englishfrançaisdeutschitalianosvenskaespañoltürkçenederlandsportuguêsΕλληνικά
русскийहिन्दीفارسی한국어日本語filipino中文বাংলাmagyarsuomi
CAPTCHA
This question is for testing whether or not you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.
  • Reset your password
নীড়পাতা
ইন্টারন্যাশানাল কম্যুনিস্ট কারেন্ট
দুনিয়ার মজদুর এক হও!

Main navigation

  • ICC’র সাথে যোগাযোগ
  • ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিষ্ট কারেন্টের মৌলিক রাজনৈতিক অবস্থান
  • আইসিসি-র প্ল্যাটফর্ম

Covid-19 pandemic: সর্বাত্মক পুঁজিবাদী বর্বরতা অথবা প্রলেতারিয় বিশ্ববিপ্লব

Breadcrumb

  • নীড়পাতা
  • Communist Internationalist - 2020s
  • Communist Internationalist - 2020

প্রতিদিন হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলিতে নাভিশ্বাস অবস্থা। তারা ভয়ানক দ্বিধায় আছে যে, অসুস্থদের মধ্যে কে আগে চিকিৎসা পাবে, তরুণরা নাকি বৃদ্ধরা ? স্বাস্থ্যকর্মিরা নিজেরাই সংক্রমিত, অবসন্ন এবং মৃত্যুপথযাত্রী। সর্বত্রই চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। প্রতিটি দেশের সরকার এখন ‘ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’, ‘জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থ’ ইত্যাদির দোহাই দিয়ে নিজেদের মধ্যে মারাত্মক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। অর্থনৈতিক বাজার নিম্নমুখী। কোন দেশ কার মাস্ক চুরি করছে তাই নিয়ে আধিভৌতিক তরজা চলছে। ইতিমধ্যে দশ মিলিয়ন লোক বেকারত্বের নরকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। সরকার এবং তার পোষা মিডিয়ার মিথ্যাচারের বন্যা অব্যাহত। এটাই হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর ভয়ানক হকিকত। ১৯১৮-১৯ সালের ভয়ানক স্প্যানিস ফ্লুর পরে সব থেকে ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যসংকট এই করোনা মহামারী। যদিও সেই সময়ের থেকে আজকের বিজ্ঞান অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ রকম বিপর্যয় কেন? কীভাবে এমন ঘটলো?

আমাদেরকে বারেবারে এই কথাটা বলা হচ্ছে যে, এই ভাইরাসটি বিশেষ ধরণের। এর সংক্রমণের ক্ষমতা অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশি এবং স্বভাবতই অনেক বেশি মারাত্মক। কথাটা সত্যি তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বর্তমানের বিধ্বংসী রূপটাকে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট নয়। দুনিয়াজোড়া ধ্বংসের দায়িত্ব, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর দায় এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যেই নিহিত আছে। মানুষের প্রয়োজনের জন্য নয়, মুনাফার জন্যই উৎপাদন এবং শ্রমজীবী শ্রেণিকে অমানুষিক শোষণের বিনিময়ে সস্তা উৎপাদনের নিরন্তর খোঁজ, বঞ্চিত মানুষজনের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান হিংসাত্মক আক্রমণ, দেশ এবং কোম্পানীদের মধ্যে লাগামছাড়া প্রতিযোগিতা- এইসবই হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য, যেগুলো একত্রিত হয়ে উপহার দিয়েছে বর্তমান বিপর্যয়ের।

পুঁজিবাদের অপরাধযোগ্য অবহেলা

যারা এই সমাজব্যবস্থা চালায়, মানে বুর্জোয়া শ্রেণি এবং তার পেটোয়া রাষ্ট্রযন্ত্র ও পোষা মিডিয়া আমাদেরকে বারংবার এত্তেলা করে যে এই মাহামারী খুবই অনভিপ্রেত। সাধারণত দূষণাভিমুখী জলবায়ূ পরিবর্তনের জন্য ওরা যে মিথ্যা বলে অনেকটা সেই রকমই। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে কোভিড-১৯ এর মত অতিমারীর কথা বলে আসছেন। কিন্তু সরকার সবসময়ই সেসব শুনতে অস্বীকার করেছে। এমনকি তারা ২০০৯ সালের CIA এর রিপোর্টকেও পাত্তা দেয় নি, যেখানে পরিষ্কার করে বর্তমান অতিমারির ভয়ানক চরিত্রের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন হলো, বুর্জোয়া সমাজ এবং রাষ্ট্র কেন এরকম অন্ধের মত আচরণ করে? এটা তারা করে খুবই সাধারণ কারণের জন্য। পুজিবাদের সাধারণ ধর্ম মুনাফার জন্য বিনিয়োগ এবং সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই মুনাফা অর্জন। আগামীকালের মানবসমাজের জন্য বিনিয়োগ মোটেই লাভজনক নয়, বরং সেটা শেয়ার বাজারের মূল্যের পতন ঘটায়। তাই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বপরিস্থিতিতে জাতীয় বুর্জোয়াদের স্বার্থরক্ষার জন্যই যাবতীয় বিনিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করে তারা। আমরা জানি, মিলিটারি এবং প্রতিরক্ষা গবেষণার জন্য পাগলের মত খরচ না করে জনস্বাস্থ্যে এবং জনকল্যাণে যদি খরচ করা হতো তাহলে এই অতিমারী কখনো গড়ে উঠতো না। কিন্তু এই সম্ভাব্য স্বাস্থ্য-সংকটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে সরকার সবসময় স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেই আক্রমণ করেছে। এই আক্রমণ দুই দিক থেকেই,- গবেষণার মান ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সরবরাহকৃত প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো।

আজ যদি উন্নত বিশ্বের মধ্যমণি রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক মাছির মত মারা যায় তার প্রধানতম কারণ হচ্ছে রোগ-প্রতিরোধ গবেষণার ক্ষেত্রে আর্থিক বরাদ্দ কমানো। সেইজন্য ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় সুরক্ষা পরিষদ ভেঙে দেন, যেটা অতিমারী আটকানোর জন্য বিশিষ্ট দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প নতুন কিছুই করেন নি। যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্রনেতারা যা করে এসেছেন সেটা তারই অনুকরণমাত্র। সেইজন্য করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত যাবতীয় গবেষণা গত পনেরো বছর আগেই সর্বত্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে, কারণ এর ভ্যাকসিন দামে পোষাবে না।

একইভাবে সেই সব হাসপাতালগুলির দুরবস্থা এবং সর্বনাশা চিত্র দেখে বাম-ডান সব ধরণের বুর্জোয়া নেতা এবং রাজনীতিবিদদের ন্যাক্কারজন নাকি ক্কান্না খুবই বিরক্তিকর যেখানে স্বাস্থ্যকর্মিদের বাধ্য হয়ে সেখানে কাজে যেতে হয় এবং যেখানে বুর্জোয়া সরকার খুব পরিকল্পনামাফিক গত পঞ্চাশ বছরে এগুলিকে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করেছে, বিশেষ করে এটা ঘটেছে ২০০৮ সালের মহামন্দার পর থেকে। সর্বত্রই স্বাস্থ্য-পরিষেবা সংকুচিত করা হয়েছে। হাসপাতালের বেড সংখ্যা কমানো হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মিদের কাজের চাপ প্রচুর বাড়ানো হয়েছে। তার ফলে এখন আমরা কী দেখছি, মাস্ক, প্রোটেক্টিভ ড্রেস, জীবানুনাশক টেস্টিং কিটের সর্বত্রগামী হাহাকার, বেশ কিছু বছর থেকেই প্রায় সমস্ত দেশই এই সব রক্ষাকারী অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মজুত কমিয়ে এনেছে শুধুমাত্র খরচ বাঁচানোর জন্য। গত কয়েকমাস আগেও তারা COVID-19 এর দ্রুত অতিসংক্রমণ আন্দাজ করতে পারে নি। এমন কি গত নভেম্বর,২০১৯ থেকে তারা নিজেদের অপরাধজনক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আড়াল করার জন্য এটা প্রচার করছে যে যারা বাহক নয় তাদের ক্ষেত্রে মাস্কের কোন প্রয়োজন নেই। আর পৃথিবীর ধারাবাহিকভাবে অবহেলিত মহাদেশ আফ্রিকা অথবা লাতিন আমেরিকার ক্ষেত্রে হিসেবটা কেমন? কঙ্গোর কিনসায় ১০ মিলিয়ন মানুষের জন্য ৫০ টি ভেন্টিলেটর! মধ্য আফ্রিকায় যেখানে খাবার জল নেই সেখানে হাত ধোয়ার পদ্ধতি সম্বলিত লিফলেট বিলি হচ্ছে। সর্বত্রই একই পীড়াদায়ক কান্না,- “আমরা অতিমারির মুখে নিতান্তই অসহায়”!

পুঁজিবাদ হলো সকলের বিরুদ্ধে প্রত্যেকের লড়াই

প্রতিটি দেশের মধ্যে ভয়ানক বৈরীতার পরিবেশ এই ভাইরাসকে আটকানোর জন্য যে ন্যূনতম পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন তার প্রতিবন্ধক। যখন এটা শুরু হল, চীনা বুর্জোয়া নিজের অর্থনীতি এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য এর ভয়াবহতা লুকোনোর জন্য সবিশেষ গুরুত্ব দিলো। যে ডাক্তার এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সজাগ করতে চেয়েছিল রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিতে দ্বিধা করে নি। শুধু তাই নয়, তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যে আন্তর্জাতিক সাধারণ সমন্বয় নীতি বুর্জোয়া গোষ্ঠি গঠণ করেছিল সরঞ্জামের অপ্রতুলতার জন্য তা ভেঙে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা নির্দেশিকা দিতে অক্ষম আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো মিলিত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। এই বিভাজনই লক্ষণীয়ভাবে বিশৃঙ্খলা বাড়তে দিয়েছে এবং অতিমারীর উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। “প্রতিটি মানুষ নিজের জন্য” – এই তত্ত্ব এবং সাধারণ প্রতিযোগিতার তীব্রতাই শাসক শ্রেণীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ‘মাস্কের জন্য লড়াই’ এর একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ। প্রতিটি দেশই ফাটকা খেলে, যুদ্ধকালীন আদেশে এমনকি চুরিচাপাটি করে জিনিসপত্র দখল করছে। আমেরিকা ফ্রান্সের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চীনা মাস্কভর্তি প্লেন আটক করছে, ফ্রান্স আবার সুইডেনগামী মাস্কের জাহাজ বাজেয়াপ্ত করেছে, চেক-প্রজাতন্ত্র তার নিয়ন্ত্রণরেখায় ইটালীগামী ভেন্টিলেটর এবং মাস্ক আটক করে নিয়েছে, জার্মানী কানাডার জন্য যে মাস্ক তৈরি করেছিল তা অদৃশ্য হয়ে গেছে । এই হচ্ছে ‘মহান গণতন্ত্রের’ আসলি চেহেরা যা নিকৃষ্টতম চোর এবং গুন্ডা ছাড়া অন্য কিছু নয়।

শোষিতের উপর অভাবনীয় আক্রমণ

‘বুর্জোয়াদের কাছে আমাদের জীবনের চেয়ে মুনাফা দামী” এই সত্য ইটালিতে ধর্মঘটী গাড়ি-শ্রমিকেরা চিৎকার করে জানিয়ে দিচ্ছে। সমস্ত দেশই যে কোন মূল্যে নিজেদের জাতীয় উৎপাদন চালু রাখার জন্য দেশের জনগণকে অবরুদ্ধ করে সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে যতটা গড়িমসি করা যায় ততটাই করছে। বল্গাহীনভাবে বেড়ে চলা মৃত্যু মিছিলের ভয় লকডাউনের দিকে চালিত করে নি। অনেক সাম্রাজ্যবাদী ধ্বংসলীলা শতাব্দী ধরে চলছে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অজুহাতে যুদ্ধলীলা, নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছে শোষিতশ্রেণির জীবনের প্রতি শাসক সম্প্রদায়ের নিদারুণ অবজ্ঞা। আমাদের শাসক আমাদের জীবনের তোয়াক্কা করে না। বিশেষতঃ যখন ভাইরাসের যুতসই অজুহাত আছে। বুর্জোয়া দৃষ্টিভঙ্গিতে অসুস্থ এবং বৃদ্ধলোকেদের মেরে ফেলাই উচিত। কারণ তারা অ-উৎপাদনশীল। এখন দেখছি হার্ড-ইমিউনিটির নামে ভাইরাসকে ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া এবং তার ‘স্বাভাবিক’ কাজ করতে দেওয়া বরিস জনসন এবং অন্যান্য নেতার প্রাথমিক পছন্দ ছিলো। প্রতিটি দেশই অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলার ভয়ে লকডাউনের দিকে ঝুঁকলো। কিছু দেশে ধারাবাহিক অবহেলার বিরুদ্ধে জমে ওঠা ক্ষোভ এবং ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যা থেকে উদ্ভূত সামাজিক বিশৃঙ্খলার ভয়ে এই লকডাউন কার্যকর হলো। এইভাবে যদি তারা অর্ধেক লোকের ক্ষোভকেও ঠেকিয়ে রাখতে পারে। সামাজিক আইসোলেশন আসলে একটা সম্পূর্ণ ধাপ্পা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ বাসে ট্রেনে টিউবে কারখানায় সুপার মার্কেটে একত্রিত হতে বাধ্য। ইতিমধ্যে বুর্জোয়ারা চাইছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লকডাউন তুলে দিতে। যখন অতিমারী মারাত্মক থাবা বসাচ্ছে তখনই তারা সেক্টরের পর সেক্টর ফার্মের পর ফার্মে অসন্তোষ সত্তেও শ্রমিকদের কাজে পাঠানোর ফন্দী আটছে।

বুর্জোয়া সম্প্রদায় শোষণের সব শর্ত বহাল রাখছে এবং তাকে আরো পাশবিক করে তোলার জন্য আক্রমণের নতুন পরিকল্পনা করছে। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রথম তিন সপ্তাহে দশ লক্ষ কর্মহীন, যাদের অনিয়মিত অথবা অস্থায়ী কাজ বন্ধ আছে তাদের অধিকাংশেরই কোনো উপার্জন থাকবে না। আর যাদের বেঁচে থাকার সামান্য সামাজিক সুবিধা আছে তারাও আর বেশিদিন বাড়িভাড়া কিংবা চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারবে না। সারা বিশ্বজুড়ে মন্দার পরিস্থিতি ও তার ফলে অর্থনৈতিক লুটপাটের পরিস্থিতি ত্বরান্বিত হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবিষ্ফোরণ, প্রচুর ছাঁটাই, বেতন কাটা, ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি ভীতিজনক পরিস্থিতির সঞ্চার হয়েছে। প্রতিটি দেশই ‘ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের’ জন্য আত্মত্যাগের নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছে।

বুর্জোয়াদের ডাকা জাতীয় স্বার্থ আজকে আমাদের স্বার্থ নয়। এটা জাতীয় অর্থনীতির সেই রক্ষাকবচ এবং বাজেটবরাদ্দ কমিয়ে শোষিতের জীবনধারণের মানকে তলানিতে নামিয়ে আনার পুরাতন সাধারণ কৌশল। আগামীকাল আমাদের এই মিথ্যেই খাওয়ানো হবে যে অর্থনীতির এই বেহাল দশা অতিমারীর জন্য। এতে করে শোষিতদের আরো বেশি করে কষে বাঁধা যাবে এবং তারা আরো দারিদ্র্য এবং বঞ্চনা মেনে নেবে। বর্তমান পচনশীল সমাজ, পরিবেশ নিধন, দূষণ, জলবায়ূ পরিবর্তন, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে এবং ধ্বংসের বিস্তার, অধিকাংশ মানুষের ক্রমবর্ধমান হারে অনিবার্য দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত হওয়া, অসংখ্য মানুষের পরিযায়ী বা রিফিউজি হয়ে উঠতে বাধ্য হয়ে যাওয়া, ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় আদর্শবাদ, ধর্মান্ধতাবাদ ইত্যাদি নানাবিধ বৈশিষ্ট্যের মতোই এই অতিমারীও পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার অবক্ষয়িত অবস্থার একটা লক্ষ্মণমাত্র। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা যে তার শেষের দিনে পৌঁছে গেছে তা নিশ্চিত। এই ব্যবস্থা মানবসভ্যতাকে দারিদ্র্য, বর্বরতা, ধ্বংস এবং মৃত্যুর দিকে চালিত করছে।

শুধুমাত্র প্রলেতারিয়াতই পারে পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে

কিছু সরকার এবং তার মিডিয়া যুক্তি দিচ্ছে যে অতিমারীর পর পৃথিবী আর আগের মত থাকবে না। এই বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশগুলি আরো মানবিক এবং আরো ভালো পরিচালিত পুঁজিতন্ত্র হয়ে উঠবে। এই একই ধুয়ো আমরা ২০০৮ সালের পরেও শুনেছিলাম। রাষ্ট্রনেতারা বুকে হাত দিয়ে গোটা দুনিয়াকে জানিয়েছিলো,-“দুর্বৃত্ত অর্থনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ”। প্রতিজ্ঞা করেছিল দুঃসময়ের আত্মত্যাগকে পুরস্কৃত করা হবে। শুধুমাত্র দুনিয়াজোড়া ক্রমবর্ধমান অসাম্যের দিকে নজর দিলেই বোঝা যাবে পুঁজিতন্ত্র “সংস্কারেরে” এইসব মিথ্যা বুলি শুধুমাত্র আমাদের জীবনযাত্রার নতুন অধঃপতিত মানকে হজম করানোর জন্য।

শোষকশ্রেণি পৃথিবীর পরিবর্তন আনতে পারে না এবং তারা কখনোই মানুষের জীবন ও সামাজিক চাহিদাকে তাদের নির্দয় অর্থনীতির নিয়মের উপরে রাখতে পারে না। পুঁজিতন্ত্র একটি শোষণভিত্তিক ব্যবস্থা যেখানে মুষ্টিমেয় শাসকগোষ্ঠি বৃহত্তর সম্প্রদায়ের শ্রম থেকে মুনাফা এবং সুবিধা ভোগ করে। আগামীর চাবি, অন্য পৃথিবীর প্রতিজ্ঞা, দেশ ও শোষণ ছাড়া সত্যিকারের মানবিক পৃথিবীর সম্ভাবনা শুধুমাত্র দুনিয়াজোড়া সংগ্রামরত শ্রমিকশ্রেণির ঐক্য এবং সংহতির উপর নির্ভরশীল।

স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর অসহ্য নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের স্বতস্ফূর্ত সংহতির প্রবাহ সরকার এবং রাজনীতিবিদরা বিপথগামী করলো, ফলে সেটা দুনিয়াজুড়ে দরজা আর বারান্দা থেকে হাততালিতে পরিণত হলো। অবশ্যই এইসব হাততালি হয়ত সেইসব কর্মীদের হৃদয় উষ্ণ করবে যারা এই নাটকীয় কর্মপরিস্থিতিতে সাহস আর উৎসর্গীকৃত ইচ্ছায় ভর করে মানুষের সেবা করছে এবং প্রাণ বাঁচাচ্ছে। কিন্তু শোষিত শ্রেণির প্রতি আমাদের এই সংহতি শুধুমাত্র পাঁচমিনিটের হাততালিতে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। মোদ্দাকথা, রাজনৈতিক রঙ নিরপেক্ষভাবে দুনিয়াজোড়া সমস্ত সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের নিন্দায় সোচ্চারিত হতে হবে। অর্থাৎ, মাস্ক ও অন্যান্য রক্ষাকারি সরঞ্জামের দাবি জানাতে হবে, যখনই সম্ভব ধর্মঘট ক’রে নিশ্চিত করতে হবে যতদিন স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের প্রয়োজন মত সরঞ্জাম পাবে না ততদিন তারা অনাবৃত মুখ নিয়ে মৃত্যুর মুখে নিক্ষিপ্ত হবে না আর যেসব শ্রমিক হাসপাতালের নয় তারা সেখানে কাজ করবে না।

আজ যখন লকডাউন লাগু আছে তখন আমরা এই হত্যাকারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন করতে পারবো না। আমরা সমবেত হয়ে সংগ্রাম ধর্মঘট বা প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের রাগ কিংবা সংহতি কিছুই প্রকাশ করতে পারবো না। তার কারণ শুধুমাত্র লকডাউন নয়, পাশাপাশি আমাদেরকে আমাদের আসল শক্তির উৎস পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই দৈত্যাকার ব্যবস্থা এবং শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত লড়াই এবং বৃহত্তর আন্দোলনের রসদ যা আমরা অতীতে অনেকবার দেখিয়েছি কিন্তু ভুলে গেছি।

ইতালিতে গাড়ি শিল্প ধর্মঘট, কিংবা ফ্রান্সের সুপার মার্কেটে, নিউইয়র্কের হাসপাতালের সামনে, কিংবা উত্তর ফ্রান্সে শ্রমিকশ্রেণির যে যথেচ্ছ ধিক্কার, শুধুমাত্র শাসকের লাভের জন্য মাস্ক গ্লাভস সাবান ছাড়া পশুর পালের মত ‘ভাইরাসের খাদ্য’ হয়ে কাজ করতে অস্বীকার করা - এগুলো সব বিক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া এবং এগুলি সমগ্র শ্রমিকশ্রেণির শক্তিকে খন্ডিত করে। তবুও শ্রমিকশ্রেণি শাসকের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন অপরাধ যে অবশ্যম্ভাবী তা মানতে রাজি নয় তা জানান দেয়।

শ্রেণিসংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হবার এই সেই পরিস্থিতি। কারণ COVID-19 এর পরে পৃথিবীজোড়া অর্থনৈতিক মন্দা, প্রচুর বেকারত্ব এবং আত্মত্যাগের নতুন “সংস্কার” শুরু হবে। তাই এক্ষুণি আমাদের আগামী সংগ্রামের জন্য তৈরি হতে হবে। কিন্তু কীভাবে? এটা হতে পারে বিভিন্ন ইন্টারনেট চ্যানেলে, ফোরাম্‌ ফোনে যথাসম্ভব বেশি ‘আলোচনা করে এবং অভিজ্ঞতা ও ধারণা বিনিময় করে’।

বুঝতে হবে COVID-19 নয়, পুঁজিতন্ত্রই আমাদের চরমতম শত্রু। রাষ্ট্রের পিছনে মিছিল করে নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোই আসল সমাধান। প্রত্যাশা ভন্ড রাজনীতিকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে তৈরি হয় না, তৈরি হয় শ্রমিকশ্রেণির লড়াইয়ের ঐক্য নির্মাণে। পুঁজিবাদী বর্বরতার একমাত্র বিকল্প বিশ্ববিপ্লব!
 

আমাদের ভবিষ্যত শ্রেণিসংগ্রামের উপরই নির্ভর করছে!

ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিস্ট কারেন্ট

www.internationalism.org

Book traversal links for Covid-19 pandemic: সর্বাত্মক পুঁজিবাদী বর্বরতা অথবা প্রলেতারিয় বিশ্ববিপ্লব

  • ‹ Communist Internationalist - 2020
  • Up
  • Communist Internationalist - 2021 ›
নীড়পাতা
ইন্টারন্যাশানাল কম্যুনিস্ট কারেন্ট
দুনিয়ার মজদুর এক হও!

Footer menu

  • ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিষ্ট কারেন্টের মৌলিক রাজনৈতিক অবস্থান
  • Contact