তৈরি করেছেন: Communist Inter... তারিখে
"ভয়াবহতা", "গণহত্যা", "সন্ত্রাসবাদ", "সন্ত্রাস", "যুদ্ধাপরাধ", "মানবিক বিপর্যয়", "গণহত্যা"... আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রথম পাতায় ছড়িয়ে পড়া শব্দগুলো গাজায় বর্বরতার মাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু বলে।
৭ ই অক্টোবর হামাস ১,৪০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে। বাড়িতে থাকা অবস্থাতেই তারা বৃদ্ধ পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের হত্যা করে। এই ঘটনার পর থেকে ইসরাইল এর প্রতিশোধ নিতে শুরু করে এবং এখনো ব্যাপকভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় দিন-রাত বোমা বর্ষণের ফলে ইতিমধ্যে ৪,৮০০ শিশুসহ ১০,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জল, বিদ্যুৎ, খাদ্য এবং ওষুধ সহ সবকিছু থেকে বঞ্চিত। ঠিক এই মুহুর্তে, আড়াই মিলিয়ন গাজাবাসী অনাহার এবং মহামারীর আতঙ্কে রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪০০,০০০ গাজা শহরে বন্দী রয়েছে। প্রতিদিন শত শত লোক ক্ষেপণাস্ত্র এবং বুলেটের সম্মুখীন হচ্ছে, তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে নিহত হচ্ছে, এবং ট্যাংক দ্বারা পিষ্ট হচ্ছে।
ইউক্রেনের মতো গাজার সর্বত্রই মৃত্যু। রাশিয়ান সেনাবাহিনী কর্তৃক মারিওপোলের ধ্বংস, মানুষের পলায়ন, কিম্বা ট্রেঞ্চযুদ্ধ যা জ্যান্ত মানুষকে কবর দেয় তা ভুলে যাবেন না। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫ ০০,০০০ মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা উভয় পাশেই প্রায় সমান সমান। রুশ ও ইউক্রেনীয়দের একটি পুরো প্রজন্মকে এখন মাতৃভূমি রক্ষার নামে জাতীয় স্বার্থের বেদীতে উৎসর্গ করা হচ্ছে। এছারাও আরো কিছু ঘটনা ঘটেছে : সেপ্টেম্বরের শেষে, নাগোর্নো-কারাবাখে, আজারবাইজানি সেনাবাহিনী এবং গণহত্যার হুমকির মুখে 100,000 মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ইয়েমেনে যে সংঘাতের কথা কেউ বলে না, তাতে দুই লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ২৩ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। ইথিওপিয়া, মিয়ানমার, হাইতি, সিরিয়া, আফগানিস্তান, মালি, নাইজার, বুরকিনা ফাসো, সোমালিয়া, কঙ্গো, মোজাম্বিকে একই ধরনের যুদ্ধ চলছে। সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যে সংঘাত চলছে।
এই বর্বরতার জন্য কে দায়ী? যুদ্ধ কতদূর যেতে পারে? এবং সর্বোপরি, কোন শক্তি এর বিরোধিতা করতে পারে?
সব দেশই যুদ্ধাপরাধী
এই লেখার সময়, সমস্ত দেশ ইসরায়েলকে তার আক্রমণ "পরিমিত" বা "স্থগিত" করার আহ্বান জানিয়েছে । দেড় বছর আগে ইউক্রেনে একই নৃশংসতার সঙ্গে হামলা চালানো এবং ১৯৯৯ সালে একই 'সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের' নামে চেচনিয়ায় তিন লাখ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে রাশিয়া।একদিকে চিন বলছে, তারা শান্তি চায়, কিন্তু অন্যদিকে তারা উইঘুর জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করছে এবং তাইওয়ানের অধিবাসীদের আরও বেশি দাবানলের হুমকি দিচ্ছে। সৌদি আরব ও তার আরবমিত্ররা একদিকে ইয়েমেনের জনগণকে ধ্বংস করে এবং একই সাথে ইসরায়েলি আক্রমণের অবসান চায়। এদিকে তুরস্ক কুর্দিদের নির্মূল করার স্বপ্ন দেখে কিন্তু গাজায় হামলার বিরোধিতা করে। "ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার"কে সমর্থন করার সাথে সাথে প্রধান গণতান্ত্রিক দেশগুলি, এখন "মানবিক যুদ্ধবিরতি" এবং "আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা"র আহ্বান জানাচ্ছে। বলা বাহুল্য, এই সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশগুলি সেই ১৯১৪ সাল থেকে উল্লেখযোগ্য এবং ধারাবাহিকভাবে গণহত্যায় তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করে চলেছে।
বর্তমানে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রাথমিক যুক্তি: "গাজার ধ্বংস বৈধ", যেভাবে একসময় হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমা এবং ড্রেসডেন এবং হামবুর্গে কার্পেট-বোমা হামলার বিষয়েও যে কথা বলা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ও ইরাকে একই যুক্তি এবং একই পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়েছিল যা আজ ইসরায়েল চালাচ্ছে। সব দেশই যুদ্ধাপরাধী! বড় বা ছোট, আধিপত্যবাদী বা শক্তিশালী, আপাতদৃষ্টিতে যুদ্ধবাজ বা মধ্যপন্থী, তারা সকলেই বাস্তবে বিশ্ব-অঙ্গনে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে এবং তারা সবাই শ্রমিক শ্রেণীকে কামানের খাদ্য হিসাবে বিবেচনা করছে।
এই ভণ্ডামি এবং প্রতারণামূলক কণ্ঠস্বরই এখন আমাদেরকে শান্তির জন্য তাদের অভিযানে সামিল করবে এবং তাদের সমাধানে বিশ্বাস করতে বাধ্য করবে, যেটা হলো, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনকে দুটি স্বাধীন এবং স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া। ফিলিস্তিনি যদি স্বায়ত্বশাসিত রাষ্ট্র হয়, তবু সেই রাষ্ট্রটি কেমন হবে সেটা হামাস এবং ফাতাহ ইতিমধ্যেই তার পূর্বাভাস দিচ্ছে। অন্য সবার মতো এটিও শ্রমিকদের শোষণ করবে; অন্য সকলের মতো, এটি জনগণকে দমন করবে; অন্য সবার মতো এটিও যুদ্ধে যাবে। পৃথিবীতে ইতিমধ্যে 195 টি "স্বাধীন এবং স্বায়ত্তশাসিত" রাষ্ট্র রয়েছে। তারা সম্মিলিতভাবে "প্রতিরক্ষার জন্য বছরে 2,000 বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করে! আর ২০২৪ সালের মধ্যে এইখাতের খরচ বিস্ফোরিত হতে চলেছে।
বর্তমান যুদ্ধ: পৃথিবীকে পুড়িয়ে ফেলার নীতি
তাহলে জাতিসংঘ হঠাৎ কেন ঘোষণা করেছে: "আমাদের অবিলম্বে মানবিক কারণে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। ত্রিশ দিন হয়ে গেছে। যথেষ্ট হয়েছে। এটা এখনই বন্ধ করতে হবে"”। স্পষ্টতই, ফিলিস্তিনের মিত্ররা ইসরায়েলি আক্রমণের অবসান চায়। ইসরায়েলের মিত্রদের কথা বলতে গেলে অর্থাৎ যে "মহান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি" "আন্তর্জাতিক আইন" কে সম্মান করে বলে দাবি করে, তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে কিছু না বলে যা খুশি করতে চায় তা করতে দিতে পারে না। আইডিএফ-এর গণহত্যা দিনের আলোর মতো দৃশ্যমান। গণতান্ত্রিক দেশগুলি ইউক্রেনকে "রাশিয়ান আগ্রাসন" এবং "যুদ্ধাপরাধের" বিরুদ্ধে সামরিক সহায়তা প্রদান করছে এবং এখন তারা মনে করছে দুটি "আগ্রাসনের" বর্বরতা খুব বেশি অনুরূপ হতে দেওয়া উচিত নয়।
কিন্তু এর চেয়েও গভীর কারণ আছে: সবাই বিশৃঙ্খলার সীমা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। কারণ এর ফলে সবাই প্রভাবিত হতে পারে। যদি এই সংঘাত খুব বেশি দূরে ছড়িয়ে পড়ে তবে প্রত্যেকেরই হারানোর কিছু না কিছু আছে। হামাসের হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে একটি মিল রয়েছে: পৃথিবীকে পুড়িয়ে ফেলার নীতি। গতকালের সন্ত্রাসী গণহত্যা এবং আজকের কার্পেট বোমা হামলা কোনও সত্যিকারের এবং স্থায়ী বিজয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে না। এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীলতা ও সংঘাতের যুগে নিমজ্জিত করছে।
ইসরায়েল যদি গাজাকে ধ্বংস করে ধ্বংসস্তূপের নিচে পুঁতে ফেলতে থাকে, তাহলে পশ্চিম তীরেও আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে। হিজবুল্লাহ লেবাননকে যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাবে এবং ইরানও এতে জড়িয়ে পড়বে। পুরো অঞ্চলজুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়া কেবল আমেরিকান প্রভাবের জন্য নয়, চিনের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্যও আঘাত হবে। কারণ চিনের মূল্যবান সিল্করোড এই অঞ্চলের মধ্য দিয়েই গেছে।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি সবার মুখে মুখে। সাংবাদিকরা প্রকাশ্যে টেলিভিশনে এ নিয়ে বিতর্ক করছেন। বাস্তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯১৪-১৮ এবং ১৯৩৯-৪৫ সালের মতো বা স্নায়ুযুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে একে অপরের মুখোমুখি হয়ে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো এবং সুনির্দিষ্ট দুটি ব্লক নেই। যদিও চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের প্রতিযোগিতা ক্রমবর্ধমান নৃশংস এবং নিপীড়নমূলক। অন্য দেশগুলি এই দুটি বৃহৎ গোষ্ঠীর মধ্যে একটি বা অন্যটির আদেশের কাছে মাথা নত করছে না। তারা বিশৃঙ্খলা, অনিশ্চয়তা এবং ডামাডোলের মধ্যে তাদের নিজস্ব খেলা খেলছে। চিনের পরামর্শের বিরুদ্ধে ইউক্রেন আক্রমণ করেছে রাশিয়া। ইসরাইল আমেরিকার পরামর্শের বিরুদ্ধে গাজাকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। এই দুটি সংঘাত সেই বিপদের প্রতীক যা সমগ্র মানবজাতিকে ধ্বংসের হুমকি দেয়। এটি যুদ্ধের বহুগুণ যার একমাত্র লক্ষ্য প্রতিপক্ষকে অস্থির করে তোলা বা ধ্বংস করা। এটি হলো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং ধ্বংসাত্মক বহিষ্কারের একটি অন্তহীন শৃঙ্খল। এখন প্রতিটি মানুষ নিজের জন্য, যে দর্শন আসলে অনিয়ন্ত্রিত বিশৃঙ্খলার সমার্থক ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়ার সর্বহারাদের পিতৃভূমির নামে তাদের জীবন উৎসর্গ করা, পতাকা ও জাতীয় স্বার্থের জন্য অস্ত্র তুলে নেওয়া এবং একে অপরকে হত্যা করতে প্রস্তুত থাকা, যা মোটেও আজকের বাস্তবতা নয়। কিন্তু যেখানে ইতিমধ্যেই এই ধ্বংস প্রক্রিয়া চলছে সেখানে নতুন করে জনগণের আর সামিল হওয়ার প্রয়োজন নেই। ২০০০ এর দশকের গোড়ার দিকে, পৃথিবীর বিস্তৃত অংশ সহিংসতা এবং বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়েছে: আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, লেবানন, ইউক্রেন, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন... এই গ্যাংগ্রিন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে, দেশে দেশে
অঞ্চলে অঞ্চলে। শোষণের এই ক্ষয়িষ্ণু ও পচনশীল ব্যবস্থাই হলো পুঁজিবাদের একমাত্র সম্ভাব্য ভবিষ্যত।
যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হলে পুঁজিবাদকে উৎখাত করতে হবে
সম্ভাব্য শান্তি, "আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়", জাতিসংঘ বা অন্য কোনও চোরের আস্তানা থেকে কোনও সমাধান সম্পর্কে শ্রমিকদের কোনও বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়। পুঁজিবাদ হচ্ছে যুদ্ধ। 1914 সাল থেকে, এটি কার্যত কখনও থামেনি। সর্বদাই বিশ্বের এক অংশ অন্য অংশকে প্রভাবিত করে চলেছে। আমাদের সামনের ঐতিহাসিক সময়কালে এই প্রাণঘাতী গতিশীলতা ক্রমবর্ধমান অপরিমেয় বর্বরতার সাথে ছড়িয়ে পড়বে এবং প্রসারিত হবে।
সুতরাং প্রতিটি দেশের শ্রমিকদের অবশ্যই এই দায়ভার বহন করতে অস্বীকার করতে হবে। তাদের অবশ্যই প্রাচ্যে, মধ্যপ্রাচ্যে এবং সর্বত্র এক বা অন্য বুর্জোয়া শিবিরের পক্ষ নিতে অস্বীকার করতে হবে। তাদের অবশ্যই "আক্রমণের মুখে ইউক্রেনীয় জনগণ", "রাশিয়া হুমকির মুখে", "শহীদ ফিলিস্তিনি জনগণের" সাথে এবং "আতঙ্কিত ইসরায়েলিদের" সাথে "সংহতি" দেখানোর জন্য বলা বাগাড়ম্বর দ্বারা বোকা হতে অস্বীকার করতে হবে। সমস্ত যুদ্ধে, সীমান্তের উভয় পাশের রাষ্ট্র সর্বদা মানুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে, ভাল এবং মন্দের মধ্যে, বর্বরতা এবং সভ্যতার মধ্যে লড়াই রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে, এই সমস্ত যুদ্ধ সবসময় প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিগুলির মধ্যে, প্রতিদ্বন্দ্বী বুর্জোয়াদের মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব। এই সমস্ত দ্বন্দ্বে সবসময় শোষিতরা তাদের শোষকদের সুবিধার জন্য মারা যায়।
শ্রমিকদের সংহতি তাই "ফিলিস্তিনিদের" প্রতি নয়, একইভাবে এটি "ইস্রায়েলি", "ইউক্রেনীয়" বা "রাশিয়ানদের" প্রতিও নয়, কারণ এই সমস্ত জাতীয়তার মধ্যে শোষক এবং শোষিত নামে দুটি পৃথক স্বার্থের শ্রেণি রয়েছে। শ্রমিকদের সংহতি ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, রাশিয়া, ইউক্রেনের শ্রমিক এবং বেকারদের প্রতি, ঠিক একইভাবে শ্রমিকদের সংহতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের প্রতিও। "শান্তির জন্য" মিছিল করে নয়, যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত কোন এক পক্ষের প্রতি সহমর্মিতা নয়। আসলে উভয়পক্ষের সাধারণ মানুষ, সৈন্য, উর্দিধারী সর্বহারা, এবং প্ররোচিত ধর্মান্ধ শিশুসৈন্য সকলেই কামানের খাবার।
সর্বহারার একমাত্র সংহতি হল সমস্ত পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের নিন্দা করা। যে সমস্ত দল আমাদের বিভিন্ন জাতীয় পতাকা, যুদ্ধের নানাবিধ কারণের পিছনে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানায় কিম্বা যারা শান্তি এবং মানুষের মধ্যে "সুসম্পর্কের" বিভ্রম দিয়ে আমাদের প্রতারিত করে তাদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখান করা।
শ্রমিক সংহতির অর্থ সর্বোপরি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইকে বিকশিত করা যা সমস্ত যুদ্ধের জন্য দায়ী। শ্রমিক শ্রেণির লড়াই জাতীয় বুর্জোয়া এবং তাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
ইতিহাস দেখিয়েছে যে শষিতশ্রেণি হলো একমাত্র শক্তি যে পুঁজিবাদী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে। সর্বহারা শ্রেণী হলো বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রত্যক্ষ শত্রু। ১৯১৭ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার শ্রমিকরা বুর্জোয়া রাষ্ট্রকে উৎখাত করে এবং ১৯১৮ সালের নভেম্বরে জার্মানির শ্রমিক ও সৈন্যরা বিদ্রোহ করে। সর্বহারা শ্রেণীর সংগ্রামের এই মহান আন্দোলনগুলি সরকারকে যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিল। বিপ্লবী সর্বহারাশ্রেণীর শক্তিই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটায়। শ্রমিক শ্রেণীকে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদকে উৎখাত করে সর্বত্র প্রকৃত ও সুনির্দিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এক দীর্ঘ পথ আমাদের সামনে। একটি অপ্রতিরোধ্য সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত একটি ব্যবস্থা যা আমাদের উপর ক্রমবর্ধমান কঠোর অর্থনৈতিক আক্রমণ নামিয়ে এনেছে তার বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণিকে তার নিজস্ব শ্রেণিগন্ডীর মধ্যেই সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। আমাদের জীবনযাত্রা ও কর্মপরিবেশের অবনতিকে প্রত্যাখ্যান করে, বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখার নামে, জাতীয় অর্থনীতির প্রতিযোগিতা বা যুদ্ধপ্রচেষ্টার নামে করা চিরন্তন ত্যাগকে প্রত্যাখ্যান করে আমরা পুঁজিবাদের কেন্দ্রভূমিতে দাঁড়িয়ে মানুষের দ্বারা মানুষের শোষনকে অস্বীকার করতে শুরু করেছি।
এইসব সংগ্রামে, আমরা যখন ঐকবদ্ধ এবং সংগঠিত হই, আমরা একসাথে দাঁড়াই, আমরা আমাদের সংহতি গড়ে তুলি, আমরা বিতর্ক করি এবং তখন আমাদের শক্তি সম্পর্কে সচেতন হই । শ্রেণিসংগ্রামে সর্বহারা শ্রেণি তার মধ্যে এমন একটি বিশ্বে সম্ভাবনা বহন করে যা পুঁজিবাদের ঠিক বিপরীত। একদিকে অর্থনৈতিক ও যুদ্ধের মতো প্রতিযোগিতায় নিয়োজিত জাতিসমূহ বিভাজিত এবং ধ্বংসের পর্যায়ে; অন্যদিকে, বিশ্বের সমস্ত শোষিতদের একটি সম্ভাব্য ঐক্য। সর্বহারা শ্রেণী এই দীর্ঘ পথে হাঁটতে শুরু করেছে। তার মধ্যে ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে "অসন্তোষের গ্রীষ্ম" , ২০২৩ সালের গোড়ার দিকে ফ্রান্সে পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও অটোমোবাইল খাতে ঐতিহাসিক ধর্মঘট হলো কতগুলি গুরুত্ত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই আন্তর্জাতিক গতিশীলতা শ্রমিকদের লড়াইয়ের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে চিহ্নিত করে, সেইসাথে জীবনযাত্রা ও কাজের অবস্থার স্থায়ী অবনতি মেনে নিতে অস্বীকার করা এবং সংগ্রামে শ্রমিক হিসাবে বিভিন্ন সেক্টর এবং প্রজন্মের মধ্যে সংহতি প্রদর্শনের প্রবণতাকে চিহ্নিত করে। ভবিষ্যতে আন্দোলনকে অর্থনৈতিক সংকট ও যুদ্ধের মধ্যে যোগসূত্র চিনতে হবে,এছাড়াও রাষ্ট্রের দাবি করা ত্যাগের সাথে অস্ত্র বাজেট ও নীতির বিকাশের মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করতে হবে। অচল বিশ্ব পুঁজিবাদ যে সব অর্থনৈতিকসংকট, যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের মতো আন্তঃসম্পর্কযুক্ত এবং পারস্পরিক পুষ্টিপ্রদানকারী অভিশাপগুলিকে বয়ে আনছে সেগুলিকে চিনতে হবে।
জাতীয়তাবাদের স্বপক্ষে, আমাদের শোষকরা যে সব যুদ্ধে আমাদের টেনে আনতে চায়, সেক্ষেত্রে ১৮৪৮ সালের কমিউনিস্ট ইশতেহারে প্রকাশিত শ্রমিক আন্দোলনের পুরোনো প্রহরীশব্দগুলো আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক:
শ্রমিকদের কোনো স্বদেশ নেই!
দুনিয়ার মজদুর এক হোক!
আন্তর্জাতিক সর্বহারা শ্রেণির শ্রেণিসংগ্রামের বিকাশের জন্য!
আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট কারেন্ট, ৭ নভেম্বর ২০২৩