Platform of the ICC
ইতিহাসের দীঘর্তম ও গভীরতম প্রতিবিপ্লবের পর শ্রমিকশ্রেণী আবার শ্রেণীসংগ্রামের পথ খুঁজে নিচ্ছে । ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে একদিকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সঙ্কট তীব্র রূপ ধারণ করেছে অন্যদিকে শ্রমিকশ্রেণীর বতমান –প্রজন্মের উপর অতীতের দারুন পরাজয়ের প্রভাব পূবজদের তুলনায় অনেক কম , আর তাই বতর্মানের শ্রেণীসংগ্রাম ইতিমধ্যেই ধারণ করেছে ব্যাপকতম রূপ।১৯৬৮ সালের ফ্রান্সের ঘটনাবলীর পর থেকে ইতালি থেকে আজের্ন্টিনা,ব্রিটেন থেকে পোল্যান্ড সুইডেন থেকে মিশর,চীন থেকে পতুর্গাল ,আমেরিকা থেকে ভারত ,জাপান থেকে স্পেন সবত্র বিস্তৃত শ্রমিক সংগ্রাম পুঁজিপতিশ্রেণীর দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে ।
শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী চরিত্রকে অস্বীকার করার উদ্দেশ্যে প্রতিবিপ্লবের পযায়ে যে সব মতাদর্শ তৈরী করা হয়েছিল, বা করা সম্ভব হয়েছিল, ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে শ্রমিকশ্রেণির এই পুনরাগমন সেই সবকিছুকে সুস্পষ্ট, সুনিশ্চিত রূপে নস্যাৎ করে দিয়েছে।শ্রমিক শ্রেণিই যে আজকের দিনে একমাত্র বিপ্লবী শ্রেণি এই সত্যকে সুস্পষ্টরূপে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে শ্রেণীসংগ্রামের বতর্মান এই জোয়ার।
কোন শ্রেণীর সামাজিক নেতৃত্ব ও আধিপত্য নতুন উৎপাদন সম্পকের প্রতিষ্ঠা ও বিস্তারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূণ হলেই তাকে বিপ্লবী শ্রেণী বলা যায় ।উৎপাদিকা শক্তিগুলোর(Productive forces) বিকাশ এবং পুরনো উৎপাদন সম্পকের(relation of production) অবক্ষয়ের ফলে নতুন উৎপাদন সম্পকের সৃষ্টি ও বিস্তার অপরিহায হয়ে ওঠে । প্রাক-পুঁজিবাদী অন্যান্য উৎপাদন ব্যবস্থাগুলোর মতই পুঁজিবাদও হচ্ছে সমাজ বিকাশের একটা বিশেষ পযার্য় । পুঁজিবাদও একসময় সমাজবিকাশের প্রগতিশীল একটা ব্যবস্থাই ছিল । কিন্তু সারা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হওয়ার পর পুঁজিবাদ নিজেই তার অবলুপ্তির শতাবর্লি সৃষ্টি করে দিয়েছে । পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে নিদির্ষ্ট সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকে শ্রমিকশ্রেণী। (বিক্ষিপ্ত ব্যক্তিগত নয়), শ্রমিকশ্রেণীর চরিত্র হচ্ছে যৌথ উৎপাদকের,উৎপাদনের উপকরণগুলোকে ক্রিয়াশীল করে তোলে সে, কিন্তু সেগুলোর মালিকানা থেকে সে সম্পূণ বঞ্চিত,পুঁজিবাদী সমাজকে টিকিয়ে রাখার কোনরকম স্বাথ বা প্রয়োজনীয়তা তাই তার নেই । আর তাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উচ্ছেদ ঘটিয়ে নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা বা কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করতে সব দিক থেকে সক্ষম একমাত্র শ্রমিকশ্রেণীই।শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামের বতর্মান জোয়ার কমিউনিজমের ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তাই শুধু নয় তার বাস্তব হয়ে ওঠার সম্ভাবনার বিষয়টিকে আরো একবার তুলে ধরছে । কিন্তু পুঁজিবাদকে উৎখাত করার অবশ্য-প্রয়োজনীয় অস্ত্রসম্ভারে নিজেকে সুসজ্জিত করার জন্য শ্রমিকশ্রেণীকে এখনো অত্যন্ত কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে । শ্রমিকশ্রেণীর এই পুণর্জাগরণের শুরু থেকে এই প্রচেষ্টার ফল এবং সক্রিয় উপাদান হিসেবে অনেক বিপ্লবীধারা ও ব্যক্তির আবিভাব ঘটেছে । এই সংগ্রামকে নিদির্ষ্ট লক্ষ্যাভিমুখে বিকাশের বিরাট দায়িত্ব এখন এঁদের কাঁধে। এই দায়িত্ব পালনের জন্য শ্রমিকশ্রেণীর ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সুনিশ্চিতভাবে প্রমানিত শ্রেণী অবস্থানগুলোর ভিত্তিতে এঁদেরকে অবশ্যই নিজেদেরকে সংগঠিত করতে হবে এবং এঁদের সমস্ত সক্রিয়তা ও শ্রমিকশ্রেণীর সচেতনতা বিকাশের প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ অবশ্যই এগুলোর ভিত্তিতেই নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার।
বাস্তবিক ও তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই পুঁজিবাদের উচ্ছেদ ও কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সংগ্রামের অস্ত্রসম্ভার ও পরিণতি সম্বন্ধে সচেতনতা অজর্ন করে শ্রমিকশ্রেণী ।শ্রেণীস্বার্থ সম্বন্ধে সচেতন হয়ে ওঠা ও বুর্জোয়া শাসকশ্রেণীর চিন্তাভাবনা ও বিভ্রান্তিকর মতাদর্শের খপ্পর থেকে নিজেকে মুক্ত করার অবিরাম প্রচেষ্টাই পুঁজিবাদের জন্মলগ্ন থেকেই শ্রমিকশ্রেণীর সামগ্রিক ক্রিয়াকলাপের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই প্রচেষ্টা শ্রমিকশ্রেণীর রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়েই প্রতিফলিত । প্রথমদিকের গুপ্ত সমিতি থেকে শুরু করে তৃতীয় আন্তজাতিক থেকে বেরিয়ে আসা Left fractions পরযন্ত বিস্তৃত শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলনের সামগ্রিক পরযায় জুড়েই এই ধারাবাহিকতা। অবস্থান ও ক্রিয়াকলাপের সমস্ত রকমের অস্বচ্ছতা ও বুর্জোয়া মতাদর্শের চাপ ও প্রভাবের প্রতিফলনের ছাপ থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকশ্রেণীর বিভিন্ন সংগঠনগুলো হল শ্রেণীসংগ্রামের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার শৃঙ্খলে অপরিহারয(irreplaceable) যোগসূত্র । পরাজয় বা অভ্যন্তরীন অধঃপতনের শিকার তারা হয়েছে এ কথা ঠিক, কিন্তু তা দিয়ে কোনভাবেই শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামে তাদের মৌলিক অবদানের গুরুত্বকে খাটো করা যায়না। আর তাই (অর্ধশতাব্দীর প্রতিবিপ্লব এবং অতীতের শ্রেণীসংগ্রাম থেকে সম্পর্কচ্যুত হয়ে পড়ার ঘটনার পর) বতর্মানের শ্রেণীসংগ্রামের সাধারন পুনর্জাগরণের প্রতিফলন রূপেই পুনর্গঠিত হচ্ছে বিপ্লবীদের যে সব সংগঠন , তাদেরকে অতি অবশ্যই দৃঢ়ভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে অতীতের সংগ্রামের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতাকে ।
অতীত অভিজ্ঞতার শিক্ষার অস্ত্রে শ্রমিকশ্রেণীর বতর্মান ও ভবিষ্যৎ সংগ্রামগুলিকে সুসজ্জিত করা এবং দীর্ঘ চলার পথে ছড়িয়ে থাকা আংশিক পরাজয়গুলোকে ব্যর্থ হতে না দিয়ে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকনিদের্শে রূপান্তরিত করে তোলাই হচ্ছে এর একমাত্র উদ্দেশ্য ।
কমিউনিষ্ট লিগ,প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় আন্তজার্তিক এবং তার থেকে বেরিয়ে আসা Left fraction গুলো বিশেষ করে জার্মান, ডাচ, ইতালিয়ান Leftদের অবদানের সঙ্গে নিজেদের ধারাবাহিকতাকে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছে International Communist Current। এইসব অত্যাবশ্যক অবদানের ভিত্তিতেই আমরা সমস্ত শ্রেণী-অবস্থানকে সুসমন্বিত সাধারন এক তাত্ত্বিক কাঠামোয় একীভূত করতে সমর্থ হয়েছি আর সেটিই সূত্রবদ্ধ করা হয়েছে আমাদের এই কর্মসূচিতে।