই। যেখান থেকে পুঁজিবাদ তার মুনাফা তুলে আনতে পারে সেই বাজারের অপ্রতুলতার ফলে   মুনাফার হার ক্রমশঃ কমে যেতে থাকে। ১৯২৯-র বিশ্বব্যাপী বিরাট মন্দার সময়ে চূড়ান্ত খারাপ পরিস্থিতি আসে নি কারণ রাষ্ট্রগুলো ভীষণভাবে তাদের হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক ফিন্যানসিয়াল এবং ইকোনোমিক ক্রাইসিস দেখাচ্ছে যে আগের মত স্টেট কর্তৃক বেল আউট বা ঋণ ইত্যাদি কিছু আশু পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। উৎপাদিকা শক্তির আরো বিস্তারের অসম্ভাব্যতার কারণে ক্যাপিট্যালিজম এখন এক দিশাহীন অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছে। আর পুঁজিবাদের বর্তমান মরণপন চেষ্টা হল এই কানাগলি থেকে বেরোন; অর্থাৎ এ এখন সীমাহীনভাবে রাষ্ট্রীয় ঋণের ওপর নির্ভরশীল আর তার চেস্টা হল অতিউৎপাদনের মারণরোগ থেকে বাঁচার জন্য কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করা।
গত চল্লিশ বছর পুঁজিবাদ বিপুল ঋনের সাহায্যেই তার সর্বনাশা পরিণামের হাত থেকে রেহাই পেয়ে আসছে। পুঁজিবাদের কাছে এই ঋণ ড্রাগ-এ্যাডিক্টের কাছে ড্রাগের সমতুল। শেষ পর্যন্ত এই ঋণ রক্ত আর ঘাম নিংড়ে নেওয়া এক অসম্ভব বোঝা হিসাবেই  বিশ্বের প্রলেতারিয়েতের কাছে ফিরে আসে এবং আসবে। এর ফল হল বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অবিশ্বাস্য দারিদ্র, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ এবং পরিবেশগত বিপর্যয়।
পুঁজিবাদ কি পতনশীল পর্যায়ে আছে? হ্যাঁ। হঠাৎ করে এই ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবার দিকে এটা এগোচ্ছে না, কিন্তু এটা ব্যবস্থাটার পতনের এক নতুন দশা যা হল পুঁজিবাদের ইতিহাসের শেষ পর্যায়  সেই দিকেই এগোচ্ছে, তাকে নিয়ে যাচ্ছে তার সমাপ্তির দিকে। আমাদের অবশ্যই মনে করা দরকার ১০০ বছর আগের সেই শ্লোগান: যুদ্ধ অথবা বিপ্লব এবং আরো একবার আমাদের নিজেদের প্রস্তুত করা উচিত বর্বরতা অথবা সমাজতন্ত্র এই বিকল্পের অর্থ উপলব্ধি করার জন্য এবং তৈরি হওয়া উচিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের অনুশীলনের জন্য। অর্থাৎ সোস্যালিস্টদের অবশ্যই একত্র হতে এবং একসঙ্গে কাজ করতে হবে; তাদের অবশ্যই বিপ্লবী মার্কসবাদের ভিত্তিতে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে। আমাদের লক্ষ্য টাকা, পন্য, বাজার মজুরী-শ্রম এবং বিনীময় মূল্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটাকে অতিক্রম করা এবং এমন এক দুনিয়া গড়া যেখানে সমস্ত মানুষ মুক্ত স্বাধীন, যেখানে মজুরী দাসত্বের নিগড় থেকে শ্রম সম্পূর্ণভাবে মুক্ত
মার্কসীয় বিশ্লেষণ থেকে এটা সুনিশ্চিত যে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার সাধারণ সংকট ইতিমধ্যেই তার চূড়ান্ত সংকটকালীন অবস্থায় পৌঁছে গেছে; তার কারণ উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে লাভের হারের ক্রমাগত হ্রাস এবং বাজার সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়া। আমরা এখন দুই বিকল্পের মুখোমুখি: পুঁজিবাদ অর্থাৎ বর্বরতা অথবা সোস্যালিজম্‌/কমিউনিজম্‌ অথাৎ সভ্যতা।
প্রথম, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এ তার অধীন মজুরীদাসেদেরকেই খেতে দিতে পারে না। পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিন এক লক্ষ মানুষ অনাহারে থাকে, প্রতি ৫ সেকেন্ডে পাঁচ বছর বয়সের কম বয়েসী একজন শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। ৮৪২ মিলিয়ন মানুষ স্থায়ীভাবে অপুষ্টির শিকার। ভয়ংকরভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর ৬ বিলিয়ন জনসাধারণের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মানুষের প্রতিমুহূর্ত্তে দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে প্রাণান্ত হচ্ছে।
দ্বিতীয়তঃ, বর্তমানে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আর কোনভাবেই অর্থনৈতিক অগ্রগতির গল্প শুনিয়ে মানুষকে ভোলাতে পারে না।
ভারত এবং চীনে অর্থনৈতিক উন্নতির যাদু যে মিথ্যা এবং ধোঁকা তা প্রমানণিত হয়ে গেছে। ২০০৮-র প্রথম অর্ধে ২০ মিলিয়ন শ্রমিক তাদের কাজ খুইয়েছে এবং ৬৭০০০ কোম্পানী দেউলে হয়ে গেছে।
তৃতীয়তঃ, পরিবেশগত দিকথেকে এক ভয়ঙ্কর বিপদ খুবই প্রত্যাশিত। বিশ্ব-উষ্ণায়ণের ব্যপারে দেখা যাচ্ছে ১৮৯৬ থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ০.৬% বেড়ে গেছে। বিংশ শতাব্দীতে উত্তর গোলার্ধ গত ১০০০ বছরের তুলনায় অত্যন্ত বেশিমাত্রায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বরফঘেরা স্থানের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমে গেছে। উত্তর মেরুতে বরফ-স্তর ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। বিংশ শতকে সমুদ্র তলের উচ্চতা ১০ থেকে ২০% বেড়ে গেছে যা গত ৩০০০ বছর ধরে বৃদ্ধির পরিমাণের ১০গুনেরও বেশি। যথেচ্ছভাবে অরণ্যনিধন,ভূমিক্ষয়, (জল, বাতাস)দূষণ,রাসায়নিক এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার, প্রাণি এবং উদ্ভিদ নিধন এবং বিস্ফোরণের মত মহামারীর প্রাদুর্ভাব এইসবই ধরণীকে গত ৯০ বছরের নির্মমভাবে শোষণ করার প্রতিফলন। পরিবেশগত ডিজেস্টার বিশ্বজোড়া ব্যাপার আর তাই এই সমস্যা ভবিষ্যতে কত গভীর এবং বিপজ্জনকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে তা আগে থেকে বলে দেওয়া দুঃসাধ্য।
তাহলে কেমন করে পুঁজিবাদী অবদমন এবং শোষণের বিরুদ্ধে শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস বিকশিত হল?
শ্রেণি সংগ্রাম সর্বদাই আছে কিন্তু তা সফল হয়নি। প্রথম আন্তর্জাতিক ব্যর্থ হয়েছিল কেননা সেটা ছিল পুঁজিবাদের বিকাশের যুগ। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ব্যর্থ হয় বিপ্লবী চরিত্র পরিত্যাগ করে জাতীয়তাবাদের পক্ষে চলে যাওয়ার জন্য। এবং তৃতীয় আন্তর্জাতিক ব্যর্থ হয় স্ট্যালিনিস্ট প্রতিবিপ্লবের বিজয়ের কারণে; বিশেষতঃ ১৯৩০ থেকেই প্রতিবিপ্লবী ধারা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের প্রকৃতি সম্বন্ধে শ্রমিকশ্রেণিকে মিথ্যা ধারণা দেয় এবং সেটাকেই সমাজতন্ত্র বলে প্রচার করে। শেষ পর্যন্ত তারা দুটো ব্লকের মধ্যে সংগ্রামকে আড়াল করেবিশ্ব প্রলেতারিয়েতের সংগ্রামকে অবদমিত করে, শোষণ করে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারেরই ভূমিকা পালন করল।
পরন্তু, বুরজোয়াদের প্রচার অনুযায়ী ইস্টার্ণ ব্লক এবং স্ট্যালিনিস্ট ব্যবস্থার পতন হল উদারপন্থী পুঁজিবাদেরই বিজয়,শ্রেণিসংগ্রামের অবসান এমনকি শ্রমিকশ্রেণিরই বিলুপ্তি। এমন প্রচার শ্রেণির সচেতনতা এবং লড়াকু চরিত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলল।
১৯৯০-র পুরো দশক ধরে শ্রেণির সংগ্রাম পুরো থেমে যায়নি তবু তার আপেক্ষিক তাকত কমে গিয়েছিল। কিন্তু অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সে পেনসনের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামে আবার এক নতুন বাঁক নিয়ে এল। সেন্ট্রাল দেশগুলোর প্রায় সর্বত্র শ্রেণি নতুন করে সংগ্রাম শুরু করে: ২০০৫-এ নিউইয়র্কে বোয়িং এবং ট্রান্সপোর্টেসন স্ট্রাইক; ২০০৪-এ ডেইমলার এবং ওপেল সংগ্রাম,২০০৬-র বসন্তে ডাক্তারদের সংগ্রাম, ২০০৭এ জার্মানে টেলিকম বিভাগের সংগ্রাম, ২০০৫-এর অগাস্টে লন্ডন এয়ারপোর্ট সংগ্রাম, ২০০৬এ ফ্রান্সে অ্যান্টি সিপিই সংগ্রাম এরই প্রতিফলন। অন্যান্য দেশগুলোতেও সংগ্রাম গড়ে উঠেছে যেমন, ২০০৬-র বসন্তে দুবাইএ, একই সময়ে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শ্রমিকদের সংগ্রাম, ২০০৭এ ইজিপ্টে টেক্সটাইল শ্রমিকদের সংগ্রাম। ২০০৬ থেকে ২০০৮এর মধ্যে বিশ্ব শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রাম সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ করেছে, ইজিপ্ট, দুবাই, আলজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা, পেরু, টুরকি, গ্রীস, ফিনল্যান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রাশিয়া, ইটালি, বৃটেন, জারমানি, ফ্রান্স, ইউএসে এবং চীন সর্বত্র। পেনসন সংস্কারের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের সাম্প্রতিক সংগ্রামে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রাম আরো বেশি বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে।
ফলতঃ বোঝা যাচ্ছে চূড়ান্ত অবক্ষয়িত বিশ্ব পুঁজিবাদ ও সংকট (যা শ্রমিকশ্রেণির ওপর বিপুল বোঝার মত চেপে বসে আছে) শ্রমিকশ্রেণিকে সারা বিশ্ব জুড়েই সংগ্রামের পথে যেতে বাধ্য করছে। এ সংগ্রাম পূর্বতন সংগ্রামের থেকে আলাদা।
এখন আমাদের সামনে দুটি রাস্তা: বর্বরতার মধ্যে বাস কর, মানুষের মত নয় বাঁচ পশুর মত অথবা গড় সেই দুনিয়া যেখানে আনন্দময় হবে বাঁচা,বাস করা যাবে পূর্ণ মানবিক মর্যাদা নিয়ে, সাম্যের মধ্যে, স্বাধীনতার মধ্যে।
তথাকথিত উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কোরিয়ান পুঁজিবাদের অভ্যন্তরীন স্ববিরোধিতার গভীরতা এবং বিস্তার অনেক বেশি । ইউরোপীয় দেশগুলোর শ্রমিকশ্রেণি তাদের অতীতের সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অনেক অধিকার আদায় করেছে; এই দিক থেকে দেখলে ইউরোপীয় দেশগুলোর শ্রমিকদের তুলনায় কোরিয়ার শ্রমিকদের যন্ত্রনা অনেকগুন বেশি। প্রশ্নটা শ্রেণির মানব জীবনের, মানুষ হিসাবে তাদের জীবনযাপনের অবস্থার; এটা জি-টোয়েন্টি সামিটের আয়োজক দেশ হওয়ার বাহ্যারম্বর বা অর্থনীতির গালভরা সূচক দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না।
পুঁজি চরিত্রগত ভাবেই আন্তর্জাতিক। বিভিন্ন জাতীয় পুঁজির মধ্যে সদা সর্বদাই প্রতিযোগিতা এবং বিরোধ আছে, তবে পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থাটা টিকিয়ে রাখার এবং তার সংকট গোপন করা ও শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ মানবিক মুখোশের আড়ালে রাখার জন্য তারা পরস্পরের মধ্যে একত্রিত হয়।
শ্রমিকদের সংগ্রাম পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে নয়, তার সংগ্রাম পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে পুঁজিবাদ মুনাফা বৃদ্ধি আর সীমাহীন প্রতিযোগিতার লক্ষ্যেই চালিত।
ঐতিহাসিকভাবে মার্কসবাদীরা শ্রমিকশ্রেণির সঙ্গে থেকে লড়াই করেছে যে শ্রমিকশ্রেণি বর্তমান ইতিহাসের নায়ক; আর এই লড়াই-এ সাথ দিতে গিয়ে মার্কসবাদীরা মানব সমাজের গতির ঐতিহাসিক নিয়মগুলোর স্বরূপ উদঘাটন করে, দেখায় বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে মৌল নিয়মগুলো কেমনভাবে ক্রিয়াশীল, প্রকৃত মানব জীবনের পক্ষে উপযুক্ত বিশ্বের পথে যাওয়ার অভিমুখ নির্দেশ করে এবং সেই পথে যাওয়ার জন্য এই অমানবিক ব্যবস্থা ও তার নিয়মের শেকল কিভাবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তা দেখিয়ে দেয়।
আর এই কাজ করার জন্যই তারা পার্টির মত সংগঠন গড়ে তোলে এবং বাস্তব সংগ্রামে অংশ নেয়। অন্তত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে মার্কসবাদীদের এই সব বাস্তব কর্মকান্ড আদালতের দরবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়নি।বরং তাদের চিন্তাভাবনা এবং চর্চাকে মানব সমাজের প্রগতির পথে মূল্যবান অবদান হিসাবেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ক্যাপিটাল বা কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো-র মত মাস্টারপিস লেখা বাইবেলের মতই ব্যাপকভাবে পঠিত হয়েছে।
SWLK-র এই কেসটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা যা চিন্তনের স্বাধীনতাকে অবদমিত করার ভেতর দিয়ে সারা বিশ্বের সামনে কোরিয়ান সমাজের বর্বর প্রকৃতিটা নগ্নভাবে তুলে ধরছে; সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে যেসব বিচার আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে হয়েছে সেই ইতিহাসে এই ঐতিহাসিক ঘটনা একটা কলঙ্কজনক ছাপ রেখে যাবে। ভবিষ্যতে আরো খোলাখুলি এবং আরো বিপুলাকারে সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম হবে, মার্কসীয় আন্দোলন ব্যাপকভাবে এবং আরো শক্তিশালী হয়ে সারা বিশ্বে এবং এই কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়বে। বিচার ব্যবস্থা সংগঠিত ভায়োলেন্স সংক্রান্ত কেসের বিচার করবে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম, মার্কসবাদী সংগ্রাম দমিয়ে রাখতে তা অক্ষম। কারণ যতদিন মানবতা এবং শ্রমিকশ্রেণির অস্তিত্ব থাকবে ততদিন এই সংগ্রাম জারী থাকবেই।
সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম, এবং তার অনুশীলন আদালতের শাস্তির বিষয় হতে পারেনা। বরং তা হওয়া উচিত শ্রদ্ধার বিষয়, ভরসার বিষয়। আমার শেষ কয়েকটি কথা:
-        যে নিয়ম চিন্তনের, বিজ্ঞানের এবং প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করে সেই ন্যাশানাল সিকিউরিটি ল বাতিল কর!
-        উৎপাদনের মালিকানা, রাজনৈতিক আধিপত্যের জন্য, ইতিহাসের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার জন্য শ্রমিকশ্রেণির যে সংগ্রাম তার ওপর পুঁজিবাদের শাসন নিপীড়ণ ও অত্যাচার বন্ধ কর!
-         পুঁজিবাদকে ধ্বংস করে মুক্ত ব্যক্তি মানুষের এক বিশ্ব মানব সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণি এক হও!


[i] Oh Se-Cheol, Yang Hyo-sik, Yang Jun-seok, and Choi Young-ik face seven years in prison, while Nam Goong Won, Park Jun-Seon, Jeong Won-Hyung, and Oh Min-Gyu are facing five years. At its most extreme, the National Security Law provides for the death penalty against the accused.
 
 
[vi] We also draw our readers' attention to the protest initiative launched by Loren Goldner (https://libcom.org/forums/organise/korean-militants-facing-prison-08012011). While we share Loren’s scepticism about the effectiveness of “write-in” mail campaigns, we agree with him that “an international spotlight on this case just might have an effect on the final sentencing of these exemplary militants”. Letters of protest should be sent to Judge Hyung Doo Kim at this address: swlk [at] jinbo.net (messages must be received by 17th January for them to be forwarded on to Judge Kim).