বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, ভবিষ্যতের বেকার, হবু অস্থায়ী ও আংশিক-সময়ের শ্রমিক এবং বতর্মান শ্রমিক
পুঁজিবাদ বিরোধী সংগ্রামে সামিল হলেন সকলেই
ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম থেকে বিদ্যালয়গুলিতে ছুটি থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ফ্রান্সের অধিকাংশ বড় শহরগুলিতে সরকার ও মালিকের অথনৈতিক আক্রমনের বিরুদ্ধে এবং CPE1 আইনের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে এবং তাদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছে, যদিও গণমাধ্যমগুলি (বিশেষত, টিভি) এ বিষয়ে সম্পূণ নীরব। বরং ‘বারবারিয়ান গ্যাং’2 এর জঘন্য ক্রিয়াকলাপগুলি প্রচারের আলোতে নিয়ে আসার প্রতিই তাদের মনোযোগ বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিক্ষোভ কতটা সঠিক?
স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা সস্তা শ্রমের ভান্ডার পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় বেকার উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এটা ছাত্রসমাজ উপলব্ধি করেছে এবং সেই জন্যই পাশ্ববর্তী কারখানার শ্রমিক ও বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার যুবকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং তাদেরকে সংগ্রামে সামিল করার জন্য তারা বিভিন্ন ছাত্র-সমাবেশ থেকে(যেমন Caen এ হয়েছে) প্রতিনিধি পাঠিয়েছে । আসলে CPE শ্রমিক শ্রেণীর কাছে একটি ‘পরিকল্পিত অনিশ্চয়তা’ ছাড়া কিছুই নয়। এই অনিশ্চয়তা শুধু যুব সমাজের উপরই প্রভাব ফেলেনি, শ্রমিক শ্রেণীর প্রত্যেক প্রজন্মই এই অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব ও দারিদ্রের শিকার। এই জন্যই কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের(যেমন Paris III Censier) অধ্যাপক,শিক্ষাকমী বন্ধুরাও এই ছাত্রছাত্রীদের প্রতি একাত্ম হয়ে ধমর্ঘটে সামিল হয়েছে।
CPE আসলে পুঁজিবাদের দেউলিয়াপনারই নগ্ন প্রকাশ ।
গত নভেম্বরে প্রবাসী যুবকেরা তাদের প্রতি অন্যায়, অপমান ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ‘নতুন রাষ্ট্রের’ বিরুদ্ধে শহরতলিগুলিতে দাঙ্গায় মেতে ওঠে ; শাসকশ্রেণী এবং তাদের সরকার পাল্টা কার্ফু জারি ক’রে এবং প্রবাসী যুবকদের দেশে থাকার অধিকার নেই বলে বিতাড়িত ক’রে তাদের শৃঙ্খলা বজায় রাখে। বতর্মানে সেই শাসক শ্রেণী শ্রমিকদের সন্তানসন্ততিদের উপর ‘বলপ্রয়োগ ক’রে ঠান্ডা করার’(power cleanse)এর নীতি চালিয়ে যেতে চায়। কোন শ্লোগানই এর চেয়ে বেশি অমানবিক নয়। তারা ‘সুযোগের সাম্যের’ নামে CPE আইনের মধ্য দিয়ে অনিশ্চয়তা ও স্বল্প মজুরির বিষয়টি আরোপ করতে চায়। এই আইনে যে সব ‘সৌভাগ্যবান’ একটি চাকরি জোগাড় করতে পারবে তারা নিজেদেরকে মালিকের করুণার পাত্র হিসেবে দেখবে, যদিও তারা ঘরবাঁধা ও সন্তান প্রতিপালনের মতো বাঁচার আশাটুকুও দেখতে পাবে না। তারা রোজই কাজে যাওয়ার সময় এই ভয়ে থাকবে যে এই বুঝি তাদের হাতে সেই মুদ্রিত চিঠিটি ধরিয়ে দেওয়া হবে যাতে এই অশুভ বাক্য লেখা থাকবে
‘ তোমাকে আর প্রয়োজন নেই’। এই হলো মজুরি দাসত্ব! এই হলো পুঁজিবাদ !
CPE শুধুমাত্র সেই সাম্যই দিতে পারে যা দারিদ্রের সাম্য। CPE পারে শহর শেষের ঘিঞ্জি, নিচু জলা এলাকায় শ্রমিক শ্রেণীকে ঠেসে গুঁজে দিতে,কোন রকমে গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য একটি অস্থায়ী কাজ থেকে অন্য একটি অস্থায়ী কাজে দৌড় করাতে অথবা বেকার ভাতা বা RMI3 দিয়ে তিলে তিলে মারতে ---- এই হলো সেই ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ যা শাসক শ্রেণী এবং তাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র শ্রমিক শ্রেণীর সন্তানসন্ততিদের জন্য CPE ’র মধ্য দিয়ে উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছে।
এই সব শিশুদের পিতামাতারাই ২০০৩ সালে পেনশন সংস্কার আইনের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছিল, এবং তখন প্রধানমন্ত্রী ভিলপাঁর পূবর্সূরী র্যাফরিন এই বলে রাস্তায় নেমে পড়া সংগ্রামীদের উদ্দেশে তিক্ততা প্রকাশ করেছিলেন যে “রাস্তা দেশ শাসন করে না” (It’s not the street that rules)।
বয়স্ক শ্রমিক তথা ভবিষ্যত পেনশনভোগীদের উপর আক্রমনের পর পুঁজিবাদ এখন যুব-সম্প্রদায় তথা ভবিষ্যত বেকারদেরকে আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে স্থির করেছে। CPE আইনের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদের আসল চেহারা অনাবৃত হয়ে গেছে যে , একটি অবক্ষয়িত ব্যবস্থা নতুন প্রজন্মকে কিছুই দিতে পারেনা।বর্তমানে এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা অনতিক্রমনীয় অর্থনৈতিক সংকটের দ্বারা পচনশীল হয়ে পড়েছে। এটি সেই ব্যবস্থা যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শুধু অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র তৈরী করতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে চলেছে ।১৯৯১ -এর উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকে রক্তস্রোত একবারও থামেনি । বতর্মানে পুঁজিবাদ হল সেই দেউলিয়া ব্যবস্থা যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে শুধু বেকারত্ব ও দারিদ্র দিয়েছে এবং নিবির্চারে হত্যা চালিয়েছে ইরাকে, মধ্যপ্রাচ্যে ও আইভরি উপকূলে4 ।
দিনের পর দিন যে অবক্ষয়িত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পৃথিবীর উপর তার শাসন কায়েম করে রেখেছে তাকে যে কোন মূল্যে উৎখাত করতেই হবে।এই কতব্য র্অনুধাবন করেই প্যারিস টোলবিয়াক(Paris Tolbiac) এর ছাত্র সমাবেশ থেকে ঘোষিত হয়েছিল সেই শ্লোগান – ‘এটাই পুঁজিবাদকে উৎখাত করার মোক্ষম সময়’ (It’s time to put an end to capitalism)আর সেই কারণেই গত ৩রা মার্চ Paris Censier এর ছাত্ররা বিপ্লবী গান গাওয়ার জন্য একটি থিয়েটার সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানায়; উত্তোলিত হয় লাল নিশান এবং শতশত ছাত্র শিক্ষক ও কর্মচারী বন্ধুরা ‘আন্তর্জাতিক সংগীত’(Internationale) এর সঙ্গে গলা মেলায়।বিশ্ববিদ্যালয়চত্বরে মার্কসের কমিউনিস্ট ইস্তাহারের কপি বিতরণ করা হয়,বারংবার ধ্বনিত হতে থাকে ‘বিপ্লব’(REVOLUTION) শব্দটি। ছাত্ররা শুরু করে শ্রেণী সংগ্রামের উপর আলোচনা, যেখানে উঠে আসে ১৯১৭’র রাশিয়ার বিপ্লবের প্রসঙ্গ, আলোচনায় রোজা লুক্সেমবার্গ,কার্ল লিবনেটের মতো শ্রমিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্বদের নাম উঠে আসে যাদেরকে ক্ষমতাসীন সোশালিস্ট পার্টির নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল। শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হলে তাদের অবশ্যই অগ্রজদের সংগ্রামের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে হবে। বিশেষ করে মনে রাখতে হবে ১৯৬৮’র মে মাসের ঐতিহাসিক আন্দোলনের কথা।
১৯৬৮’র মে মাসের আন্দোলন আমাদের সমুখ পানের পথ-নির্দেশ দিয়েছে –
সেই উত্তাল সময়ে অধিকাংশ উন্নত দেশের বিশেষভাবে আমেরিকা ও জামার্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল।ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৯৬৮-র মে-তে দারুনভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছিল। তাদের এই সংঘবদ্ধতা তখনই সম্পূরণো নতুনমাত্রা পেয়েছিল, যখন ধর্মঘটী ৯ লক্ষ শ্রমিকের সঙ্গে সমগ্র শ্রমিকশ্রেণী এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। তখন বেশীরভাগ সচেতন ছাত্ররা তাদের বিশেষ দাবী-দাওয়া থেকে সরে গিয়ে শ্রমিকশ্রণীর সাধারণ দাবীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে শ্রমিকশ্রেণীর অংশ হিসেবেই নিজেদেরকে যুক্ত করেছিল। তারা শ্রমিকদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে আন্দোলনের পরিস্থিতি ও পরিপ্রেক্ষিত আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।প্রত্যেক জায়গায় ‘বিপ্লব তথা পুঁজিবাদকে উৎখাত করার প্রয়োজনীয়তা’ __এই ছিল বির্তকের বিষয় ।
মে ১৯৬৮-র আন্দোলন বিপ্লবের পরিণতি পায়নি । পায়নি কারণ তখনও পযন্ত পুঁজিবাদী সংকট ছিল সূচনাপরবে। কিন্তু তাতেই বুর্জোয়ারা তাদের অস্তিত্ব সর্ম্পকে ভীত হয়ে পড়েছিল । সরকার যেভাবে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়েছিল তাতে ইউনিয়নগুলিকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ ,কারণ তাদের যথাসাধ্য চেষ্টার দ্বারা ধমঘর্টীদের কাজে ফেরৎ পাঠানো সম্ভব হয়েছিল । ধন্যবাদ প্রাপ্য বামপন্থী সংগঠনগুলির এবং বিশেষকরে সেই সব সংগঠনগুলোর যারা শ্রমিকশ্রেণীর স্বাথরর্ক্ষার নামে De Gaulle5-র ডাকা নিবাচর্নে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিল।
মে-র ১৯৬৮ দেখিয়েছে ‘বিপ্লব’যাদুঘরের ধুলোয় ঢাকা পড়া নিছক প্রদশর্নীর সামগ্রী নয়। বিপ্লব কোন সুদূর অতীতের ধারনা মাত্র নয় ,বরং সমাজের অপরিহারয ভবিষ্যৎ হল বিপ্লব। সেদিনের সংঘবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন দেখিয়েছে যে,শাসকশ্রেণী সমাজের শোষিত মানুষকে আর জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে ধরে রাখতে পারবে না, দেখিয়েছে ১৯১৪ ও ১৯৩৯ সালের মতো একটি ৩য় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত করার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিকশ্রেণী স্বয়ং। গভীরতম অর্থনৈতিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকশ্রণীর সংঘবদ্ধ আন্দোলনের জন্যই বুরজোয়ারা ১৯৩০-এর মতো নিবির্চার মানবহত্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি।
ভবিষ্যৎ নয়া প্রজন্মের হাতে
CPEর বিরুদ্ধে যুব সম্প্রদায়ের আন্দোলন দেখাল যে, ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের গর্ভে নতুন সমাজের বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছে। ভবিষ্যৎ এই নয়া প্রজন্মের হাতেই। বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ অনুধাবন করতে শুরু করেছে যে, বেকার অথবা অনিশ্চিত শ্রমিকহিসেবে তাদের বেশিরভাগ অংশটাই ভবিষ্যতের শ্রমিক শ্রেণীর অন্তর্গত।তারা সেই শোষিত শ্রেণী, পুঁজিবাদ যাদের উৎপাদন-পদ্ধতি থেকে ক্রমাগত বেশী পরিমানে ছাঁটাই করে চলেছে।এরা সেই শ্রেণী যাদের সামনে নিজেদের ও সন্তানদের ভবিষ্যত রক্ষা করা এবং লড়াইকে জোরদার করা ছাড়া আর কোন কিছু বেছে নেবার নেই। এরা সেই শ্রেণী যাদের সামনে শোষণ, দারিদ্র, বেকারত্ব ও ববরর্তার অবসান ঘটানোর উপায় হিসাবে পুঁজিবাদকে উৎখাত করা ছাড়া আর কিছু বেছে নেবার নেই ।এরাই সেই একমাত্র শ্রেণী যারা গড়ে তুলতে পারে নতুন বিশ্ব, যে বিশ্ব শোষণ,প্রতিযোগিতা ও মুনাফার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে না বরং তা সমগ্র মানবসমাজের চাহিদার সন্তুষ্টিবিধান করবে । ১৯১৪ সালের যুদ্ধক্ষেত্রে কামানের খাদ্য হিসাবে যাদের পাঠানো হয়েছিল তারা বেশীরভাগই ছিল শ্রমিকশ্রেণীর অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান। রোজা লুক্সেমবার্গ যাদের বলেছিলেন ‘সবর্হারার সুন্দর কুসুম’,সেই নতুন প্রজন্মকেই পুঁজিবাদ ছিঁড়ে-খুড়ে রক্তলাঞ্ছিত করেছিল।
একবিংশ শতাব্দীতে এই‘সবহারার সুন্দর কুসুম’দের দায়িত্ব নিতে হবে সেই অবক্ষয়িত পুঁজিবাদকে ধ্বংস করার, যে পুঁজিবাদ ১৯১৪ও ১৯৩৯ সালের বিশ্বযুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর প্রজন্মকে বিনষ্ট করেছে । সমগ্র শ্রমিকশ্রণীর সমস্ত প্রজন্মের সম্মিলিত সংগ্রামের বিকাশের মধ্যে দিয়েই পুঁজিবাদকে ধ্বংস করা সম্ভব। সম্প্রতি ব্রাজিলের Vitoria da conquista বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস সংক্রান্ত বিতর্কে অংশগ্রহনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে6। তারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে যে, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই তারা তাদের পিতা-পিতামহ-প্রপিতামহদের বাহিত সংগ্রামের মশালকে প্রজ্জ্বলিত রাখতে পারে। এই ছাত্ররা তাদের বক্তব্যই শুনতে চাইছিল যারা অতীত ইতিহাসকে তাদের মধ্যে সঞ্চালিত করতে পারবে। এ হল সেই অতীত যার উপর ভিত্তি করে নয়াপ্রজন্ম তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে। তারা উপলব্ধি করেছে যে, শ্রেণীসংগ্রামের জীবন্ত ইতিহাস শুধু বই পড়ে শেখা যায়না সংগ্রামের বাস্তবভূমি থেকেও একে জানতে হয়।তারা কথা বলার,প্রশ্ন করার,ভিন্নমত পোষন করার এবং তাদের (বক্তাদের) যুক্তিকে বিরোধ করার দুঃসাহস দেখাতে পেরেছিল।যে সমস্ত শ্রমিক ,বেকার ও বিপ্লবীরা পুঁজিবাদকে উৎখাত করতে চায় তাদের জন্য এখন ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বক্তৃতামঞ্চগুলোর দরজা খুলে রাখা উচিৎ ।
সামনে এখন একটিই পথ : সমগ্র শোষিত শ্রেণীর ঐক্য ও সংহতি গড়ে তোলা।
বেশ কিছু সময় ধরে পৃথিবী জুড়ে শ্রমের দুনিয়া জামার্নী,স্পেন, আমেরিকা,ভারত ও লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ক্ষেত্রগুলি ধমর্ঘটের দ্বারা আলোড়িত হয়ে চলেছে। বেকারী ও ছাঁটাই’র বিরুদ্ধে প্রতিটি জায়গাতেই ধমর্ঘটীরা সমস্ত প্রজন্মের মধ্যে এবং বেকার ও চাকুরীজীবিদের মধ্যে সংহতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
ছাত্রসমাজ! যদি তোমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চবিদ্যালয়ের চার দেওয়ালের গন্ডীর মধ্যে নিজেদেরকে আবদ্ধ রাখো তাহলে CPEর বিরুদ্ধে তোমাদের বিক্ষোভ ‘মাত্র ‘৯ দিনের বিস্ময়’ হয়ে থেকে যাবে। তোমাদেরকে উৎপাদন-প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে, ফলে তোমাদের হাত থেকে পুঁজিবাদী-অর্থনীতিকে অসাড় ক’রে দিয়ে শাসকশ্রণীর উপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ারটাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
শ্রমিক, বেকার ও পেনশনভোগীগন! এখন সংঘবদ্ধ হওয়ার সময়,কারণ আপনাদের সন্তান-সন্ততিরা এখন আক্রান্ত। আপনারাই সমাজের সম্পদ উৎপাদন করে এসেছেন এবং এখনো করে চলেছেন। পুঁজিবাদ-বিরোধী সংগ্রামের প্রধান চালিকাশক্তি আপনারাই।
শহরতলির বেকার যুবকগন ! শুধু তোমরাই বঞ্চিত হবে তা নয়! বতর্মানে পুঁজিপতিরা তোমাদের বলছে‘ইতর-উছৃঙ্খল-জনতা’ আর ১৯৬৮ সালে যারা পুঁজিবাদের শোষনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল তোমাদের সেই পূবর্সূরীদের তারা বলত: ‘জঘন্য সমাজবিরোধী’ !
ভবিষ্যতের একমাত্র স্বপ্ন (বিপ্লব ) অন্ধ হিংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে নিহিত নেই , আছে সমগ্র শ্রমিকশ্রেণীর প্রত্যেক প্রজন্মের সংঘবদ্ধ লড়ায়ের মধ্যে ,আছে ধমর্ঘটের মধ্যে, আন্দোলনের মধ্যে,স্কুল-কলেজ-কর্মস্থলের সেইসব আলোচনাসভার মধ্যে,পথসভার মধ্যে ____যেখানে আমরা বেকারত্ব,অনিশ্চয়তা এবং দারিদ্রের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত বিক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে পারি।
CPE নিপাত যাক! পুঁজিবাদ নিপাত যাক ! শ্রমিকশ্রেণীর শৃঙ্খল ছাড়া হারাবার কিছু নেই, কিন্তু জয় করবার জন্য আছে সারা দুনিয়া ।
ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিষ্ট কারেন্ট(ICC) , ০৬.০৩.০৬
যদি দায়িত্ব অনুভব করেন তবে এই লিফলেটটি কপি ক’রে প্রচার করুন।
1. CPE: Contrat Premiere Embauche: ২৬ বছরের নিচে থাকা তরুন শ্রমিকদের জন্য ভিলপাঁ সরকারের নতুন শ্রম-আইন যার অন্যতম নিয়মটি হল ২ বছরের trial period (ট্রায়াল পিরিয়ড), যে সময়ের মধ্যে, চাকরিতে নিয়োগকারী চাইলেই নিযুক্ত শ্রমিকটিকে কোন কারণ না দশির্য়েই ছাঁটাই করতে পারবে! ইতোমধ্যেই Contrat Nouvelle Embauche (CNE)’র মধ্যে দিয়ে ২৫ জনের কম শ্রমিক বিশিষ্ট কোম্পানীগুলোর ক্ষেত্রে একই কালাকানুন প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। এভাবে CPE,CNE এবং CDD Seniors(বৃদ্ধ শ্রমিকদের জন্য স্বল্প সময়ের চুক্তি)’র মাধ্যমে ফরাসী শ্রম আইনকে কে এক ঝটকায় বদলে ফেলতে চাইছে সরকার আর তার ভেতর দিয়ে বতর্মানে শ্রমিকেরা যেটুকু অধিকার ভোগ করে সেটুকুও কেড়ে নিতে চাইছে।
2. একদল দুষ্কৃতিকারী যারা একটি দোকানের কর্মীকে টাকা আদায়ের আশায় কিডন্যাপ করে এবং নৃসংশভাবে খুন করে।
3. Revenue Minimum d’Insertion : একজন কমর্হীন ব্যক্তির জন্য ন্যূনতম রোজগার বতর্মানে যা মাসিক মোট ৪৩৩ ইউরো--- প্রতিমাসের ঘরভাড়ার থেকেও যা কম!
4. যেখানে এখন ফরাসী সেনা ‘শৃঙ্খলা রক্ষা’(!) করছে।
5. তৎকালিন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট
6. আমাদের নোড১৭১১ তে প্রকাশিত[ ইংরাজী সাইট en.internationalism.org] দেখুন।