আমরা সদ্য কোরিয়া থেকে খবর পেয়েছি যে সোস্যালিস্ট ওয়ারকারস’ লীগ অফ কোরিয়া/ SAnorun’র আটজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কুখ্যাত ‘রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা আইনে’[i] বিচারাধীন অবস্থায় আটক রাখা হয়েছে। আগামী ২৭শে জানুয়ারী তাদের সাজা ঘোষণা করার কথা।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত বিচার এবং শাসকশ্রেণি যাকে বিচার বলে থাকে তার হাস্যকর প্রহসন ছাড়া কিছু নয়। এই প্রসঙ্গে তিনটি তথ্যের উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রথমত সাউথ কোরিয়ার আদালতগুলি ধৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযোগ এর আগে বহুবার ভিত্তিহীন ব’লে উড়িয়ে দিয়েছে।[ii]
দ্বিতীয়ত এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে “ শত্রুর অর্থাৎ নর্থ কোরিয়ার সুবিধার্থে এরা একটা সংগঠন গড়ে তুলেছে। Oh Se-Cheol এবং Nam Goong Won এবং আরো অনেকে ২০০৬ সালের অক্টোবরে একটি যুদ্ধ বিরোধী আর্ন্ত্জাতিক ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করেন। ঐ ঘোষণা পত্রে পরিষ্কারভাবে নর্থ কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং বিশেষ ক’রে বলা হয়েছে যে, “নর্থ কোরিয়ার পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার সংগে শ্রমিকশ্রেণি বা কমিউনিজমের মোটেই কোন সম্পর্ক নেই। ঐ রাষ্ট্রব্যবস্থা পতনশীল পুঁজিবাদের চূড়অন্ত সামরিক বর্বরতার কদাকার এক সংস্করণ ছাড়া কিছুই নয়”।[iii]
তৃতীয়ত Oh Se-Cheol–র আদালতে প্রদত্ত বক্তব্য থেকে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে সে নর্থ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদসহ সব ধরণের পুঁজিবাদের তীব্র বিরোধী।
এইসব রাজনৈতিক কর্মীরা সোস্যালিস্ট চিন্তনকে ধারণ করেন শুধুমাত্র এই অভিযোগেরই বলী হয়েছেন। অন্যভাবে বললে শ্রমিকশ্রেণিকে নিজেদের ও পরিবারের সুরক্ষা ও জীবনযাত্রার মান বজায় রাখার জন্য সংগ্রামের আহ্বান জানানোই হল তাঁদের অপরাধ। এঁদের আরো অপরাধ পুঁজিবাদের আসল চেহারাটা খোলাখুলিভাবে শএরণির সামনে মেলে ধরা। এজন্যই প্রশাসন এঁদের শাস্তি দিতে চাইছে। শোষণ নিপীড়ণের বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়াতে চাইছে তাদের ওপরে সাউথ কোরিয়ার শাসককূল তীব্র নিপীড়ণ নামিয়ে আনছে।এই ঘটনা তারই একটা উদাহরণ মাত্র। ইতিমধ্যেই “baby strollers’ brigade”-র স্বল্পবয়সী মায়েরা এই নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন। এইসব মায়েরা তাদের শিশুদেরকে নিয়ে ২০০৮ সালের ‘মোমবাতি নিয়ে মিছিল’-এ যোগদান করেন। এই অপরাধে তাদের ওপর আইনী ও পুলিশি নির্যাতন চালানো হয়।[iv] রায়টপুলিশ দখলীকৃত ফ্যাক্টরি আক্রমণ ক’রে Ssangyong ওয়ার্কারদের প্রচন্ড মারধোর করে।[v]
অনেকবছরের কারাবাসের সাজার সম্ভাবনার মুখোমুখি দাঁড়িয়েও ঐ বন্দী রাজনৈতিক কর্মীরা আদালতে দারুণ সাহসিকতা ও সংগ্রামী মর্যাদার পরিচয় দিয়েছেন এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই বিচারের অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক অভিসন্ধিকে তাঁদের বক্ত্ব্যের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। বিচারকমন্ডলীর সামনে Oh Se-Cheol –র সর্বশেষ বক্তব্যের অনুবাদ নিচে দেওয়া হচ্ছে।
এই এলাকায় সামরিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।গত নভেম্বরে Yeonpyeong দ্বীপে প্ররোচনামূলক গোলাবর্ষণ এবং নর্থ কোরিয়ার কামানের গোলায় অসামরিক ব্যক্তিদের হত্যার পর এই উত্তেজনা আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এর জবাবে ঐ এলাকায় আমেরিকার পারমাণবিক যুদ্ধবিমানবাহী জাহাজ পাঠানো ও সাউথ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যৌথ যুদ্ধ মহড়া চালানো উত্তেজনার আগুনে নতুন ক’রে ঘি ঢালে। মানবসমাজের সামনে সমাজতন্ত্র ও বর্বরতার মধ্যে যেকোন একদিক বেছে নেওয়ার বিষয়টি এখন আগের থেকে অনেক বেশি সত্য ও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলোর শাসকগোষ্ঠীর প্রচার যন্ত্র নর্থ কোরিয়াকে একটি ‘গুন্ডা প্রকৃতির রাষ্ট্র’ হিসাবে চিহ্নিত করতে পছন্দ করে। দেখাতে চায় যে সেখানকার শাসকগোষ্ঠী বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আর অনাহারক্লিষ্ট জনগনের ওপর শোষণ নিপীড়ণ চালায়। এটা অবশ্যই সত্য। কিন্তু সাউথ কোরিয়ার সরকার মায়েদের শিশুদের, সংগ্রামী শ্রমিকদের ও সমাজতন্ত্র অর্জণের লক্ষ্যে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর যে নিপীড়ণ চালিয়ে যাচ্ছে তাতে এটা যথেষ্ট পরিষ্কার যে শেষ বিচারে প্রতিটি দেশের বুরজোয়ারাই ভয় দেখিয়ে ও পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করেই শাসন চালায়।
রাজনৈতিক মতভেদ থাকার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই পরিস্থিতিতে আমরা ওইসব বন্দী রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করছি। তাদের সংগ্রাম আমাদেরও সংগ্রাম। আমরা তাদের পরিবার ও সহযোদ্ধাদের প্রতি জানাই আমদের আন্তরিক অনুভূতি এবং সংহতি। আমরা সানন্দে ঐসব সহযোদ্ধাদের কাছে www..internationalism.org-এ পাওয়া সমর্থন ও সংহতির যেকোন বার্তা পাঠিয়ে দেব।[vi]
Oh Se-Cheol -র আদালতে দেওয়া শেষবারের ভাষণ: (ভাষণের বিষয়বস্তুর অনুবাদ মূল কোরিয় ভাষা থেকে করা হয়েছে; বাংলা অনুবাদ ইংরাজি অনুবাদের ভার্সন থেকে করা হল)
পুঁজিবাদের সমগ্র ইতিহাসে যেসব সংকট এসেছে তাকে নানাবিধ তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলোর একটা হল Catastrophe Theory বা বিপর্যয়ের তত্ত্ব। এর মতে পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বগুলো যখন একটা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন পুঁজিবাদ আপনা আপনিই ধসে পড়বে আর শুরু হবে সাম্যময় যুগ, কল্পনার স্বর্গের বাস্তবায়নের যুগ। সর্বনাশা পরিণতির অনিবার্যতার বা চূড়অন্ত নৈরাজ্যবাদী এইসব চিন্তাভাবনা পুঁজিবাদী এইসব শোষণ, নিপীড়ণ ও শ্রমিকশ্রেণির দুর্ভোগের মূল কারণগুলো বোঝার ক্ষেত্রে নানারকম বিভ্রান্তি ও মোহ সৃষ্টিই করেছে। অনেকেই এইসব অবৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনায় প্রভাবিত হয়েছে।
আরেকটা তত্ত্বের মধ্যে আশাবাদের প্রাধান্য।এর মতে বুরজোয়া উৎপাদন ব্যবস্থার বৃদ্ধি সবসময়ই ঘটে থাকে; অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বগুলো মোকাবিলা করার ক্ষমতা পুঁজিবাদেরই রয়েছে এবং ফাটকাবাজের(speculation) অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত(real) অর্থনীতির গতি প্রকৃতি ভালোভাবেই বহাল রাখা যায়।
অন্যগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাওয়া এবং এই দুই থেকে আরেকটু সূক্ষ্ম তত্ত্বের মতে পুঁজিবাদের সংকট হল পর্যাবৃত্ত, সুতরাং আমাদের কাজ ঝড়টা কেটে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।
এই অবস্থানটা উনবিংশ শতকের পুঁজিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ঠিকই ছিল। কিন্তু বিংশ ও একবিংশ শতকের পুঁজিবাদের অবস্থার সাথে এটা মোটেই খাপ খায় না। উনবিংশ শতকের সংকটগুলো ছিল পুঁজিবাদের সীমাহীন বৃদ্ধি ও বিস্তারের যুগের সংকট। এগুলোকেই মার্কস কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে বলেছেন অতি উৎপাদনের মহামারী। অতি উৎপাদনের এই প্রবণতার পরিণতি হত দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র ও বেকারত্ব। এই পরিণতি জিনিসপত্রের অভাবের জন্য হত না। হত অনেক বেশি জিনিসপত্র অনেক বেশি শিল্প এবং অনেক বেশি সম্পদের জন্য। পুঁজিবাদী সংকটের আর একটা কারণ হল অনিবার্য প্রতিযোগিতার দরুণ উৎপাদন ব্যবস্থার নৈরাজ্য। নতুন নতুন এলাকা, নতুন নতুন মজুরী-শ্রম এবং পন্য বিক্রির উৎস দখলের মাধ্যমে উনবিংশ শতকে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থঅর বিস্তার ও বৃদ্ধি ঘটা সম্ভব ছিল। তাই তখনকার পুঁজিবাদী সঙ্কটকে যৌবনের সুস্বাস্থ্যের সাময়িক ছন্দপতন মনে করা যেত।
বিংশ শতকের পুঁজিবাদের উথ্থানের যুগ শেষ হয়ে এল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এই শেষ হয়ে যাবার প্রক্রিয়ার একটা নির্ণায়ক বিন্দু। এই সময় পর্যন্ত মজুরী শ্রম ও পণ্য উৎপাদনের পুঁজিবাদী সম্পর্ক সারা দুনিয়া জুড়ে বিস্তার লাভ করেছিল। ১৯১৯ সালে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশানাল পুঁজিবাদের এই নতুন যুগকে ‘যুদ্ধ অথবা বিপ্লব’-র যুগের আখ্যা দেন। একদিকে অতি উৎপাদনের পুঁজিবাদী প্রবণতা, বিশ্ববাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠল। বেধে গেল সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। অন্যদিকে এটা বিশ্ব অর্থনীতিকে অস্থিতিশীলতা ও বিনাশের সংকটের ওপর নির্ভরশীল ক’রে তুলল। এই সংকট অনেকাংশে স্থায়ীরূপ লাভ করল। এই পরিস্থিতি উনবিংশ শতকের বিপরীত।
এই ধরণের দ্বন্দ্বের পরিণতি হল দুটো ঘটনা। একটা হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যার বলী হল দুই কোটি মানুষ। আর একটা হল ১৯২৯-র চরম মন্দা যার ফলে বিশ থেকে তিরিশ শতাংশ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ল। এরই জের হিসাবে গড়ে তোলা হল তথাকথিত সব ‘সমাজতন্ত্রী দেশ’। উৎপাদনের উপকরণগুলোর সবকিছুর ওপর রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের ভিত্তিতে গড়ে তোলা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদকেই সমাজতন্ত্র বলে চালানো হল। অন্যদিকে ব্যক্তিগত পুঁজি রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্রের সংমিশ্রণের ভিত্তিতে গড়ে তোলা হল উদারনৈতিক সব দেশ বা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদী ব্যবস্থা।
২য় বিশ্বযুদ্ধের পর তথাকথিত ‘সমাজতন্ত্রী দেশসমূহ’সহ বিশ্ব পুঁজিবাদের অসাধারণ সমৃদ্ধি ঘটে। ২৫ বছরের পুণনির্মাণ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণনীতির ফলেই এটা ঘটে। এই সমৃদ্ধি দেখে সরকারী আমলাকূল, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, অর্থনীতিবিদ এবং তথাকথিত ‘র্মাসবাদী’রা জোরগলায় বলতে থাকে যে পুঁজিবাদ নিশ্চিতভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু সঙ্কট লাগাতারভাবে আরও খারাপের দিকে গেছে। এর প্রমাণ স্বরূপ কিছু তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হ’ল: ১৯৬৭ সালে পাউন্ড স্টারলিং এর অবমূল্যায়ন, ১৯৭১ এর ডলার সঙ্কট, ১৯৭৩ এর তেল সঙ্কটের আকস্মিক আঘাত, ১৯৭৪-৭৫ সালের অর্থনৈতিক মন্দা, ১৯৭৯ সালের মুদ্রাস্ফীতির সঙ্কট, ১৯৮২ সালের ঋণসংকট, ১৯৮৭-র ওয়াল স্ট্রীট সঙ্কট, ১৯৮৯-র অথনৈতিক মন্দা,১৯৯২-৯৩-এ ইউরোপীয়ান কারেনসির মূল্যের অস্থিতিশীলতা, ১৯৯৭এ এশিয়ার ‘টাইগার’ আর ‘ড্রাগন’দের সংকট, ২০০১-এ আমেরিকান “নিউ ইকনমি”র সংকট, ২০০৭এর সাবপ্রাইম ক্রাইসিস, লেম্যান ব্রাদার্স ইত্যাদির ফিনানসিয়াল সংকট এবং ২০০৯-২০১০-র ফিনানসিয়াল ক্রাইসিস।
ক্রাইসিসের এই লম্বা সারণী কি দেখায় যে সংকট নেহাতই ‘পিরিয়ডিক’? মোটেই না! এ হল পুঁজিবাদের মারণ রোগ যার কোন আরোগ্য নেই। যেখান থেকে পুঁজিবাদ তার মুনাফা তুলে আনতে পারে সেই বাজারের অপ্রতুলতার ফলে মুনাফার হার ক্রমশঃ কমে যেতে থাকে। ১৯২৯-র বিশ্বব্যাপী বিরাট মন্দার সময়ে চূড়ান্ত খারাপ পরিস্থিতি আসে নি কারণ রাষ্ট্রগুলো ভীষণভাবে তাদের হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক ফিন্যানসিয়াল এবং ইকোনোমিক ক্রাইসিস দেখাচ্ছে যে আগের মত স্টেট কর্তৃক বেল আউট বা ঋণ ইত্যাদি কিছু আশু পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। উৎপাদিকা শক্তির আরো বিস্তারের অসম্ভাব্যতার কারণে ক্যাপিট্যালিজম এখন এক দিশাহীন অচলাবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছে। আর পুঁজিবাদের বর্তমান মরণপন চেষ্টা হল এই কানাগলি থেকে বেরোন; অর্থাৎ এ এখন সীমাহীনভাবে রাষ্ট্রীয় ঋণের ওপর নির্ভরশীল আর তার চেস্টা হল অতিউৎপাদনের মারণরোগ থেকে বাঁচার জন্য কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করা।
গত চল্লিশ বছর পুঁজিবাদ বিপুল ঋনের সাহায্যেই তার সর্বনাশা পরিণামের হাত থেকে রেহাই পেয়ে আসছে। পুঁজিবাদের কাছে এই ঋণ ড্রাগ-এ্যাডিক্টের কাছে ড্রাগের সমতুল। শেষ পর্যন্ত এই ঋণ রক্ত আর ঘাম নিংড়ে নেওয়া এক অসম্ভব বোঝা হিসাবেই বিশ্বের প্রলেতারিয়েতের কাছে ফিরে আসে এবং আসবে। এর ফল হল বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অবিশ্বাস্য দারিদ্র, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ এবং পরিবেশগত বিপর্যয়।
পুঁজিবাদ কি পতনশীল পর্যায়ে আছে? হ্যাঁ। হঠাৎ ক’রে এই ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবার দিকে এটা এগোচ্ছে না, কিন্তু এটা ব্যবস্থাটার পতনের এক নতুন দশা যা হল পুঁজিবাদের ইতিহাসের শেষ পর্যায় সেই দিকেই এগোচ্ছে, তাকে নিয়ে যাচ্ছে তার সমাপ্তির দিকে। আমাদের অবশ্যই মনে করা দরকার ১০০ বছর আগের সেই শ্লোগান: ‘যুদ্ধ অথবা বিপ্লব’ এবং আরো একবার আমাদের নিজেদের প্রস্তুত করা উচিত ‘ বর্বরতা অথবা সমাজতন্ত্র’ এই বিকল্পের অর্থ উপলব্ধি করার জন্য এবং তৈরি হওয়া উচিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের অনুশীলনের জন্য। অর্থাৎ সোস্যালিস্টদের অবশ্যই একত্র হতে এবং একসঙ্গে কাজ করতে হবে; তাদের অবশ্যই বিপ্লবী মার্কসবাদের ভিত্তিতে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে। আমাদের লক্ষ্য টাকা, পন্য, বাজার মজুরী-শ্রম এবং বিনীময় মূল্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটাকে অতিক্রম করা এবং এমন এক দুনিয়া গড়া যেখানে সমস্ত মানুষ মুক্ত স্বাধীন, যেখানে মজুরী দাসত্বের নিগড় থেকে শ্রম সম্পূর্ণভাবে মুক্ত।
মার্কসীয় বিশ্লেষণ থেকে এটা সুনিশ্চিত যে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার সাধারণ সংকট ইতিমধ্যেই তার চূড়ান্ত সংকটকালীন অবস্থায় পৌঁছে গেছে; তার কারণ উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে লাভের হারের ক্রমাগত হ্রাস এবং বাজার সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়া। আমরা এখন দুই বিকল্পের মুখোমুখি: পুঁজিবাদ অর্থাৎ বর্বরতা অথবা সোস্যালিজম্/কমিউনিজম্ অথাৎ সভ্যতা।
প্রথম, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এ তার অধীন মজুরীদাসেদেরকেই খেতে দিতে পারে না। পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিন এক লক্ষ মানুষ অনাহারে থাকে, প্রতি ৫ সেকেন্ডে পাঁচ বছর বয়সের কম বয়েসী একজন শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। ৮৪২ মিলিয়ন মানুষ স্থায়ীভাবে অপুষ্টির শিকার। ভয়ংকরভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর ৬ বিলিয়ন জনসাধারণের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মানুষের প্রতিমুহূর্ত্তে দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে প্রাণান্ত হচ্ছে।
দ্বিতীয়তঃ, বর্তমানে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আর কোনভাবেই অর্থনৈতিক অগ্রগতির গল্প শুনিয়ে মানুষকে ভোলাতে পারে না।
ভারত এবং চীনে অর্থনৈতিক উন্নতির যাদু যে মিথ্যা এবং ধোঁকা তা প্রমানণিত হয়ে গেছে। ২০০৮-র প্রথম অর্ধে ২০ মিলিয়ন শ্রমিক তাদের কাজ খুইয়েছে এবং ৬৭০০০ কোম্পানী দেউলে হয়ে গেছে।
তৃতীয়তঃ, পরিবেশগত দিকথেকে এক ভয়ঙ্কর বিপদ খুবই প্রত্যাশিত। বিশ্ব-উষ্ণায়ণের ব্যপারে দেখা যাচ্ছে ১৮৯৬ থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ০.৬% বেড়ে গেছে। বিংশ শতাব্দীতে উত্তর গোলার্ধ গত ১০০০ বছরের তুলনায় অত্যন্ত বেশিমাত্রায় উষ্ণ হয়ে উঠেছে। বরফঘেরা স্থানের পরিমাণ ১০ শতাংশ কমে গেছে। উত্তর মেরুতে বরফ-স্তর ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। বিংশ শতকে সমুদ্র তলের উচ্চতা ১০ থেকে ২০% বেড়ে গেছে যা গত ৩০০০ বছর ধ’রে বৃদ্ধির পরিমাণের ১০গুনেরও বেশি। যথেচ্ছভাবে অরণ্যনিধন,ভূমিক্ষয়, (জল, বাতাস)দূষণ,রাসায়নিক এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার, প্রাণি এবং উদ্ভিদ নিধন এবং বিস্ফোরণের মত মহামারীর প্রাদুর্ভাব এইসবই ধরণীকে গত ৯০ বছরের নির্মমভাবে শোষণ করার প্রতিফলন। পরিবেশগত ডিজেস্টার বিশ্বজোড়া ব্যাপার আর তাই এই সমস্যা ভবিষ্যতে কত গভীর এবং বিপজ্জনকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে তা আগে থেকে বলে দেওয়া দুঃসাধ্য।
তাহলে কেমন করে পুঁজিবাদী অবদমন এবং শোষণের বিরুদ্ধে শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস বিকশিত হল?
শ্রেণি সংগ্রাম সর্বদাই আছে কিন্তু তা সফল হয়নি। প্রথম আন্তর্জাতিক ব্যর্থ হয়েছিল কেননা সেটা ছিল পুঁজিবাদের বিকাশের যুগ। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ব্যর্থ হয় বিপ্লবী চরিত্র পরিত্যাগ করে জাতীয়তাবাদের পক্ষে চলে যাওয়ার জন্য। এবং তৃতীয় আন্তর্জাতিক ব্যর্থ হয় স্ট্যালিনিস্ট প্রতিবিপ্লবের বিজয়ের কারণে; বিশেষতঃ ১৯৩০ থেকেই প্রতিবিপ্লবী ধারা রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের প্রকৃতি সম্বন্ধে শ্রমিকশ্রেণিকে মিথ্যা ধারণা দেয় এবং সেটাকেই ‘সমাজতন্ত্র’ বলে প্রচার করে। শেষ পর্যন্ত তারা দুটো ব্লকের মধ্যে সংগ্রামকে আড়াল ক’রেবিশ্ব প্রলেতারিয়েতের সংগ্রামকে অবদমিত করে, শোষণ করে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারেরই ভূমিকা পালন করল।
পরন্তু, বুরজোয়াদের প্রচার অনুযায়ী ইস্টার্ণ ব্লক এবং স্ট্যালিনিস্ট ব্যবস্থার পতন হল ‘উদারপন্থী পুঁজিবাদেরই বিজয়’,”শ্রেণিসংগ্রামের অবসান” এমনকি শ্রমিকশ্রেণিরই বিলুপ্তি। এমন প্রচার শ্রেণির সচেতনতা এবং লড়াকু চরিত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলল।
১৯৯০-র পুরো দশক ধরে শ্রেণির সংগ্রাম পুরো থেমে যায়নি তবু তার আপেক্ষিক তাকত কমে গিয়েছিল। কিন্তু অস্ট্রিয়া এবং ফ্রান্সে পেনসনের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামে আবার এক নতুন বাঁক নিয়ে এল। সেন্ট্রাল দেশগুলোর প্রায় সর্বত্র শ্রেণি নতুন ক’রে সংগ্রাম শুরু করে: ২০০৫-এ নিউইয়র্কে বোয়িং এবং ট্রান্সপোর্টেসন স্ট্রাইক; ২০০৪-এ ডেইমলার এবং ওপেল সংগ্রাম,২০০৬-র বসন্তে ডাক্তারদের সংগ্রাম, ২০০৭এ জার্মানে টেলিকম বিভাগের সংগ্রাম, ২০০৫-এর অগাস্টে লন্ডন এয়ারপোর্ট সংগ্রাম, ২০০৬এ ফ্রান্সে অ্যান্টি সিপিই সংগ্রাম এরই প্রতিফলন। অন্যান্য দেশগুলোতেও সংগ্রাম গড়ে উঠেছে যেমন, ২০০৬-র বসন্তে দুবাইএ, একই সময়ে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শ্রমিকদের সংগ্রাম, ২০০৭এ ইজিপ্টে টেক্সটাইল শ্রমিকদের সংগ্রাম। ২০০৬ থেকে ২০০৮এর মধ্যে বিশ্ব শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রাম সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ করেছে, ইজিপ্ট, দুবাই, আলজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা, পেরু, টুরকি, গ্রীস, ফিনল্যান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রাশিয়া, ইটালি, বৃটেন, জারমানি, ফ্রান্স, ইউএসে এবং চীন সর্বত্র। পেনসন সংস্কারের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের সাম্প্রতিক সংগ্রামে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রাম আরো বেশি বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে।
ফলতঃ বোঝা যাচ্ছে চূড়ান্ত অবক্ষয়িত বিশ্ব পুঁজিবাদ ও সংকট (যা শ্রমিকশ্রেণির ওপর বিপুল বোঝার মত চেপে বসে আছে) শ্রমিকশ্রেণিকে সারা বিশ্ব জুড়েই সংগ্রামের পথে যেতে বাধ্য করছে। এ সংগ্রাম পূর্বতন সংগ্রামের থেকে আলাদা।
এখন আমাদের সামনে দুটি রাস্তা: বর্বরতার মধ্যে বাস কর, মানুষের মত নয় বাঁচ পশুর মত অথবা গড় সেই দুনিয়া যেখানে আনন্দময় হবে বাঁচা,বাস করা যাবে পূর্ণ মানবিক মর্যাদা নিয়ে, সাম্যের মধ্যে, স্বাধীনতার মধ্যে।
তথাকথিত উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কোরিয়ান পুঁজিবাদের অভ্যন্তরীন স্ববিরোধিতার গভীরতা এবং বিস্তার অনেক বেশি । ইউরোপীয় দেশগুলোর শ্রমিকশ্রেণি তাদের অতীতের সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অনেক অধিকার আদায় করেছে; এই দিক থেকে দেখলে ইউরোপীয় দেশগুলোর শ্রমিকদের তুলনায় কোরিয়ার শ্রমিকদের যন্ত্রনা অনেকগুন বেশি। প্রশ্নটা শ্রেণির মানব জীবনের, মানুষ হিসাবে তাদের জীবনযাপনের অবস্থার; এটা জি-টোয়েন্টি সামিটের আয়োজক দেশ হওয়ার বাহ্যারম্বর বা অর্থনীতির গালভরা সূচক দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না।
পুঁজি চরিত্রগত ভাবেই আন্তর্জাতিক। বিভিন্ন জাতীয় পুঁজির মধ্যে সদা সর্বদাই প্রতিযোগিতা এবং বিরোধ আছে, তবে পুঁজিবাদী এই ব্যবস্থাটা টিকিয়ে রাখার এবং তার সংকট গোপন করা ও শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ মানবিক মুখোশের আড়ালে রাখার জন্য তারা পরস্পরের মধ্যে একত্রিত হয়।
শ্রমিকদের সংগ্রাম পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে নয়, তার সংগ্রাম পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে পুঁজিবাদ মুনাফা বৃদ্ধি আর সীমাহীন প্রতিযোগিতার লক্ষ্যেই চালিত।
ঐতিহাসিকভাবে মার্কসবাদীরা শ্রমিকশ্রেণির সঙ্গে থেকে লড়াই করেছে যে শ্রমিকশ্রেণি বর্তমান ইতিহাসের নায়ক; আর এই লড়াই-এ সাথ দিতে গিয়ে মার্কসবাদীরা মানব সমাজের গতির ঐতিহাসিক নিয়মগুলোর স্বরূপ উদঘাটন করে, দেখায় বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে মৌল নিয়মগুলো কেমনভাবে ক্রিয়াশীল, প্রকৃত মানব জীবনের পক্ষে উপযুক্ত বিশ্বের পথে যাওয়ার অভিমুখ নির্দেশ করে এবং সেই পথে যাওয়ার জন্য এই অমানবিক ব্যবস্থা ও তার নিয়মের শেকল কিভাবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তা দেখিয়ে দেয়।
আর এই কাজ করার জন্যই তারা পার্টির মত সংগঠন গড়ে তোলে এবং বাস্তব সংগ্রামে অংশ নেয়। অন্তত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে মার্কসবাদীদের এই সব বাস্তব কর্মকান্ড আদালতের দরবার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়নি।বরং তাদের চিন্তাভাবনা এবং চর্চাকে মানব সমাজের প্রগতির পথে মূল্যবান অবদান হিসাবেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘ক্যাপিটাল’ বা ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’-র মত মাস্টারপিস লেখা বাইবেলের মতই ব্যাপকভাবে পঠিত হয়েছে।
SWLK-র এই কেসটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা যা চিন্তনের স্বাধীনতাকে অবদমিত করার ভেতর দিয়ে সারা বিশ্বের সামনে কোরিয়ান সমাজের বর্বর প্রকৃতিটা নগ্নভাবে তুলে ধরছে; সমাজতান্ত্রিক সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে যেসব বিচার আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে হয়েছে সেই ইতিহাসে এই ঐতিহাসিক ঘটনা একটা কলঙ্কজনক ছাপ রেখে যাবে। ভবিষ্যতে আরো খোলাখুলি এবং আরো বিপুলাকারে সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম হবে, মার্কসীয় আন্দোলন ব্যাপকভাবে এবং আরো শক্তিশালী হয়ে সারা বিশ্বে এবং এই কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়বে। বিচার ব্যবস্থা সংগঠিত ভায়োলেন্স সংক্রান্ত কেসের বিচার করবে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম, মার্কসবাদী সংগ্রাম দমিয়ে রাখতে তা অক্ষম। কারণ যতদিন মানবতা এবং শ্রমিকশ্রেণির অস্তিত্ব থাকবে ততদিন এই সংগ্রাম জারী থাকবেই।
সমাজতান্ত্রিক সংগ্রাম, এবং তার অনুশীলন আদালতের শাস্তির বিষয় হতে পারেনা। বরং তা হওয়া উচিত শ্রদ্ধার বিষয়, ভরসার বিষয়। আমার শেষ কয়েকটি কথা:
- যে নিয়ম চিন্তনের, বিজ্ঞানের এবং প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করে সেই ‘ন্যাশানাল সিকিউরিটি ল’ বাতিল কর!
- উৎপাদনের মালিকানা, রাজনৈতিক আধিপত্যের জন্য, ইতিহাসের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার জন্য শ্রমিকশ্রেণির যে সংগ্রাম তার ওপর পুঁজিবাদের শাসন নিপীড়ণ ও অত্যাচার বন্ধ কর!
- পুঁজিবাদকে ধ্বংস ক’রে মুক্ত ব্যক্তি মানুষের এক বিশ্ব মানব সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণি এক হও!
[i] Oh Se-Cheol, Yang Hyo-sik, Yang Jun-seok, and Choi Young-ik face seven years in prison, while Nam Goong Won, Park Jun-Seon, Jeong Won-Hyung, and Oh Min-Gyu are facing five years. At its most extreme, the National Security Law provides for the death penalty against the accused.
[ii] See this article in Hankyoreh English edition: https://english.hani.co.kr/arti/english_edition/e_national/324965.html
[iii] https://en.internationalism.org/icconline/2006-north-korea-nuclear-bomb
[iv] See Hankyoreh: https://english.hani.co.kr/arti/english_edition/e_editorial/318725.html
[vi] We also draw our readers' attention to the protest initiative launched by Loren Goldner (https://libcom.org/forums/organise/korean-militants-facing-prison-08012011). While we share Loren’s scepticism about the effectiveness of “write-in” mail campaigns, we agree with him that “an international spotlight on this case just might have an effect on the final sentencing of these exemplary militants”. Letters of protest should be sent to Judge Hyung Doo Kim at this address: swlk [at] jinbo.net (messages must be received by 17th January for them to be forwarded on to Judge Kim).