The Trade Unions: yesterday organs of the proletariat, today instruments of capital
ঊনবিংশ শতাব্দীতে পুঁজির চরম সমৃদ্ধির যুগে শিল্প বা পেশাভিত্তিক স্থায়ী সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলেছিল শ্রমিকশ্রেণী । অনেক ক্ষেত্রেই তিক্ত ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমেই গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল এইসব সংগঠন। শ্রমিকশ্রেণীর অর্থনৈতিক স্বার্থের সুরক্ষার উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল এইসব সংগঠনের। শ্রমিকশ্রেণীর জীবনযাত্রার অবস্থার ব্যাপক উন্নতি এবং বিভিন্ন সংস্কারের জন্য সংগ্রামে অত্যাবশ্যক ভূমিকা পালন করেছিল এইসব সংগঠন । পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পক্ষেও সে সময় সম্ভব ছিল এইসব সংস্কার ও উন্নতির দাবী মেনে নেওয়া ও রূপায়িত করা । শ্রেণীর সকল সদস্যকে একতাবদ্ধ করার এবং শ্রেণী সংহতি ও শ্রেণীচেতনা বিকাশের একটা কেন্দ্রবিন্দুও (focus) হয়ে উঠেছিল এইসব সংগঠন । আর তাই ‘কমিউনিজমের স্কুল' হিসেবে গড়ে তোলা ও কাজ করার ব্যাপারে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বিপ্লবীরা সেই সময় এইসব সংগঠনের ভিতরে আলাপ আলোচনা ও বিতর্কে সক্রিয় অংশ নিতে পারত । মজুরি শ্রমের অস্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত হয়ে থাকা এবং সেই যুগেও প্রায়ই বেশ ভালো পরিমাণেই আমলাতন্ত্র কবলিত হয়ে পড়া সত্ত্বেও, ততক্ষণ অব্দি ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকশ্রেণীর প্রকৃত নির্ভরযোগ্য সংগঠন ছিল যতক্ষণ পরযন্ত মজুরি- শ্রমের অবলুপ্তি ঐতিহাসিক কর্মসূচি হয়ে ওঠেনি।
পতনশীল পযার্য়ে প্রবেশ করার ফলে শ্রমিকশ্রেণীর জন্য আর নতুন কোন সংস্কার ও উন্নতিবিধানের ব্যবস্থা করতে পুঁজিবাদ অসমর্থ হয়ে পড়ল। শ্রমিকশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার পূবর্তন ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখার/পালন করার সমস্ত সম্ভাবনা ট্রেডইউনিয়নগুলো হারিয়ে ফেলল। মজুরি-শ্রমের অবলুপ্তি ঐতিহাসিক কমর্সূচি হয়ে ওঠায় এর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত ট্রেডইউনিয়নগুলোর অবলুপ্তিও বাস্তব কমর্সূচি হয়ে দাঁড়াল। এই পরিস্থিতিতে ট্রেডইউনিয়ন, সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠল পুঁজিবাদের রক্ষক , শ্রমিকশ্রেণীর ভিতরে থেকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের দালালি করার প্রতিষ্ঠান। নতুন যুগে এইটাই ছিল তাদের টিকে থাকার একমাত্র উপায়। পতনশীল পযায়ের আগেই ভালো পরিমানে আমলাতন্ত্র কবলিত হয়ে পড়ার ঘটনা এবং অবক্ষয়ের যুগে সমস্ত সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে অঙ্গীভূত (absorb) করে নেবার অদম্য রাষ্ট্রীয় প্রবণতা , ইউনিয়নগুলোর এই বিবর্তনে সহায়ক হল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টিগুলোর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাম্রাজ্যবাদী হত্যাকান্ডে শ্রমিকশ্রেণীকে সামিল করার কাজে সাহায্য করল ট্রেড ইউনিয়ন গুলো আর এভাবেই সবর্প্রথম প্রমাণিত হল তাদের শ্রমিকশ্রেণী বিরোধী ভূমিকা । যুদ্ধের পর বিপ্লবী আন্দোলনের জোয়ারের সময় , শ্রমিকশ্রেণীর পুঁজিবাদ ধ্বংস করার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ ও বিধ্বস্ত করার যথাসাধ্য সবকিছুই করেছিল ইউনিয়নগুলো । শ্রমিকশ্রেণী নয়, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রই তখন থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে । রাষ্ট্রের জন্য বেশ কয়েকটি ক্রিয়াকলাপের দায়িত্ব এখন থেকে পালন করে এরা । যথা:
- পুঁজিবাদী যৌক্তিকতার ভিত্তিতে অর্থনীতিকে পুর্নগঠিত করা, শ্রমশক্তির বিক্রয় নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মিত করা এবং শোষণকে তীব্র করার রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
- Strike ও অন্যান্য বিদ্রোহকে কারখানা শাখা ও শিল্পভিত্তিক কানাগলিতে আটকে ফেলে পথভ্রষ্ট করা এবং শ্রমিকশ্রেণীর স্বনির্ভর ,স্বাধীন, স্ব-উদ্যোগে গড়ে ওঠা আন্দোলনগুলোর খোলাখুলি দমন পীড়নের মাধ্যমে , ভিতর থেকে শ্রেণী সংগ্রামের অন্তর্ঘাত মূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া ।
ইউনিয়নগুলো তাদের প্রলেতারিয় চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে; সুতরাং শ্রমিকশ্রেণির সেগুলোকে পুণর্দখল ক'রে কাজে লাগানোর কথা ওঠেনা বা সেগুলো আর বিপ্লবীদেরও কর্মক্ষেত্র থাকেনা।বুজোর্য়া রাষ্ট্র ষন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত , এইসব সংগঠনের কাজকর্মে অংশগ্রহণের ব্যাপারে শ্রমিকদের আগ্রহ ক্রমাগত কমে গেছে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় জুড়ে । জীবনযাত্রার মানের ক্রমাবনতির প্রতিরোধে , ইউনিয়নের বাইরে থেকে ও বিরুদ্ধে আকস্মিক ধমর্ঘটের (wildcat strike) রূপগ্রহণের প্রবনতা দেখা গেছে শ্রমিকদের সংগ্রামে । সাধারণ সভা দ্বারা পরিচালিত এবং সাধারণ সংগ্রামের ক্ষেত্রে এইসব সভা দ্বারা নিবার্চিত ও প্রত্যাহারযোগ্য প্রতিনিধিদের কমিটি দ্বারা সমন্বিত (coordinated) শ্রমিক সংগ্রাম অচিরেই চলে গেছে রাজনৈতিক স্তরে কারণ তা কারখানার ভিতরে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরূপে হাজির ট্রেড ইউনিয়নের বিরোধিতার মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে । এই ধরণের সংগ্রামগুলো সাধারণীকরণ(generalization) ও আমূল পরিবর্তনমুখী ক'রে (radicalization) তুলেই কেবল শ্রমিকশ্রেণী রক্ষণাত্মক অবস্থান থেকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খোলাখুলি , মুখোমুখি আক্রমনে চলে যেতে সমর্থ হয় এবং বুজোর্য়া রাষ্ট্রব্যবস্থাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করার জন্য অপরিহারয হয়ে ওঠে ট্রেড ইউনিয়নের উচ্ছেদ ।
বিশেষভাবে সংগঠিত ( পেশা বা শিল্পভিত্তিক ) বা ‘নেতারা খারাপ' হওয়ার জন্যই শুধু পুরনো ট্রেড ইউনিয়ন গুলোর চরিত্র শ্রমিকশ্রেণী বিরোধী হয়ে ওঠেনি । এটা হয়েছে এই জন্য যে , বতর্মান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক স্বার্থের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে স্থায়ী ভাবে কোনো সংগঠন শ্রমিকশ্রেণী রাখতে পারেনা । ফলে এইসব সংগঠনের পুঁজিবাদী ক্রিয়াকলাপের বিষয়টা , একইরকম ভূমিকা পালনকারী অন্য সমস্ত ‘নতুন' সংগঠনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য , তা তারা যেভাবেই সংগঠিত হোক বা তাদের শুরুর সময়ের বাসনা যাই থাক । কোন তাৎক্ষনিক সংগ্রাম শেষ হবার পর টিকে থাকা __এমনকি ইউনিয়নের বিরোধিতা করেও __এবং শ্রমিকের তাৎক্ষনিক স্বার্থের সুরক্ষার ‘প্রকৃত নির্ভরযোগ্য' কেন্দ্র হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর (মজদুর কমিটি , মজদুর কমিশনের মত )সব সংগঠন ,‘Revolutionary Unions', ‘Shop Stewards'ইত্যাদির ক্ষেত্রেও এটা খাটে । এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকা এইসব সংগঠন বেসরকারীভাবে বা কানুনী কাঠামো বহিভূর্তভাবে হলেও বুজোর্য়া রাষ্ট্রের কাঠামোর মধ্যে অঙ্গীভূত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা এড়াতে পারেনা।
ট্রেড ইউনিয়ন ধাঁচের সংগঠনকে ‘ব্যবহার', ‘পুনর্জীবিত', বা ‘পুনর্দখল' করার যে কোন রাজনৈতিক রণনীতি শুধুমাত্র পুঁজিবাদী স্বার্থকেই সুরক্ষিত করে কেননা এটা হ'ল শ্রমিকদের দ্বারা ইতোমধ্যেই পরিত্যক্ত পুঁজিবাদী প্রতিষ্ঠানগুলোতেই নতুন ক'রে প্রাণ সঞ্চার করার চেষ্টা।
এইসব সংগঠনের শ্রমিকশ্রেণী বিরোধী চরিত্রের পঞ্চাশ বছরের বেশি সময়কার অভিজ্ঞতার পর, এই রণনীতির সপক্ষে বা সমর্থনে যেকোন অবস্থানই হচ্ছে মৌলিকভাবে শ্রমিকশ্রেণী-বিরোধী (Non-Proletarian) ।