The counter-revolutionary character of the “workers' parties”
যে সমস্ত পার্টি বা সংগঠন--‘সমাজতন্ত্র' ‘গণতন্ত্র' , ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা' (Anti-Fascism) , ‘জাতীয় স্বাধীনতা' (National Independence) , ‘সংযুক্ত মোর্চা'(United front) অথবা ‘মন্দের ভালো'(Lesser evil)-র নামে বুজোর্য়া রাষ্ট্র ও গোষ্ঠীগুলোর মধ্যেকার অনিবারয দ্বন্দ্বে কোন না কোন রাষ্ট্র বা গোষ্ঠীর পক্ষে দাঁড়ায় (এমন কি তা সমালোচনামূলক এবং শর্তাধীন হলেও ), --যারা বুজোর্য়াদের নিবার্চনী সার্কাস বা শ্রমিকশ্রেণী বিরোধী ট্রেড ইউনিয়নবাদী ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহন অথবা স্ব-পরিচালনার (Self management) বিভ্রান্তি সৃষ্টির মধ্যে রাজনৈতিক ক্রিয়ার্কমের ভিত্তি খুঁজে পায়, তারা সকলেই বুজোর্য়াদের রাজনৈতিক যন্ত্রের অংশ এবং পুঁজির দালাল মাত্র। সোসালিষ্ট ও কমিউনিষ্ট পার্টিগুলির ক্ষেত্রে এটা বিশেষভাবে প্রযোজ্য বা সত্য ।
একসময় বিশ্ব প্রলেতারিয়েতের সত্যিকার অগ্রবাহিনী হয়ে উঠেছিল এইসব পার্টি । কিন্তু অধঃপতন প্রক্রিয়ার পরিণতি এইসব পার্টিকে শেষ পযন্ত নিয়ে এসেছে বুজোর্য়া শিবিরে (সোসালিষ্ট পার্টিগুলি দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বা Second International এবং কমিউনিষ্ট পার্টিগুলি তৃতীয় আন্তর্জাতিক বা Third International এর অন্তর্ভুক্ত ছিল ) । International গুলির সত্যিকার অর্থে মৃত্যুর পরও (যদিও তারা প্রলেতারীয় স্বরূপবিহীন বাহ্যিক রূপ ধারণ করে টিকে ছিল ) এইসব পার্টির প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ভাবে নিজেদের দেশের বুজোর্য়া রাষ্ট্র যন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য( এবং প্রায়শই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ) অঙ্গে অর্থাৎ জাতীয় পুঁজির বিশ্বস্ত ম্যানেজারে ক্রমাগত বেশি রূপান্তরিত হয়েই টিকে থাকল ।
সোসালিষ্ট পার্টিগুলোর ক্ষেত্রে এটা ঘটল যখন সুবিধাবাদ (opportunism) ও সংস্কারবাদের (reformism) পচনশীল প্রক্রিয়ার পরিণাম স্বরূপ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (যা দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের মৃত্যু সূচিত করল ) দক্ষিনপন্থী উগ্র সামাজিক স্বাদেশিকতার (social chauvinism) নেতৃত্বে প্রধান প্রধান পার্টিগুলোর অধিকাংশই ‘ জাতীয় প্রতিরক্ষা' (National defense) এবং পরে যুদ্ধ পরবর্তী বিপ্লবী জোয়ারের খোলাখুলি বিরোধিতার নীতিই শুধু গ্রহণ করলনা, ১৯১৯ এর জামার্নীর মত অন্যত্রও প্রলেতারিয়েতের ঘাতকের ভূমিকা পযন্ত পালন করল । এই দক্ষিনপন্থী অংশ তখন থেকেই অর্থাৎ যুদ্ধের সময় থেকেই বুজোর্য়া শিবিরের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গিয়েছিল । নিজ নিজ দেশের বুজোর্য়া রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে এইসব পার্টির প্রত্যেকটির চূড়ান্ত একীভবন (Integration) ঘটতে লাগল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে । তবে ১৯২০ এর দশকের শুরুর দিকেই এই একীভবন প্রক্রিয়ার নিশ্চিত সমাপ্তি ঘটে গেল যখন এইসব পার্টির মধ্যেকার প্রলেতারীয় ধারাগুলিকে হয় বার করে দেওয়া হল অথবা তারা নিজেরা বেরিয়ে এসে Communist International এ যোগদান করল ।
কমিউনিষ্ট পার্টিগুলোর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটল। একই রকম সুবিধাবাদী অধঃপতন পরিণামে তারাও পুঁজিবাদি শিবিরের অন্তভুর্ক্ত হয়ে পড়ল । ১৯২০ এর দশকের প্রথম দিকেই এই প্রক্রিয়ার শুরু । কমিউনিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল প্রকৃত অর্থে শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে ( ১৯২৮এ ‘একদেশে সমাজতন্ত্রের' তত্ত্বের স্বীকৃতির দ্বারাই এই পরিসমাপ্তি সূচিত হল ) । Left fraction গুলোর আপোষহীন সংগ্রাম সত্ত্বেও এবং পরবর্তী কালে তাদের বহিষ্কারের পর ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে এইসব পার্টির সম্পূর্ণ একীভবনই হল এই প্রক্রিয়ার পরিণতি । আপন আপন দেশে বুজোর্য়াদের সমরাস্ত্র সংগ্রহ অভিযানে অংশগ্রহণ এবং ‘Popular front' গুলিতে যোগদানের মাধ্যমে সূচিত হল এই একীভবন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘প্রতিরোধ যুদ্ধ'(resistance) এবং যুদ্ধ পরবর্তী কালে জাতীয় পূর্ণনির্মাণে (national reconstruction ) সক্রিয় অংশগ্রহণ সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করেছে যে এইসব পার্টি হল আসলে জাতীয় পুঁজির বিশ্বস্ত চাকর এবং ‘প্রতিবিপ্লবের সবচেয়ে নিখুঁত প্রতিমূর্তি' ।
যে সব পার্টি সুনিশ্চিত ভাবে বুজোর্য়াদের শিবিরে যোগদান করেছিল , সমস্ত তথাকথিত বিপ্লবী ধারা যেমন মাওবাদ হল তাদেরই একটা প্রকারভেদ মাত্র । কমিউনিষ্ট পার্টিগুলোর প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রলেতারীয় প্রতিবাদের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠার পর ট্রটস্কিবাদও এইরকম অধঃপতন প্রক্রিয়ার শিকার হল। সোসালিষ্ট ও কমিউনিষ্ট পার্টিগুলোর ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংযুক্ত মোর্চার' (anti-fascist alliances) মত কোনকোন অবস্থানের পক্ষে দাঁড়িয়ে চলতিধারার নৈরাজ্যবাদ (traditional anarchism) বর্তমানে তাদেরই দৃষ্টিকোণ ও চিন্তাভাবনার অনুসারী হয়ে উঠেছে আর তাই তারাও একই অর্থাৎ পুঁজিবাদী শিবিরেরই অন্তভুর্ক্ত । এদের প্রভাব কম হতে পারে বা এরা বেশ গরম গরম আপাত যুক্তিপূর্ণ নতুন ধরনের কথাবার্তা বলতে পারে কিন্তু তাতে তাদের কর্মসূচির বুজোর্য়া ভিত্তির কোনরকম পরিবর্তন হয় না , বরং এতে তারা বুজোর্য়া পার্টিগুলোর আরো ভালো পরিপূরক ও উপযোগী দালাল হয়ে ওঠে মাত্র ।