englishfrançaisdeutschitalianosvenskaespañoltürkçenederlandsportuguêsΕλληνικά
русскийहिन्दीفارسی한국어日本語filipino中文বাংলাmagyarsuomi
CAPTCHA
This question is for testing whether or not you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.
  • Reset your password
নীড়পাতা
ইন্টারন্যাশানাল কম্যুনিস্ট কারেন্ট
দুনিয়ার মজদুর এক হও!

Main navigation

  • ICC’র সাথে যোগাযোগ
  • ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিষ্ট কারেন্টের মৌলিক রাজনৈতিক অবস্থান
  • আইসিসি-র প্ল্যাটফর্ম

সিঙুর , নন্দীগ্রাম - বামপন্থী বর্বরতার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ

Breadcrumb

  • নীড়পাতা
  • Communist Internationalist - 2000s
  • Communist Internationalist - 2007

পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী শাসিত পুঁজিবাদী সরকার রাজধানী কলকাতার অনতিদূরের গ্রামীন এলাকা সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের নিরস্ত্র শোষিত জনতা ও কৃষি শ্রমিকদের ওপর জঘণ্য আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। রাজ্যের বতর্মান সরকার গায়ের জোরে কৃষিজমি অধিগ্রহণ করছে তথাকথিত ‘শিল্পায়ন' এবং স্পেশ্যাল ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার জন্য যার প্রধান উদ্দেশ্য হল পুঁজিপতিদের শ্রমিকশ্রেণিকে ইচ্ছামত শোষন করার উপযুক্ত বিশেষ সুবিধা এবং অধিকার সুনিশ্চিত করা।  সিঙুর এবং নন্দীগ্রামের মানুষ এই জমি কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। এমতাবস্থায় রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী ও সি পি আই (এম) [1]-র ক্যাডার বাহিনীর ‘পবিত্র' জোট আন্দোলনকারীদের ওপর ভয়ংকরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিনা প্ররোচনায় গত ১৪ই মার্চ এই পবিত্র জোট নিরস্ত্র শিশু, বৃদ্ধ মহিলা এবং পুরুষের ওপর নিবির্চারে গুলি চালিয়েছে, নারীদের ওপর যৌন নিযার্তন করেছে, শিশুদের পযন্ত রেহাই দেয় নি-খবরে প্রকাশ তাদেরকে নির্মমভাবে ধর থেকে মাথা ছিঁড়ে মেরে ফেলা হয়েছে। শত শত মানুষ আহত, নিহতের সংখ্যা এখনও সঠিক জানা যায় নি কারণ ওই পবিত্র জোট সেসব লাশ গায়েব ক'রে দিয়েছে। এই ভয়ংকর পাশবিক সন্ত্রাস যেকোন সুস্থ স্বাভাবিক অনুভূতিসম্পন্ন মানুষের মনে ভীষণ ঘৃণার উদ্রেক না করেই পারেনা। আসলে এই ঘৃণা প্রকাশের কোন ভাষা আমাদের জানা নেই।

এই সংগ্রামী মানুষজনের মধ্যে  এখানকার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী  বাম দল সি পি আই (এম) তথা বামফ্রন্ট সরকারের প্রতি হয়তো কিছু ভ্রান্ত প্রত্যাশা ছিল যে তারা সংগ্রামী মানুষের কথা শুনবে এবং তাদের দাবী মেনে নেবে। বিশেষত: যখন এই সি পি আই (এম ) দল অবিরাম পশ্চিম বঙ্গের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের মর্যাদা তথা জীবনযাপনের মান উন্নয়নের কথা  সুনিশ্চিত করার কথা বলে চলে এবং বলতে গর্ব বোধ করে।   পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দল মানে পুঁজির বাম ডান দলগুলোও এই প্রত্যাশাতেই ইন্ধন যুগিয়েছে এবং তাদের এই অস্তিত্ব রক্ষার মরীয়া চেষ্টাকে নিজেদের সংসদীয় ক্ষমতা দখলের এবং রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কাজে লাগাচ্ছে। বিপরীতে বিপ্লবী প্রলেতারিয়েতের কাজ   বতর্মান ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে জীবনযাপনের এই ক্রমবধর্মান সংকটের মূল কারণ, পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থাটার আসল স্বরূপ উদ্ঘাটিত করা, শ্রমিক শ্রেণি তথা অন্যান্য শোষিত অংশের   শ্রেণি-সংগ্রামের গতি-প্রকৃতি এবং লক্ষ্য সম্বন্ধে সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করা।      

স্ট্যালিনিস্ট বর্বরতার ঘৃণ্য স্বরূপের সুস্পষ্ট প্রকাশ :

সি পি আই এম বলে গ্রামের গরীব মানুষের জন্য তারা যথেষ্ট করেছে, তাদের "অধিকার" দিয়েছে, ভূমিসংস্কারের প্রবর্তক তারাই; হ্যাঁ, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমি সংস্কারের কমর্সুচীকে যথাসম্ভব রূপায়িত করেছে, হয়তো অন্য রাজ্যগুলোর তুলনায় একটু ভালোভাবেই-তবে স্বভাবতই এসব করার কারণ তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান ঘাঁটি  অর্থাৎ গ্রামের মেহনতী মানুষকে  নিজের পক্ষে রাখাই।   বলতে গেলে গ্রামের ওপর ভিত্তি করেই এত বছর ধরে এরা সরকারে থাকতে পেরেছে। স্বভাবতই এতকাল ক্ষমতায় থাকার ফলে তাদের স্পর্ধা বা ঔদ্ধত্যও বাড়াবাড়িরকমের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।

যাহোক বতর্মানে তারা আবিষ্কার করেছে যে ‘তাদের' সাধের পশ্চিমবঙ্গ নাকি ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর থেকে শিল্পায়নের ব্যাপারে বেশ পিছিয়ে পড়েছে! অতএব কোন কিছুর তোয়াক্কা নাকরেই সাত তাড়াতাড়ি ‘দেশি/বিদেশি' পুঁজি টানার তোড়জোর শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা শিল্পকেন্দ্র বা নগরায়ণ যাই হোক তার জন্য লাগে জমি। ফলে তাদের জমি ‘দখলের' নয়া লড়াই ---- সরকারী আইনের মুখে ঝামা ঘষে, রাজনৈতিক মস্তান বাহিনী/ মাফিয়া নামিয়ে, সন্ত্রাস সৃষ্টি ক'রে, একথায় যেনতেনপ্রকারেণ বাম সরকার জমি কেড়ে নেওয়ার প্রয়াসে নেমে পড়েছে। আর তারই ফল হ'ল এই নারকীয় হত্যালীলা-যা গুজরাটে আরএস এসের মুসলিম নিধন যজ্ঞের কথা অথবা কংগ্রেসীদের ১৯৭১-র রাডিক্যাল লেফটিস্টদের খতম করার ইতিহাস বা ১৯৮৪-র শিখ নিধনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এব্যাপারে এরা চীনের কমরেড ‘দোসরের' কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েছে যারা অনেককাল আগেই চীনের চাষীদের দুদর্শাকে পুঁজি ক'রে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে আর তারপর সেই চাষীদের ওপরই নিপীড়নের স্ট্রীম রোলার চালিয়েছে ‘শিল্পায়নে'র খাতিরে! একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক কালে দ্রুত ‘শিল্পায়ন'-র রাষ্ট্রীয় নীতির ফলে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া হাজার হাজার কৃষকের সরকার বিরোধী আন্দোলন বর্বরোচিতোভাবে   দমন করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ,  গত কয়েক বছরে চীনে কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষের প্রায় ৯০,০০০ প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে। এথেকে বোঝা যায়, রাডিক্যাল, অতিউগ্রসহ সবরকমের বামপন্থীরা পুঁজির দক্ষিণ অংশের মতই পুঁজিবাদকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমস্তরকমের অমানবিক কাযর্কলাপ করতে পারে, পারে মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে।

অনেকেই ভাবেন সিপিএম দীর্ঘকাল সরকারে থাকার জন্যই এমন পচনশীল , দূর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। শুধু বতর্মান অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এটা সত্য মনে হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের আলোয় বিচার করলে ব্যাপারটা অন্যরকম: প্রকৃতপক্ষে সিপিআই (এম), সিপিআইএম (এল), সিপিআই এবং অন্যান্য স্ট্যালিনিস্ট, মাওয়িস্ট ট্রটস্কাইট পার্টিগুলো আসলে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সেই সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ধারা যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রলেতারিয়েতের আন্তর্জাতিকতা এবং বিপ্লবী লাইন বর্জন ক'রে পুঁজিবাদী শিবিরে যোগদান করেছিল, আর জার্মানে  ১৯১৯-র বিপ্লবের প্রয়াসকে ধ্বংস করেছিল। এরাই খুন করেছিল বিশ্ব বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ যোদ্ধা রোজা লুক্সেমবার্গ, কার্ল লিবনেখট্ আর লিও যোগিসেসের মত কম্যুনিস্টদের। যে তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিপ্লবের অগ্রণী নেতৃত্ব দেবার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এরাই স্ট্যালিনের নেতৃত্বে সেই আন্তর্জাতিককে প্রতিবিপ্লবের আখরাতে পরিণত করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। মার্কসবাদের নামে এই গভীরতম প্রতিবিপ্লব বিশ্ব প্রলেতারিয়েতকে শুধুমাত্র শারীরিকভাবে নয়, তাকে পর্যুদস্ত করেছিল রাজনৈতিক ও মতাদর্শগতভাবেও। এই প্রতিবিপ্লব প্রলেতারিয়েতের সংগ্রামের সমস্ত ঐতিহাসিক শিক্ষা, তার তাত্ত্বিক হাতিয়ার, তার সংগঠন সবকিছুকেই লোপাট ক'রে দিয়েছিল। এরা মার্কসবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত এবং স্ববিরোধী বিষয়কেই মার্কসবাদ হিসেবে উপস্থিত করেছিল। এককথায়, এরা মার্কসবাদের কবর খনক ছাড়া কিছুই নয়। স্ট্যালিন নিয়ন্ত্রিত বলসেভিক পার্টি বা মাও নিয়ন্ত্রিত সিপিসি বা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা  অন্যান্য অফিসিয়্যাল কম্যুনিস্ট পার্টিগুলো আসলে সম্পূর্ণরূপে অধঃপতিত প্রতিবিপ্লবী দল যদিও এরাই প্রলেতারিয়েতের বিপ্লবী পার্টি হিসেবে নিজেদের জাহির করেছে। এই স্ট্যালিনিয় প্রতিবিপ্লবী ধারা সারা বিশ্বে শ্রমিকশ্রেণির কাছে ইতিহাসের সবথেকে বড় এই মিথ্যা প্রচার করেছে যে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যদিও রাশিয়ায় যা ছিল তা   সবথেকে বেশি দমনপীড়ণ  এবং শোষনের ওপর প্রতিষ্ঠিত এক বিশেষ ধরণের রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ ছাড়া কিছুই নয়।

মার্কসীয় তত্ত্ব  অনুযায়ী এক দেশে সমাজতন্ত্র কখনোই হতে পারে না।

পরন্তু এই প্রতিবিপ্লবী পার্টিগুলোই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শ্রমিকশ্রেণিকে ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার শ্লোগান দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করেছিল।   শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিক বিপ্লবী লাইন হ'ল সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণি কোন পক্ষেই যোগ দিতে পারেনা, বরং লেনিন যেমন বলেছিলেন তাদের কাজ হ'ল  পৃথিবীর প্রতিটি দেশের পুঁজিবাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রেণিসংগ্রামকে তীব্রতর করা।   এরা তার সম্পূর্ণ বিপরীতে গিয়ে শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিকতার নীতির বিরুদ্ধে পুঁজিবাদের পক্ষ নিয়েছিল।

ফ্যাসিস্টদের মতই এরা এবং এদের ‘গণতান্ত্রিক' সাম্রাজ্যবাদী জোটসহ    সকলেই লক্ষ লক্ষ শ্রমিক তথা শোষিত মানুষের মৃত্যুর জন্য সমান পরিমাণে দায়ী। জন্মের প্রায় শুরু থেকেই উপরোক্ত প্রতিবিপ্লবীধারার অবস্থানগুলোই সিপিআই (যার থেকেই পরে সিপিআই (এম)-র জন্ম)-র ভিত্তি। সেদিক থেকে বলা যায় এদের শ্রমিকশ্রেণির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস শুরু ১৯৩০-র দশক থেকেই। শ্রমিক শ্রেণির ঐতিহাসিক পরাজয়ের সেই সময় থেকেই এইসব রাজনৈতিক দলগুলো মাকর্সবাদের নামে মাকর্সবাদকে কবরে পাঠানোর কাজই ক'রে চলেছে এবং পুঁজির সবথেকে নির্ভরযোগ্য রক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। এদের এই প্রতিবিপ্লবী শ্রমিকশ্রেণি বিরোধী চরিত্র নগ্নভাবে উদ্ঘাটিত হতে অনেক সময় লেগেছে: এর প্রধাণ কারণ ইতিহাসের এক দীর্ঘ সময় জুড়ে এই গভীরতম প্রতিবিপ্লবী ধারার প্রভাব--- ঐতিহাসিক কারণেই শ্রমিকশ্রেণির ওপর এদের নিয়ন্ত্রণ ছিল ---কেননা  পরাজয়ের কালে শ্রমিকেরা এদেরকেই তাদের স্বার্থরক্ষাকারী দল হিসেবে মনে করত, তাদের মতাদর্শগতভাবে বন্ধ্যা ক'রে রেখেছিল এইসব দলগুলো। কিন্তু ইতিহাসের নিজস্ব নিয়মে, শ্রমিকশ্রেণির বর্তমান শ্রেণিসংঘর্ষের নতুন পর্যায়ে, যখন তাদের সংগ্রামী মনোভাব এবং শ্রেণি সচেতনতা অর্জনের প্রয়াস ক্রমবর্ধমান এবং ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদ যখন সারা পৃথিবীতেই স্থায়ীভাবে তীব্রতর সংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছে তখন এই প্রতিবিপ্লবী শক্তি নিজেদের ভেতরকার আসল কুৎসিত, ঘৃণ্য এবং পুতিগন্ধময় চেহারাটা আর আড়াল করতে পারছে না, তাদের নখ দাঁত বেড়িয়ে পড়ছে শোষিত মানুষের , বিশেষতঃ শ্রমিক শ্রেণির মানুষের বিরুদ্ধে, শুধু ভারতেই নয়, সারা পৃথিবীতেই।

অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা গ্রুপগুলো কি কৃষিতে যুক্ত মানুষগুলোর প্রকৃত বন্ধু?

সিপি আই এম-র এই দমন-পীড়ণ অতিবাম, দক্ষিণসহ  সব  বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলোর কাছে বিরাট রাজনৈতিক সুযোগ এনে দিয়েছে-এমনকি,  ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট্রের অন্যান্য শরিকদলগুলোও এই ফাঁকে তাদের বড় শরিককে সব রকমে একঘরে করা,  নস্যাৎ করা এবং তার ভেতর দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য সুনিশ্চিত করতে চাইছে। এদের মধ্যে কে কত বেশি চাষীভাইদের বন্ধু তা প্রমান করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। সিপিএমকে ভিলেন প্রমাণ করতে এরা মরীয়া। এরা চিৎকার করছে----   সিপিএম চাষীদের ওপর ফ্যাসিবাদী নিপীড়ণ চালিয়েছে। অতএব, ‘ফ্যাসিস্ট' সিপিএমের বিরুদ্ধে এ্যান্টিফ্যাসিস্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট গড়ার প্রয়াস!   এরা বোঝাতে চাইছে তারাই একমাত্র আগমার্কা গণতান্ত্রিক দল! আর এইভাবে এরা শ্রমিকশ্রেণি তথা শোষিত মানুষকে আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে নিজেদের ‘গণতান্ত্রিক' পতাকাতলে আনতে চাইছে। লেফ্টিস্ট পার্টিগুলোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে এরা তাদের ক্ষমতায় আসার পুঁজি করতে চাইছে। এরা এই সত্যটাকে আড়াল করতে চাইছে যে সরকারে গেলে এরাও একইরকম বা তার চাইতে  বেশি পরিমাণেই দমন-পীড়ণের আশ্রয় নেবে কেননা শোষিত মানুষ, বিশেষতঃ শ্রমিকশ্রেণির জীবন-জীবিকার ওপর ক্রমবর্ধমান     পুঁজিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইকে ঠান্ডা করা তাদেরও কাজ। এটা তাদের শুভইচ্ছার ওপর নির্ভর নয়, বরং, যত গণতান্ত্রিক বলেই তারা নিজেদের দাবি করুক, আসলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে এটা তারা করতে বাধ্য কারণ এরা সকলেই পুঁজির বাম কিংবা ডান হাত ছাড়া কিছুই নয়। আমাদের বুঝতে হবে বর্তমানে পুঁজিবাদ টিকে থাকতে পারে শুধুমাত্র শ্রমিকশ্রেণিসহ অন্যান্য শোষিত মানুষের ওপর তার শোষন তীব্র থেকে তীব্রতর করার মধ্যে দিয়েই।   

বিরোধীরা বলছে এই বর্বর সিপিআইএমকে গদীচ্যূত করলেই সব সমস্যার সমাধান।   পুলিশ-ক্যাডার জোটের হাতে নিহত মানুষগুলোর প্রতি তারা আমাদের দৃষ্টি আবদ্ধ রাখতে চাইছে। এঘটনা সত্যিই অসহনীয়, কিন্তু আমরা কি ভুলে যাব গত দুতিন বছরে এই ভারতেই ২০ থেকে ৩০ হাজার চাষী আত্মহত্যা করেছে- বিশেষ ক'রে সেইসব জায়গায় যেখানে কৃষি অত্যন্ত উন্নত, ফলে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দারুনভাবে অন্বিত। এদের জমি কেড়ে নেওয়া হয় নি, জমির মালিকানা থাকা সত্ত্বেও তারা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।  বিশ্ব-পুঁজিবাদের কোন্ বস্তুগত পরিস্থিতির চাপে এই অবস্থা হল একথা তারা কেউ বলছে না, বরং তার বিপরীতে একটা ভুল ধারণা মাথায় ঢোকাতে চাইছে যে নন্দীগ্রামের এই ঘটনাটা যেন বা পৃথিবীর পুঁজিবাদের সংকটের বাইরে, এটা শুধুমাত্র কোন্ সরকার  ক্ষমতায় আছে তার ওপর নির্ভর; এককথায় যেনতেন প্রকারে, রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করা, আর সর্বোপরি গদীটি দখল করা এদের মূল লক্ষ্য:  এদের কাছে এই বর্বরতা, এই মৃত্যু,  শোষিতমানুষের   মরীয়া হয়ে বাঁচার চেষ্টা সবই হল সেই লক্ষ্য পূরণের সহায়ক হাতিয়ারমাত্র।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আক্রমণ:

পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জন্ম হয়েছে প্রাক-পুঁজিবাদী পণ্য-উৎপাদন ও বিনীময় ব্যবস্থার গর্ভ থেকে। আর পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকাশের পথে লক্ষ লক্ষ খুদে উৎপাদক এবং চাষী তাদের জমি  অথবা উৎপাদনের উপায় গুলো  থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। বাস্তবত, পুঁজিবাদ টিকে থাকতে  পারে প্রাক-পুঁজিবাদী ধরণের উৎপাদন ক্ষেত্রগুলোকে ক্রমাগত আত্মসাৎ করেই। এইসব খুদে মালিক ও উৎপাদকেরা পুঁজিবাদী উৎপাদিকা শক্তির বিপুল তেজের সামনে খড়কুটোর মত ভেসে যায়: সস্তা পণ্যের বিপরীতে তাদের পুরোণো ধরণের উৎপাদন বাজারে কোন জায়গাই করতে পারে না-ফলে তাদের পুরোণো জীবনযাপনের ধরণ বজায় রাখাও ক্রমাগত অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুঁজিবাদী বিকাশের বিপুল জোয়ারের সময় এই সব উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া মানুষদের পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া সম্ভব ছিল।

কিন্তু বতর্মানে পুঁজিবাদ নিজেই একটা জরাগ্রস্ত, বাতিল ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। তার সংকট এখন আর আকস্মিক নয়, বরং তা একটা স্থায়ী এবং ক্রমবর্ধমান রূপ লাভ করেছে। এ পর্যায়ে পুঁজিবাদ লক্ষ লক্ষ মানুষকে তার নিজের উৎপাদন ব্যবস্থার বাইরে বের ক'রে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে, অসংখ্য মানুষ ক্রমাগত আরো বেশি দুর্দশা, বেকারি, অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাচ্ছে। মানুষকে ভবঘুরেতে পরিণত ক'রে দিচ্ছে এই সিস্টেম।

  যে কোন উপায়ে লাভের অংক বাড়ানোই পুঁজিবাদের মূলমন্ত্র। পুঁজির ডান বাম সব দল বা গোষ্ঠীর কাজ শেষবিচারে এই প্রচেষ্টাকেই সফল ক'রে তোলা। তবে এই কাজ যত অসম্ভব বা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে, তত বেশি বেশি ক'রে পুঁজিপতিদের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সেইসব সেক্টরগুলো নিয়ে মারমার কাটকাট প্রতিযোগিতা চলছে যেসব সেক্টরে টাকা ঢাললে সবথেকে বেশি এবং সবথেকে তাড়াতাড়ি লাভ হবে। আর একারণেই শিল্প-ক্ষেত্রগুলোর স্থান বদল (relocation) এবং আউটসোর্সিং এত গতি পাচ্ছে। ইউরোপীয় এবং আমেরিকান পুঁজিপতিরা তাদের উৎপাদন পদ্ধতির কিছুটা বা পুরোপুরি স্থানান্তরিত করছে বা তাদের অনেক কাজই আউটসোর্শ করছে সেইখানে যেখানে যথেষ্ট সস্তায় যথেষ্ট দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যাবে। এই হল বতর্মানে চীন এবং ভারতের ‘আশ্চর্য্য' উন্নতির ভেতরের কারণ। পচে যাওয়া পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থার মধ্যে  এই ‘শিল্পায়ন'-র জন্যই এখন জমি দরকার। রিয়েল এস্টেটের বাড় বাড়ন্ত এরই ভিত্তিতে এবং শুধু চীন ভারত নয়, সারা বিশ্বেই এই বিজনেস এখন দ্রুত গতি লাভ করেছে। অতীতের ‘স্বর্ণ-তৃষা'র মত এখন ‘ ভূমি-তৃষা' সারা ভারতে মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়েছে-জমির দাম বাড়ছে অবিশ্বাস্য হারে। জমি নিয়ে ফাটকা কারবার চলছে দ্রুততার সঙ্গে প্রচুর লাভ তুলে আনার জন্য। কৃষকদের পক্ষে তাদের জীবিকার ওপর এই আপাত অদৃশ্য পুঁজিবাদী আক্রমণ প্রতিহত করা অসম্ভব। ঐতিহাসিক ভাবে বাতিল হয়ে যাওয়া মৃত্যুপথযাত্রী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চলমান অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই  লক্ষ লক্ষ কৃষক জমি হারাচ্ছে এবং হারাবে।

তাছাড়া, গ্রামীন অর্থনীতি পুরোপুরি বিশ্ব পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে আত্মীকৃত হয়ে গেছে। বাজার-অক্টোপাশ সমস্ত   অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে তার সহস্র পাশে বেঁধে দমবন্ধ ক'রে দিচ্ছে, হাজার হাজার খুদে চাষীর জীবন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত, আশাহীন হয়ে পড়ছে এই সুবিপুল এবং মূলত নিয়ন্ত্রণহীন বিশ্ব তথা জাতীয় বাজারের প্রচন্ড চাপের মুখে। এই পরিস্থিতি তাদের আত্মহত্যা অথবা জমি বিক্রির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলতঃ যেভাবেই হোক কৃষকদের জীবন জীবিকার চলতি উপায় বজায় রাখার কোন উপায় আজ আর খোলা নেই। যতদিন এই পুঁজিবাদ টিকে আছে ততদিন বুর্জোয়াদের নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য জমি নেওয়ার এই প্রক্রিয়া রোধ করা সম্ভব নয়। যত ভালো স্বপ্নই তারা দেখাক বা দেখুক না কেন, কোন রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দল একে আটকাতে পারবে না।

ভুয়ো বিকল্প

সরকার এবং বিরোধী দল সকলেই কতকগুলো ভুয়ো বিকল্প হাজির করেছে। বামফ্রন্ট সরকার বলছে ‘শিল্পায়ন'-র মাধ্যমে যারা জমি দিচ্ছে বা  যারা জমির ওপর ভিত্তি ক'রে জীবিকা করে তারা সকলেই অন্নসংস্থানের সুযোগ পাবে। এটা নির্জলা মিথ্যা। বেশিদিনের কথা নয়, সিপিআইএম নিজেই বলেছে ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক গ্রোথ আসলে কার্মসংস্থানহীন গ্রোথ। এটা সত্যি। তাহলে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটা উল্টো হবে কোন্ ম্যাজিকে? বিরোধীরা বলছে চাষীদের হাত থেকে জমি কেড়ে না নিলেই প্রবলেম সলভ্‌ড্-কিন্তু আমরা আমাদের বিশ্লেষণে দেখিয়েছি পুঁজিবাদের আজকের এই সংকটের মুখে একথা হানড্রেড পারসেন্ট ভাঁওতা ছাড়া কিছুই নয়। এই জঘণ্য মিথ্যাচার ক'রে এরা চাষীদের প্রাকপুঁজিবাদী জীবনধারণের অনিশ্চয়তার গাড্ডাতেই রেখে দিতে চাইছে যাতে ক'রে প্রয়োজন মত তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বলী দেওয়া যায়। আসলে এই ব্যবস্থার মধ্যে কোন সমাধান আজ আর নেই।

সমাধানের একমাত্র রাস্তা

ওইসব মিথ্যে বিকল্পগুলোর কোনটাই সমস্যার সমাধান করতে পারেনা। বাম সরকার পাল্টে ডান বা অতিবাম তথাকথিত ভীষণ ‘গণতান্ত্রিক' সরকার এনেও কোন সমাধান সম্ভব নয়। ভীষণরকম রাডিক্যাল উপায়ে (যথা মাওয়িস্ট) লাঙল যার জমি তার ক'রে জমিকে হাজার টুকরো ক'রে অসংখ্য ক্ষুদ্র মালিকানা তৈরি করাটাও কোন সমাধান নয়-এটা বাস্তবে প্রমাণিত। আসলে, এই ভয়ংকর অবস্থার জন্য দায়ী যে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তাকে উচ্ছেদ করাটাই হল আজকের একমাত্র কর্তব্য। এই কাজ করতে না পারলে মানব প্রজাতির অস্তিত্বই আরো বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই আজ যারা পুঁজির বাম ডান সবরকম দলের বাইরে দাঁড়িয়ে,   নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা যাঁরা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন, যাঁরা নন্দীগ্রামের মত এই নিদারুণ অমানবিক ঘটনায় গভীরভাবে ব্যথিত তাঁদের চিন্তা করা দরকার সঠিক বিকল্পটা  অর্থাৎ বিশ্বপুঁজিবাদের ধ্বংস সাধন।  আর একমাত্র বিশ্ব-শ্রমিকশ্রেণিই পারে একাজে নেতৃত্ব দিতে এবং এই কাজকে সফলভাবে সমাধা করতে। এখানেই নিহিত আছে শ্রমিকশ্রেণিসহ সমস্ত শোষিত অংশের মুক্তির চাবিকাঠি। অতএব সমস্ত শোষিত মানুষের, বিপ্লবী শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই, কেননা প্রকৃত সমাধানের পথে একমাত্র শ্রমিকশ্রেণিই তাদের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে।

 ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিস্ট কারেন্ট (আইসিসি)

২০শে মার্চ, ২০০৭

[1] বতর্মানে ভারতের প্রাধান্য বিস্তারকারী স্ট্যালিনিস্ট পার্টি

Book traversal links for সিঙুর , নন্দীগ্রাম - বামপন্থী বর্বরতার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ

  • ‹ Communist Internationalist - 2007
  • Up
  • Communist Internationalist - 2008 ›
নীড়পাতা
ইন্টারন্যাশানাল কম্যুনিস্ট কারেন্ট
দুনিয়ার মজদুর এক হও!

Footer menu

  • ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিষ্ট কারেন্টের মৌলিক রাজনৈতিক অবস্থান
  • Contact