বিশ্ব ব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের গভীরতা বোঝাতে তাবড় অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতিবিদেরা আজ হতবাক। কেউ বলেছেন "অতল খাদের কিনারে", কেউবা বলছেন "অর্থনৈতিক সুনামি", কারোর মতে "অর্থনৈতিক পার্ল হারবার" কারোর বা "অথর্নীতির ৯/১১"[1] তবে "টাইটানিক"-র সঙ্গে তুলনাটাই কেবল বাদ গেছে। আসলে ঠিক কী ঘটছে? এক নগ্ন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু উদ্বেগজনক প্রশ্ন উঠে আসছে: আমরা কি ১৯২৯-র মতই এক নতুন বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি? কিভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হল আর কিভাবেই বা আমরা এই বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে পারি? আচ্ছা,কিরকম পৃথিবীতেই বা আমরা বাস করছি?
আমাদের জীবনযাত্রার মান নির্মম অবনমনের দিকে
এব্যাপারে সত্যিই কোন সন্দেহ নেই। সমগ্র বিশ্বজুড়ে মানবতা তার অস্তিস্ত্বের ভয়াবহতম অবক্ষয়কে প্রত্যক্ষ করতে চলেছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ভান্ডার (আই এম এফ) তার সাম্প্রতিক রিপোর্টে ঘোষণা করেছে যে ২০০৯ সালের প্রথমার্ধের মধ্যেই দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশগুলোর তালিকায় আরো ৫০টি নতুন নাম অন্তর্ভূক্ত হতে চলেছে যাদের মধ্যে আফ্রিকা, লাটিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান এমনকি এশিয়ার বেশকিছু দেশ রয়েছে। শুধু সরকারী মতেই ইতিমধ্যেই ইথিওপিয়ার বারো মিলিয়ন মানুষ শুধু অনাহারজনিত কারণে মরণাপন্ন। ভারত ও চীনের মত তথাকথিত পুঁজির নতুন "সোনার হরিণ"-র ভুখন্ডেও লক্ষ লক্ষ শ্রমিক নিদারুণ দারিদ্রে পীড়িত হচ্ছে এবং হবে। একইরকমভাবে আমেরিকা এবং ইউরোপের জনগনের একটা বিরাট অংশ এক অসহ্য বঞ্চনার শিকার। সব সেক্টরের শ্রমিকেরাই আক্রান্ত: অফিস, ব্যাঙ্ক, ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, তথ্য-প্রযুক্তিক্ষেত্র, গাড়িশিল্প, গৃহনির্মাণ সবক্ষেত্রেই লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের ছাঁটাই হওয়া শুধুমাত্র কিছুসময়ের অপেক্ষা। বেকারী গগনচুম্বী। ২০০৮-র শুরু থেকে, শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রায় ১০লক্ষ শ্রমিককে ইতোমধ্যেই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে। আর এই সবে শুরু। উদ্বৃত্ত ঘোষনার এই উন্মাদ তরঙ্গের অভিঘাত এসে পড়বে সোজা শ্রমিক-পরিবারগুলোর ওপর: নেহাত ভাত কাপড়ের যোগাড় কিংবা মিনিমাম স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থাটুকু জোটানোও হয়ে পড়বে দুঃসাধ্য। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আর কোন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তুলে ধরতে পারেনা।
ওরা গতকালও ছিল মিথ্যেবাদী আর আজও মিথ্যেকথাই বলে চলেছে
শাসকদলের স্বার্থরক্ষাকারী সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং পুঁজিবাদী বিশ্বের দন্ডমুন্ডের কর্তারা এই ধ্বংসোন্মুখ অবস্থাটাকে আর কোনভাবেই গোপন রাখতে পারছে না। আর পারবেই বা কিভাবে? পৃথিবীর বৃহৎ ব্যাঙ্কগুলোর কয়েকটা ইতোমধ্যেই দেউলে হয়ে গেছে: ধন্যবাদ রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপকে: সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক থেকে শতশত বিলিয়ন ডলার, পাউন্ড, ইউরোর ইন্জেকসন দিয়ে কোনরকমে তাদের প্রাণভ্রমরা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। আমেরিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের শেয়ার বাজার অতলান্ত সংকটে নিমগ্ন: ২০০৮-র জানুয়ারি থেকে আজ অব্দি ২৫ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে যা আমেরিকার দুবছরের সামগ্রিক উৎপাদনের সমান। এথেকেই বোঝা যায় গোটা বিশ্বের শাসকশ্রেণির আসল আতঙ্কের উৎসটা কোথায়। স্টক মার্কেটের বিপর্যয়ের কারণ শুধুমাত্র ব্যাঙ্কগুলোর বিপর্যস্ত অবস্থা নয়; আমরা দেখব অথনৈতিক ক্ষেত্রে বিপুল অধোগতি, ব্যবসায়িক কর্মোদ্যোগগুলোর ক্রমবর্ধমান দেউলিয়াপনা, সর্বোপরি গত চল্লিশ বছরে দেখা যায়নি এমন অর্থনৈতিক মন্দা, যার ফলে পুঁজিপতিরা বুঝতে পারছে যে তাদের লাভের অঙ্ক এত কমে যাবে যে তাদের মাথা ঘুরে যাবে। বস্তুতঃ লাভের এই পতনের অঙ্কটাও স্টক-মার্কেটের পতনের অন্যতম একটা কারণ।
বুশ, মারকেল, ব্রাউন, সারকোজি ও হু জিন তাওদের মত পৃথিবীর দন্ডমুন্ডের কর্তারা একের পর এক শীর্ষ সম্মেলন ক'রে চলেছেন (যেমন কিনা জি-ফোর, জি-এইট, জি-সিক্সটিন, জি-ফর্টি সম্মেলন)-উদ্দেশ্য একটাই: এই ভয়াবহ ক্ষতিটাকে সীমিত ক'রে রাখা এবং আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করা। নভেম্বরের মাঝামাঝি আবার একটা শীর্ষ-সম্মেলন হচ্ছে যেটাকে কেউ কেউ "পুঁজিবাদের পুর্নস্থাপনা" করার উপায় ব'লে ভাবছেন। আর রাজনীতিকদের বিচলিত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যাবে আজকের টিভি, রেডিও আর খবরকাগজগুলোর বিশেষজ্ঞদের দিশাহীন অবস্থার; একটাই বিষয়: ‘সংকট'।
কেন এই ভ্রমজাল পাতা?
এরা অর্থনৈতিক মহা বিপর্যয়টাকে লুকোতে যখন পারছে না তখন যে করেই হোক চেষ্টা করছে সত্যটাকে আড়াল করার; সোজা কথায়, যে করেই হোক বোঝাও পুঁজিবাদের অস্তিত্ব নাকচ হয়নি, হবেও না---আসল কথা হ'ল সাময়িক কিছু "অপব্যবহার" আর "বাড়াবাড়ির" বিরুদ্ধে লড়াই করা। দেখানো হচ্ছে দোষটা আসলে ফাটকাবাজদের, অতিলোভী মুনাফাবাজদের, দোষ ‘সরকারী কর-নীতি"র, দোষ ‘নিও-লিব্যারালিজম"-র!
এই রূপকথার গল্পটা গেলানোর জন্য পেশাদার ধাপ্পাবাজদের মাঠে নামানো হয়েছে। সেই একই বিশেষজ্ঞ যারা দুদিন আগে বলেছিল অর্থনীতি বেশ স্বাস্থ্যকর অবস্থায় আছে, ব্যাঙ্কগুলো ফার্স্টক্লাস রান করছে, তারাই আজ টিভি মিডিয়াতে হামলে পড়ছে নতুন মিথ্যে শোনানোর জন্য। সেই লোকেরাই যারা গতকাল ‘নিও-লিবারালিজম" কে বলেছিল "একমাত্র" সমাধানের রাস্তা, বলেছিল অর্থনৈতিক ব্যাপারে রাষ্ট্রের নাক গলানো কমিয়ে ফেলা দরকার, তারাই আজ রাষ্ট্রকে আরো আরো বেশি বেশি ক'রে হস্তক্ষেপ করতে বলছে।
আরো রাষ্ট্র----আরো ‘নৈতিকতা', ব্যাস, তাহলেই পুঁজিবাদ চাঙ্গা! এই মিথ্যেটাই তারা আজ আমাদের খাওয়াতে চাইছে।
পুঁজিবাদ কি তার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে?
আসল কথা হল যে-সংকট আজ বিশ্বপুঁজিবাদকে ছাড়খার ক'রে দিচ্ছে তার সূচনা ইউএসেতে ২০০৭-র গ্রীষ্মকালে আবাসনশিল্পের ফানুসটা ফাটতে শুরু করার মধ্যে দিয়ে হয়নি। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধ'রে একটার পর একটা মন্দা এসেছে যথা ১৯৬৭. ১৯৭৪, ১৯৮১, ২০০১-র মন্দা। দশকের পর দশক ধ'রে বেকারি একটা স্থায়ী এবং মহামারীর মত সংক্রমনে পরিণত হয়েছে, শোষিত মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর নেমে এসেছে পাহাড় প্রমান আক্রমণ। কিন্তু কেন?
কারণ পুঁজিবাদ এমনই এক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদন করা হয় মানুষের প্রয়োজনের জন্য নয়, তা হয় বাজারে বিক্রির এবং লাভের জন্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হাজারো চাহিদা পূরণ হয় না কারণ তাদের সাধ্য নেই বা সোজা ক'রে বললে তাদের ক্রয় ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। যদি পুঁজিবাদ সংকটে পড়ে থাকে, যদি কোটি কোটি মানুষকে অসহনীয় ক্ষুধা আর দুর্দশার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হতে হয়, তবে তার কারণ এই নয় যে পুঁজিবাদ যথেষ্ট উৎপাদন করতে পারছে না, বরং বিপরীত, এ ব্যবস্থায় যতটা বিক্রি হতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদিত হচ্ছে । যতবার বুরজোয়ারা সংকটে পড়ছে ততবার তারা বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়া-নেওয়া আর কৃত্রিম বাজার তৈরির আশ্রয় নিচ্ছে। এভাবে সাময়িকভাবে বেঁচে উঠতে গিয়ে পুঁজিবাদ তার ভবিষ্যতকে আরো বিপদগ্রস্ত ক'রে তুলছে, কেননা শেষ পর্যন্ত এই বিপুল ঋণ শোধ করতে হবে! বর্তমানে ঠিক এটাই ঘটে চলেছে। গত কয়েকবছরের ‘অভাবনীয় সমৃদ্ধি'-র ভিত্তিই হ'ল এই ঋণ। বিশ্ব অর্থনীতি "ঋণ"-র ওপর ভর করেই বেঁচে ছিল আর এখন যখন সেই ধার শোধ করার পালা তখন তা তাসের ঘরের মতই ভেঙে পড়ল। ব্যাঙ্কারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ, ব্যবসায়ীদের ফাটকাবাজি বা রাজনীতিকদের পরিচালনার ত্রুটির জন্যই পুঁজিবাদী অর্থনীতির এই বিপর্যয় তা কিন্তু নয়;এরা পুঁজিবাদের নিয়মগুলোই প্রয়োগ করেছে কিন্তু সমস্যাটা এই যে পুঁজিবাদের এই নিয়মগুলো নিজগুনেই এমন যে তা এই ব্যবস্থাটাকে ধ্বংসের দিকেই নিয়ে যায়। আর এই কারণেই রাষ্ট্র আর তার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলো যতই কোটি কোটি টাকা বাজারে ঢালার চেষ্টা করুক না কেন তাতে কোন ইতিবাচক বদল আসবে না। বরং আরো ভয়াবহভাবে ঋণের ওপর ঋণের স্তুপ জমতে থাকবে। ব্যাপারটা তেল ঢেলে আগুন নেভানোর সামিল। এরকম বেপরোয়া এবং নিষ্ফলা পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে বুরজোয়াদের অক্ষমতাটাই প্রকট হয়ে উঠছে। আজই হোক বা দুদিন পর, এভাবে টাকা ঢেলে সংকট কাটানোর প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হতে বাধ্য। এতে ক'রে পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রকৃত পুনরুদ্ধার কোনমতেই সম্ভব নয়। বামপন্থী বা দক্ষিণ পন্থী কারো কোন পলিসিই আর এই মারণ ব্যাধিতে র্জজরিত ব্যবস্থাটাকে রক্ষা করতে পারেনা।
পাহাড়প্রমাণ দারিদ্রের বিরুদ্ধে শ্রেণি-সংহতি আর শ্রেণি-সংগ্রাম!
সর্বত্রই ১৯২৯-র অর্থনৈতিক মহাপতন এবং ১৯৩০-র মহা-মন্দার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করা হচ্ছে। সেই সময়ের ছবি আমাদের স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল: বেকার শ্রমিকের অন্তহীন মিছিল, গরীব মানুষের জন্য লঙ্গরখানা, চারিদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া কল কারখানা। কিন্তু আজকের সংকটটা কি সেদিনের মত? না। হয়তো পুঁজিবাদ অতীতের থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এবং তুলনামূলকভাবে উন্নত আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের সাহায্যে চূড়ান্ত পতনটা এখনও এড়াতে পারছে, তবুও আজকের সংকট আরো ভয়াবহ, আরো গভীর।
সেদিনের সঙ্গে আজকের একটি মৌলিক তফাৎ আছে। ১৯৩০-র গ্রেট-ডিপ্রেসন্ পুঁজিবাদকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলেছিল; আর আজকের এই মন্দা কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে? এটা ঠিকই যে, যুদ্ধই সংকট থেকে বেরোবার একমাত্র পুঁজিবাদী-সমাধান আর আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণিই একমাত্র এই পুঁজিবাদী সমাধানকে প্রতিহত করতে পারে। ১৯৩০-এ শ্রমিকশ্রেণি সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে প্রতিহত করতে পারেনি বরং তার শিকার হয়েছিল, কারণ, ১৯১৭-য় রাশিয়ায় শুরু হওয়া বিশ্ব-বিপ্লবের ঢেউয়ের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় সেসময় শ্রমিকশ্রেণি সেই গভীর পরাজয়ের পর্যায়ের মধ্যে দিয়েই চলেছিল। কিন্তু ১৯৬৮ থেকে তাদের বিশাল সংগ্রামের ভেতর দিয়ে শুরু ক'রে শ্রমিকশ্রেণি দেখিয়েছে যে সে পরাজয়ের পর্যায় পার ক'রে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যার ফলে এখন আর সে শোষক-শ্রেণির জন্য রক্ত ঝরাতে মোটেই রাজী নয়। গত চল্লিশ বছর ধ'রে অনেক বেদনাদায়ক পরাজয় হয়েছে, তবু শ্রেণি দাঁড়িয়ে আছে; আর বিশেষতঃ ২০০৩ থেকে সে আরো বেশি বেশি ক'রে সংগ্রামের পথে চলেছে। সংকট চলতে থাকার অর্থই হল কোটি কোটি শ্রমিকের ভয়ংকর দুর্ভোগ, এটা শুধু পিছিয়ে পড়া দেশেই নয়, উন্নত দেশেও। বেকারি, দারিদ্র এমনকি দুর্ভিক্ষেরও শিকার হতে হবে। কিন্তু এটা শোষিত শ্রেণির প্রতিরোধ সংগ্রামেরও জন্ম দেবে।
বুরজোয়াদের অথর্নৈতিক আক্রমণগুলো ঠেকানোর জন্য এইসব সংগ্রামগুলো চূড়ান্তভাবে দরকার যাতে ক'রে তারা শ্রমিকশ্রেণিকে নিরঙ্কুশ দারিদ্রের মধ্যে ঠেলে দিতে না পারে। কিন্তু এটা পরিষ্কার যে শ্রমিকশ্রেণি তাদের সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে পুঁজিবাদের এই গভীর থেকে গভীরতর সংকটে ডুবতে থাকাটাকে থামাতে পারেনা। একারণেই এইসব প্রতিরোধ-সংগ্রাম আরো গুরুত্বপূর্ণ এক সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট ক'রে তোলে। এইসব সংগ্রাম শোষিত শ্রেণিকে আরো ঐক্যবদ্ধ, সুসংহত হতে এবং সমষ্টিগত শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, তাদের মধ্যে এই চেতনার সঞ্চার করে যে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটাকে উৎখাত করাটাই বর্তমানে একমাত্র বিকল্প যার ভেতর দিয়ে মানব প্রজাতি রক্ষা পেতে পারে। এই সমাজকে উৎখাত ক'রে তার জায়গায় এমন এক সমাজ গঠন করা যার ভিত্তিটাই হবে পুঁজিবাদী সমাজের থেকে গুনগতভাবে আলাদা। এহবে এমন এক সমাজ যা শোষন এবং লাভের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়,সে সমাজে বাজারের জন্য উৎপাদন না হয়ে তা হবে মানুষের প্রয়োজনের জন্য উৎপাদন; তাহবে এমন এক সমাজ যা সংগঠিত হবে খোদ উৎপাদকদের নিজেদের দ্বারাই, বিশেষসুবিধাভোগী সংখ্যালঘিষ্ঠ কিছু মানুষের দ্বারা নয়। এককথায় তা হবে কমিউনিস্ট সমাজ।
আটটা দশক ধ'রে বুরজোয়াদের ডান বাম সব অংশই হাতে হাত মিলিয়ে পূর্ব ইউরোপ এবং চীনকে ‘কমিউনিস্ট ব্যবস্থা' ব'লে প্রচার করেছে, যদিও সেগুলো রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের বর্বরোচিত প্রকাশরূপ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। বুরজোয়াদের মতলব হল এটা বোঝানো যে অন্য কোন সমাজ ব্যবস্থার কথা ভাবা নেহাতই নিষ্ফল, পুঁজিবাদই শেষ কথা। কিন্তু এখন পুঁজিবাদের ঐতিহাসিক দেউলিয়াপনা জলের মত পরিষ্কার, আর তাই বিপরীতে কমিউনিস্ট সমাজ গঠনের লক্ষ্য ও সচেতনতায় শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রামকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
পুঁজিবাদের লাগামছাড়া আক্রমণের সামনে দাঁড়িয়ে, সমস্ত শোষণ, দারিদ্র আর যুদ্ধের ববর্রতার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে----
দুনিয়ার শ্রমিকশ্রেণির সংগ্রাম দীর্ঘজীবি হোক!
দুনিয়ার মজদুর এক হও!
ইন্টারন্যাশানাল কমিউনিস্ট কারেন্ট, ২৫ ১০ ২০০৮
[1] Respectively: Paul Krugman (the last Nobel Prize winner in economics); Warren Buffet (an American investor, nicknamed the ‘oracle of Omaha', so much is the opinion of this billionaire from small town Nebraska respected in the world of high finance); Jacques Attali (economic adviser to French president Nicolas Sarkozy) and Laurence Parisot (president of the French bosses' association)