englishfrançaisdeutschitalianosvenskaespañoltürkçenederlandsportuguêsΕλληνικά
русскийहिन्दीفارسی한국어日本語filipino中文বাংলাmagyarsuomi
CAPTCHA
This question is for testing whether or not you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.
  • Reset your password
নীড়পাতা
ইন্টারন্যাশানাল কম্যুনিস্ট কারেন্ট
দুনিয়ার মজদুর এক হও!

Main navigation

  • ICC’র সাথে যোগাযোগ
  • ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিষ্ট কারেন্টের মৌলিক রাজনৈতিক অবস্থান
  • আইসিসি-র প্ল্যাটফর্ম

আমাদের কমরেড কিষণের প্রতি শ্রদ্ধা

Breadcrumb

  • নীড়পাতা
  • Communist Internationalist - 2020s
  • Communist Internationalist - 2021

২০২০ সালের ২৬ শে মার্চ সারা বিশ্ব যখন কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত  তখনই কমরেড কিষণের মৃত্যুতে  আই. সি. সি  র সঙ্গে যুক্ত  সকলেই এক বেদনাঘন অবস্থার সম্মুখীন হলাম। তাঁর মৃত্যু 'আই সি সি ' র কাছে যেমন বিশাল ক্ষতি,  তেমনি ' আই. সি. সি' র ভারতীয় অংশের কাছেও সমান ক্ষতি । কিষণের অভাব আমরা  সবাই গভীর ভাবে অনুভব করব। আই সি সি র কর্মকান্ডে কিষণের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত  কিষণ ছিলেন একজন লড়াকু  যোদ্ধা ।

ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এক গন্ডগ্রামে   ১৯৩৯ সালে কিষণ জন্মগ্রহণ করেন ।   ঊনিশ শতকের  ষাটের দশকে  কিষণ যখন  স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করছে  ঠিক সেই সময়  দীর্ঘ বিরতির পর  শ্রমিক শ্রেণীর পুনরাবির্ভাব  হচ্ছে ১৯৬৮  সালে ফ্রান্সের নয় লক্ষ  শ্রমিকের  স্ট্রাইকে   অংশ গ্রহণের মাধ্যমে।    পরের বছর ১৯৬৯ সালের ঊষ্ণ শরতে ইটালীর শ্রমিকদের স্ট্রাইকে অংশ গ্রহণ এবং ১৯৭০সালে  পোলিস শ্রমিকদের স্ট্রাইকে অংশ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে তা আরও তীব্রতর হচ্ছে ।এর অর্থই হচ্ছে প্রতিবিপ্লবী পর্বের  অন্তিম লগ্নের ঘোষণা মুখরিত হয়ে উঠছে। ঊনিশ শতকের ষাটের দশক সারা পৃথিবীর সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়  ছাত্রছাত্রী দের কাছে  প্রতিবাদের দশক। বিশেষ করে ভিয়েতনাম যুদ্ধ  ও জাতিবৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা তৎপর হয়ে ওঠে। তাদের কাঙ্খিত বিপ্লবী পরিবর্তনের কাজ  যথেষ্ট   আন্তরিক ছিল  কিন্তু  'তৎক্ষণাৎ সমাজ পরিবর্তনের গোলকধাঁধায় তারা  মূলত পেটিবুর্জূয়া  শিবিরের হয়ে ই কাজ করেছিল। ১৯৬৮ সালের আগে বা পরে সারা পৃথিবীতে যে সব তথাকথিত 'বামপন্থী সংগঠণ’' অর্থাৎ বুর্জোয়া সংগঠণগুলি ছিল তারা যুব সম্প্রদায়কে শ্রমিকশ্রেণীর  স্বার্থরক্ষকের ভূমিকার  পরিবর্তে নিজেদের  স্বার্থ রক্ষার কাজে নিযুক্ত করতে  তৈরি ছিল। পৃথিবীব্যাপি এই অবস্থার মধ্যে কিষণও বিভ্রান্তির শিকার হয়  এবং নকশাল আন্দোলনে  ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৬৩-৬৫ সেশনে কিষণ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সের এম. এস সি র  ছাত্র ছিল।  মাস্টার্স  ডিগ্রিতে কিষণ ফিজিক্সে  ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয় ।  গবেষণার কাজে লিপ্ত থাকার সময়ই কিষণ   যুব সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে  নকশাল আন্দোলনের প্রতি  আকৃষ্ট হয়। ধীরে ধীরে নকশাল আন্দোলন আর  মাওবাদ সমার্থ হয়ে ওঠে। গবেষণার কাজ অসমাপ্ত রেখেই কিষণ   নকশাল আন্দোলনের ঘুর্নাবর্তে নিজেকে নিক্ষেপ করে। আর এর ফল হিসেবে   তাকে জেলে যেতে  হয়। দীর্ঘ আট বছর  পূর্ন মেয়াদের জেল খাটার পর ১৯৭৮ সালে কিষণ জেল থেকে  ছাড়া পায়।  জেলের অকথ্য অত্যাচারের ক্ষত তাকে জীবনের  শেষ দিন পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হয়েছে। জেলের  অপ্রশস্থ ও অস্বাস্থ্যকর     কুঠুরী  এবং  অপর্যাপ্ত ও কখনো কখনো অখাদ্য খাবারের কারণে তার টি. বি  হয়।  ফুসফুসের   এই সংক্রমণের   ক্ষত জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত  তার সর্বক্ষণের  সাথী  হয়ে থেকে গিয়েছিল। জেলে বসেই কিষণ কার্ল মার্ক্সের বিশেষ কিছু লেখা পড়েন।  পরবর্তী কালে   কম্যুনিস্ট  লেফট এর  সংস্পর্শে এলে এসব পড়াশোনাই তাকে  খোলামেলা  আলোচনায় অংশগ্রহণে সাহায্য করে। 

খুব কম সংখ্যক মানুষের মধ্যে কিষণ একজন ব্যক্তি, বামপন্থী বুর্জোয়া আদর্শেরই ব্যাধিপূর্ণ  উত্তরাধিকারি মাওবাদ  যাকে শুঁষে  নিলেও  সেখান থেকে যিনি নিজেকে  সম্পূর্ণ মুক্ত করে  কম্যুনিস্ট লেফট ধারার সংগে নিজেকে যুক্ত করে শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করে। এই উত্তরণের  জন্য   অনিবার্য রূপে তার সোপান  ছিল আশি ও নব্বইয়ের দশক জুড়ে গভীর ধৈর্য সহকারে  আই সি সি র  সঙ্গে  দীর্ঘ আলোচনার  মাধ্যমে   স্বচ্ছ ধারনা অর্জনের প্রক্রিয়া। এই  স্বচ্ছ ধারণা লাভের চলমান প্রক্রিয়া ই হয়ে ওঠে  ১৯৮৯ সালে  ভারতবর্ষের বুকে  প্রথম'  আই সি সি' র ভ্রূণ তৈরির   প্রধান  হাতিয়ার।    আই সি সি র সংগে যুক্ত হওয়ার পরই  কম্যুনিস্ট লেফট এর  আসল ইতিহাস কিষণ জানতে পারে। আই সি সি র সংগে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে  কিষণ যখন বুঝতে পারে মাওবাদ হল বুর্জোয়া আদর্শেরই অন্য রূপ,    প্রতিবিপ্লবী  রাজনীতির  স্রোত , তখন সে চমকে  উঠেছিল। “মাওবাদ কোনভাবেই শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামের সাথে যুক্ত নয়, না তার  সচেতনতা না তার বৈপ্লবিক প্রতিষ্ঠানের সাথে। মার্কসীয় ধারার সাথে এর কোনো সংযোগ নেই:  এটা না কোনো অভ্যন্তরীণ প্রবণতা, না সর্বহারার বৈপ্লবিক তত্ত্বের কোন অগ্রগমন। পক্ষান্তরে বলা যায়, মাওবাদ মার্কসীয় ভাবধারার একটি স্থূল মিথ্যাকরনের প্রয়াস; এর এক ও  একমাত্র  লক্ষ্য হল প্রত্যেক বৈপ্লবিক নীতিকে সমূলে কবর দেওয়া, সর্বহারার শ্রেণিসচেতনতাকে বিভ্রান্ত করা এবং নিকৃষ্টতম নির্বুদ্ধিতা ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করা। ‘তত্ত্ব’ হিসাবে  মাওবাদ প্রতিবিপ্লব ও   সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের কালে ক্ষয়িষ্ণু বুর্জোয়া সম্প্রদায় দ্বারা  গৃহীত এক দুষ্ট অবলম্বন স্বরূপ”(১)। মাওবাদ সম্পর্কে আই সি সি র এই ব্যাখ্যা কমরেড কিষণের উপর দারুণ প্রভাব ফেলেছিল। কিষণের অতীত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার পূর্ণ সমালোচনা করার এই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তার একটি সত্যিকারের  বিপ্লবী সংগঠণের সহযোদ্ধা হয়ে উঠার পক্ষে জরুরি ছিল।

 ১৯২৫ সালে  কম্যুনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল  যখন ইতিমধ্যেই ক্ষয়িষ্ণু হতে শুরু করেছে , বিপ্লবী সংগঠন গুলির  গুরুত্বপূর্ণ   আন্দোলনগুলি পরাজিত হচ্ছে, বিশেষ করে রাশিয়ান ও জার্মান বিপ্লব পরাজিত হয়েছে , তখনই  ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম হল। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম  থেকেই লক্ষ্য ছিল অন্যান্য জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে উপনিবেশিক শক্তির বিরোধীতা বা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা।  ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টির ওপর জাতীয়তাবাদ  ও দেশাত্মবোধের প্রভাব খুব বেশী ছিল। ভারতের শ্রমিক শ্রেণী কম্যুনিস্ট লেফট এর পরম্পরা ও ধারাবাহিকতা থেকে  বঞ্চিত থেকেছে এবং তাকে  ভুগতে হয়েছে। এই রকম  রাজনৈতিক  পরিস্থিতিতে  ভারতবর্ষের কাছে কম্যুনিস্ট লেফট এর প্রকৃত ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার  ক্ষেত্রে আই সি সি র এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থেকে গেছে।

গভীর অধ্যয়ণ এবং ধারাবাহিক আলোচনার পথেই কিষণ ধীরে ধীরে আই সি সি’র ভারতীয় অংশের সহযোদ্ধা হয়ে উঠেছিল। আই সি সি  এবং আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর সংগ্রামের প্রতি  কিষণের  আনুগত্যই  তাকে আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী  রূপে চিহ্নিত করেছে। অপরিমেয় নিষ্ঠার সঙ্গে কিষণ  সব সময় আই সি সি র  অবস্থানকে সমর্থন করেছে। আই সি সি র সঙ্গে  বিতর্কে  তার ছিল গভীর নিষ্ঠা, সে বিতর্ক আন্তর্জাতিক স্তরের  হোক বা আই সি সি র আমাদের ভারতীয় অংশের  মধ্যেই হোক  । আই সি সি র কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন স্তরে  কিষণের অবদান  গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে  আই. সি সি র বই বিক্রি করার উপযুক্ত দোকান খুঁজে বের করেছে। যেখানে যতটা সম্ভব হয়েছে কমরেড কিষণ  বিভিন্ন আলোচনা চক্র এবং পাবলিক মিটিং  এ অংশ গ্রহণ করেছে। আই সি সি র পত্র পত্রিকার গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল দৃষ্টান্ত  মূলক। তিনি আই সি সি’র নানাবিধ আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে অংশগ্রহণ এবং সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি আমাদের ভারতীয় অংশেও সমান ভূমিকা রেখেছেন। তার মূল্যবান এবং সুচিন্তিত মতামত রাজনৈতিক স্বচ্ছ্বতা অর্জনের প্রক্রিয়াকে আরো ধারালো করে তুলেছিল। তার সবচেয়ে বড় শক্তি  হল সংগঠনের ওপর সমস্তরকমের আক্রমণ ও কুৎসা রটনার রিরুদ্ধে  প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

জীবনের অসংখ্য উত্থান পতন কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা কমরেড কিষণের ছিল। সবচেয়ে কঠিন রাজনৈতিক  অবস্থাতেও  আই সি সি র রাজনীতির প্রতি তার  দৃঢ় বিশ্বাস   ও  আশাবাদী ভূমিকাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত  তাকে আই. সি সি র পাশে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করেছে। শ্রমিক শ্রেণীর শৃঙ্খল মোচনের জন্য কমরেড কিষণের যে রাজনৈতিক সংগ্রাম তার সঠিক মূল্যায়ণের জন্য এই  ছোট্ট একটি লেখা  যথেষ্ট নয়।  কিষণ সম্পর্কে আরো বলা যায় সে ছিল অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ এবং মাটির মানুষ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ  অথবা ভারতবর্ষের অন্যান্য অংশের আই সি সি র  কমরেডদের  প্রতি   কমরেড কিষণের ছিল উদার  আতিথ্য। আতিথিদেরও সে অভিজ্ঞতা  বার বার  ই হয়েছে। তার পরিবারের প্রতি আমরা সংগ্রামী  শ্রদ্ধা ও  দায়বদ্ধতা জ্ঞাপন করছি ।

 আই সি সি   সবরকম সহানুভূতি ও দায়বদ্ধতা নিয়ে তার স্ত্রী  ও কন্যার পাশে আছে ।

 

আই সি সি, অক্টোবর ২০২০.

(১) আমাদের ওয়েবসাইটে ‘Maoism, a monstrous offspring of decadent capitalism’ নামক প্রতিবেদন দেখুন. 

https://en.internationalism.org/ir/094_china_part3.html#_ftnref4

Book traversal links for আমাদের কমরেড কিষণের প্রতি শ্রদ্ধা

  • ‹ Communist Internationalist - 2021
  • Up
  • কোভিডের মোকাবিলায় এক বছরের অবহেলা: পুঁজিবাদই হন্তারক! ›
নীড়পাতা
ইন্টারন্যাশানাল কম্যুনিস্ট কারেন্ট
দুনিয়ার মজদুর এক হও!

Footer menu

  • ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিষ্ট কারেন্টের মৌলিক রাজনৈতিক অবস্থান
  • Contact