অক্টোবার ২০০৬’র শেষ দিকে, সোস্যালিষ্ট পোলিটিকাল এ্যালায়েন্স(SPA) ‘র ডাকে আন্তর্জাতিকতাবাদী কিছু সংগঠন, গ্রুপ এবং সদস্যদের নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল এবং উলসান্ শহরে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিতির হার যত অল্পই হোক না কেন, আমরা যতদূর জানি, এসপিএ-ই হ’ল দূর প্রাচ্যে কম্যুনিষ্ট লেফ্টের নীতির প্রথম সংগঠিত প্রকাশ আর এই ধরণের সম্মেলন অবশ্যই প্রথম।এর একটা ঐতিহাসিক তাৎপরয আছে ব’লে আমরা মনে করি আর তাই এই সম্মেলনের প্রতি আইসিসি(International Communist Current ) সম্পূর্ণ সমথর্ন
জানিয়ে সম্মেলনে তার একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। [১]
যাইহোক, সম্মেলন চলাকালীন সম্মেলনের লক্ষ্যের সুদূর প্রসারী রাজনৈতিক গুরুত্বের দিকটা কিছুটা চাপা পড়েছে ; কারণ, উত্তর কোরিয়ার প্রথম পরীক্ষামূলক পরমানু বোমা বিস্ফোরণের পরিপ্রেক্ষিতে এখানকার আন্ত-সাম্রাজ্যবাদী টানাপোড়েন নাটকীয়ভাবে তীব্রতা লাভ করেছে এবং তাকে কেন্দ্র ক’রে এই অঞ্চলে উপস্থিত সাম্রাজ্যবাদী-শক্তিগুলো (USA, China, Japan, Russia, South Korea) নানাবিধ জঘন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিচছে/অবস্থান গ্রহণ করছে। ফলতঃ, এই প্রশ্নটা সম্মেলনে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে এবং প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে। আলোচনায় তীব্র বিতর্ক চলে এবং অবশেষে যেসব সিদ্ধান্ত উঠে আসে তার ভিত্তিতে সম্মেলনে উপস্থিত(যাদের নাম নিচে উল্লিখিত হল) সকলের সম্মতিতে নিম্নলিখিত ঘোষণাপত্র গৃহিত হয়:
কোরিয়ায় যুদ্ধের হুমকির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকতাবাদী ঘোষণা:
উত্তর কোরিয়ায় পরীক্ষামূলক পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিওল এবং উলসানে অনুষ্ঠিত কম্ম্যুনিষ্ট আন্তর্জাতিকতাবাদীদের সম্মেলনে এই ঘোষণা করছি যে ---------------
আমরা.............
. আর অন্য কোন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের নতুন ক’রে পারমানবিক হাতিয়ার তৈরির ক্ষমতা লাভের তীব্র নিন্দা করছি: আন্ত-সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে সব্বোর্চ্চ হাতিয়ার নিউক্লিয়ার বোমা, এর কাজ হ’ল সাধারণভাবে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে হত্যা করা এবং বিশেষ ভাবে শ্রমিকশ্রেণিকে হত্যা করা।
. পুঁজিবাদী রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া কতৃর্ক যুদ্ধের পথে এই নয়া পদক্ষেপকে নিঃশর্ত্তে ধিক্কার জানাচ্ছি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র কতৃর্ক গৃহিত এই পদক্ষেপ আবারো একবার সুনিশ্চিতভাবে প্রমান করছে(অবশ্য যদি এই প্রমান করার কোন আবশ্যকতা থেকে থাকে) যে এই রাষ্ট্রের সঙ্গে শ্রমিকশ্রেণি বা কম্যুনিজমের কোন সংস্রব নেই বরং এ হ’ল চূড়ান্ত অবক্ষয়ী পুঁজিবাদের মিলিটারি বারবারিজমের সাধারণ প্রবণতার একটা চূড়ান্ত প্রকাশ।
. ইউএসএ এবং তার জুটিরা উত্তর কোরিয়ান শত্রুর বিরুদ্ধে যে ভন্ড প্রচার চালাচ্ছে তাকে নিঃশর্ত্তে নিন্দা করছি। তাদের এই বড় বড় বুলি আসলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আগে থেকে আঘাত হানার (যখনই তারা একাজ করতে সমর্থ হবে) মতাদর্শগত প্রস্তুতি ছাড়া কিছুই নয়। আর এই আঘাতের প্রধান বলী হবে শ্রমজীবি মানুষ যেমনটা আমরা ইরাকের বেলায় দেখছি। আমরা একথা ভুলিনি যে পৃথিবীতে ইউনাইটেড স্টেটই একমাত্র রাষ্ট্র যে যুদ্ধে পরমাণু বোমা ব্যবহার করেছিল, হত্যা করেছিল হিরোসিমা ও নাগাসাকির হাজার হাজার সাধারণ নাগরিকদের।
. তথাকথিত ‘শান্তি উদ্যোগ’কে খোলাখুলি নিন্দা করছি। এই উদ্যোগ স্বভাবতই অন্য সাম্রাজ্যবাদী মস্তান বাহিনী যথা চীন-র পক্ষ থেকে আসবেই। এ উদ্যোগ শান্তির দিকে তাকিয়ে নয়, সংশ্লিষ্ট সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর নিজ নিজ অঞ্চলের সাম্রাজ্যবাদী/পুঁজিবাদী স্বার্থ সুরক্ষিত রাখার জন্যই এই উদ্যোগ। শ্রমিকেরা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের যেকোন ‘শান্তিকামী উদ্যোগ’-র প্রতি কোনো আস্থা রাখতে পারে না।
. জাতীয় স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র রক্ষার অজুহাতে শ্রমিকশ্রেণি বা আন্তর্জাতিকতাবাদী আদর্শে যারা সক্রিয় তাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার বুরজোয়াদের দমন-পীড়ণমুলক সমস্ত পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করছি।
সেনা আক্রমণ ঘটলে যারা সবথেকে আগে আর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেই উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান এবং রাশিয়ার শ্রমিকদের প্রতি, আমাদের সম্পূর্ণ সংহতি ঘোষণা করছি।
. ঘোষণা করছি যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বরবরতা, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, পারমানবিক হাতিয়ার প্রয়োগের যে বিপদসংকেত সবর্দাই আমাদের মাথার ওপর ঘনিয়ে আছে, তার চিরকালীন অবসান ঘটাতে পারে শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী ঐক্যবদ্ধ শ্রমীক সংগ্রাম।
শ্রমিকের কোন দেশ নেই, কোনো দেশের পক্ষে সে দাঁড়াতে পারে না।
সমস্ত দেশের শ্রমিকেরা--- ঐক্যবদ্ধ হও!
এই ঘোষণাপত্রে যেসব সংগঠন এবং গ্রূপ সই করেছেন :
ইন্টারন্যাশনাল কম্যুনিষ্ট কারেন্ট
সোস্যালিস্ট পোলিটিক্যাল এ্যালায়েন্স(কোরিয়া), সিওল গ্রূপ মিটিং অফ টোয়েনটি সিক্স্থ অক্টোবার, ২০০৬
ইন্টারন্যাশনাল পার্সপেকটিভস
…………………………………………
সম্মেলনে উপস্থিত কিছু কমরেড ব্যক্তি হিসেবে ্ই ঘোষণায় সাক্ষর করেছেন; তাঁরা হলেন:
SJ (Seoul Group for Workers’
Councils)
MS (Seoul Group for Workers’ Councils)
LG
JT
JW(Ulsan)
SC(Ulsan)
BM
[১] সম্মেলন প্রসঙ্গে আমরা পরে আরো ডিটেলসে লিখব(আইসিসি)