সেই ১৯১৪ সাল থেকে ঘটে আসা বিশ্ব-পুঁজিবাদের শতাব্দীব্যাপী স্থায়ী যুদ্ধের সর্বশেষ নিদর্শন মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রক্তস্নাত সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ!
লক্ষ লক্ষ নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি পুরো দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা্র ঘটনা আগামী দিনগুলিতে আরও ভয়াবহ নৃশংসতার প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনছে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীর ছোট-বড় বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদীশক্তি যে যৌক্তিক সমাধানের কথা বলছে সেটা আসলে বিভিন্ন দেশের জাতীয় প্রতিপক্ষীয় বুর্জোয়াশ্রেণীর ভ্রাতৃঘাতী হত্যায় শ্রমিকশ্রেণিকে বিভক্ত করা ও পক্ষাবলম্বনের জন্য প্রস্তুত করার বিশাল প্রতারণার শামিল।
আজ ইসরায়েল ও গাজায় বসবাসরত মানুষের ওপর অবিরত গোলাগুলির অগ্নিবর্ষণ হচ্ছে। একদিকে রয়েছে হামাস, অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। মাঝখানে শ্রমিকদের ওপর চলছে বোমাবর্ষণ, কার্যকর করা হচ্ছে মৃত্যুদন্ড এবং অগণিত মানুষকে জিম্মি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে মারা গেছে হাজার হাজার মানুষ।
সারা বিশ্বে বুর্জোয়ারা আমাদের কোন একটি পক্ষ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। ইসরায়েলি নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের জন্য, অথবা ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়ার পক্ষ নেওয়ার জন্য। প্রত্যেকেই যুদ্ধকে ন্যায়সঙ্গত করার জন্য একে অপরের বর্বরতার নিন্দা করে চলেছে। আমরা দেখেছি, ইসরায়েলি রাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে অবরোধ, হয়রানি, চেকপয়েন্ট এবং অপমানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের উপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলো ছুরি হামলা ও বোমা হামলা চালিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে। একে অপরের রক্ত ঝরানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
এই প্রাণঘাতী কর্মকান্ডের যুক্তিই সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের যুক্তি! শোষক এবং তাদের রাষ্ট্রই সবসময় নিজেদের স্বার্থরক্ষায় এই নির্দয় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা, সেই শ্রমিক শ্রেণী, ও শোষিত,মানুষ যারা সবসময় আমাদের জীবন দিয়ে মূল্য পরিশোধ করে থাকি।
আমাদের জন্য, সর্বহারাদের জন্য, বেছে নেওয়ার মতো কোনও পক্ষ নেই, আমাদের কোনও স্বদেশ নেই, রক্ষা করার মতো কোনও জাতি নেই! সীমান্তের দু'পাশে, আমরা একই শ্রেণীর! না ইসরায়েল, না ফিলিস্তিন!
কেবলমাত্র ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণীই এই ক্রমবর্ধমান গণহত্যা এবং তাদের পিছনে থাকা সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের অবসান ঘটাতে পারে। আমরা দেখেছি, ১৯১৭ সালে জিমারওয়াল্ডে মুষ্টিমেয় কমিউনিস্ট বামপন্থীরা যে অনন্য সমাধানের পথের বার্তা দিয়েছিল সেইপথেই রাশিয়ার বিপ্লবী শ্রমিকশ্রেণি অক্টোবর মাসে পুঁজিবাদী শাসনকে উৎখাত করেছিল এবং তার নিজস্ব রাজনৈতিক শ্রেণি শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই দৃষ্টান্তই একটি বিস্তৃত আন্তর্জাতিক বিপ্লবী আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটাতে বাধ্য করেছিল।
সেই বিপ্লবীস্রোতের পরাজয় থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে বর্তমানে যে একমাত্র রাজনৈতিক ধারা আন্তর্জাতিকতাবাদী নীতিকে কঠোরভাবে বজায় রেখেছে তারা হলো কমিউনিস্ট লেফট ধারা। আমরা দেখেছি, ত্রিশের দশকে, স্প্যানিশ যুদ্ধ এবং চীন-জাপান যুদ্ধের সময় শ্রমিকশ্রেণির মৌলিক লাইনটি রক্ষা করেছিল কমিউনিস্ট লেফট ধারা। সেইসময় স্ট্যালিনবাদী, ট্রটস্কিবাদী বা নৈরাজ্যবাদীদের মতো অন্যান্য রাজনৈতিক স্রোতগুলি তাদের সাম্রাজ্যবাদী শিবিরকে বেছে নিয়েছিল যা এই দ্বন্দ্বগুলিকে উস্কে দিয়েছিল। কমিউনিস্ট বামপন্থীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার আন্তর্জাতিকতাবাদ বজায় রেখেছিল এবং এই অন্যান্য স্রোতগুলি সাম্রাজ্যবাদী হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিল যা 'ফ্যাসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী' এবং এটাকে 'সোভিয়েত' ইউনিয়নকে রক্ষার করার মধ্যে লড়াই হিসাবে সাজানো হয়েছিল।
আজও কমিউনিস্ট বামপন্থীদের ক্ষুদ্-সংগঠিত শক্তিগুলো সেই আন্তর্জাতিকতাবাদের নীতিকে মেনে চলে, কিন্তু তাদের শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে কারন তারা নিজেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে এবং পারস্পরিক বৈরীতা সৃষ্টি করে নিজেদের দুর্বল করেছে।
একারণেই সাম্রাজ্যবাদী বর্বরতার ক্রমবর্ধমান পতনের মুখে এই আপাত বিচ্ছিন্ন শক্তিকে অবশ্যই সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে, শোষকদের পিছনে জাতীয় প্রতিরক্ষার আহ্বানের বিরুদ্ধে, 'শান্তির' জন্য ভণ্ডামিমূলক আবেদনের বিরুদ্ধে এবং কমিউনিস্ট বিপ্লবের দিকে পরিচালিত সর্বহারা শ্রেণি সংগ্রামের জন্য একত্রে আহ্বান রাখতে হবে।
দুনিয়ার মজদুর এক হোন!
ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিস্ট কারেন্ট
(International Communist Current)
ইন্টারন্যাশনালিস্ট ভয়েস
(Internationalist Voice)
17.10.2023